গরমে পানি ও খাবারে সাবধান by মাহবুবুল হক ভূঁইয়া

গরমে বাড়ছে অস্বস্তি। দেখা দিচ্ছে নানা শারীরিক সমস্যা। এর মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ অন্যতম। গরমের সময় খাবার অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে খুব সহজেই জীবাণুযুক্ত হয়। এতে মানুষের নানা রকম পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। কাজেই এ সময় খাওয়া-দাওয়া ও জীবনযাপনে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তবেই গরমজনিত বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
শিশুকে স্যালাইন খাওয়াচ্ছেন তার মা। ছবিটি বৃহস্পতিবার রাজধানীর আইসিডিডিআরবি থেকে তোলা। ছবি: মনিরুল আলম
রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী বেশি আসছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। সতর্ক থাকলে এ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মেয়েকে চাঙা রাখার চেষ্টা করছেন মা। ছবি: মনিরুল আলম
গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিডিডিআরবির উদরাময় ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৭৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গরম বাড়ার পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ জন রোগী এখানে ভর্তি হচ্ছেন। অন্যান্য সময় ২৫০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হন। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে রোগীর সংখ্যা আরও বেশি ছিল। ওই সময় গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। কেবল রাজধানীর রোগীরা যে এখানে ভর্তি হচ্ছে, তা এমন নয়। ঢাকার আশপাশের এলাকা, যেমন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকেও প্রচুর রোগী আসে।
ডায়রিয়ায় কাহিল এক ব্যক্তি। ছবি: মনিরুল আলম
রোগীকে স্যালাইন খাওয়াচ্ছেন আপনজন।
গরমে কেন বেশি আক্রান্ত হয়: আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা এ এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত মে-জুন মাসে মৌসুমি বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার আগে এবং সেপ্টেম্বর-নভেম্বর সময়ে মৌসুমি বৃষ্টিপাত শেষ হওয়ার সময় মানুষ ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। তিনি বলেন, গরমে মানুষের তৃষ্ণা বেশি পায়। এ জন্য পানিও বেশি পান করে। তৃষ্ণার্ত অনেকে পানি পানের সময় বিশুদ্ধতা নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। এতে জীবাণুযুক্ত পানি পানের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আর মূলত পানির মাধ্যমেই কলেরা জীবাণু ও খোঁটা ভাইরাস ছড়ায় বলে এ সময় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
এ সময়ে আরেকটি সমস্যা হলো, গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয় বা টকে যায়। এমন খাবার খেয়ে ফেললে সেখান থেকেও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকে সমস্যার বিষয়টি আমল না দিয়ে টকে যাওয়া খাবার খায়। দুস্থ ও নিম্নবিত্ত মানুষ বেশির ভাগ সময় নিরুপায় হয়ে এসব খাবার খেতে বাধ্য হয়।
আইসিডিডিআরবিতে গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত ২৬১ জন রোগী ভর্তি হয়। ছবি: মনিরুল আলম
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়: এ সময় ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে পানি নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা। শুধু খাওয়ার পানিই নয়, খাবার তৈরিতে ব্যবহার্য লক্ষ্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
রফিকুল ইসলাম গুরুত্ব দিলেন খাওয়ার আগে ও বাথরুম থেকে বের হয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সাধারণ নীতির ওপর। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডায়রিয়া হলে করণীয়: ডায়রিয়া হলে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে। তা হতে হবে নিয়মিত। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেকে নিয়ম মেনে স্যালাইন খান না। এতে হিতে বিপরীত হয়। যেমন এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানোর নিয়ম থাকলেও অনেকে কম বা বেশি পরিমাণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেন।’ তিনি বলেন, ওরস্যালাইন ওষুধ। একে ওষুধের মতোই পরিমিত পরিমাণে সময় মেনে খাওয়াতে হবে। লম্বা সময় ধরে পাতলা পায়খানা বন্ধ না হলে দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.