মৌলবাদবিরোধী অবস্থানে সুফল পাচ্ছে তরুণেরা: সিতারাম ইয়েচুরি

বাংলাদেশ সরকারের মৌলবাদবিরোধী অবস্থানের কারণে তরুণেরা সুফল পাচ্ছে। তরুণদেরও এখন এগিয়ে আসা দরকার। তাদের উচিত মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নেওয়া, দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।
আজ শুক্রবার ঢাকায় এক সেমিনারে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্যসভার সদস্য সিতারাম ইয়েচুরি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম’ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অমল সেনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের কমিউনিস্ট নেতারা অংশ নেন।
সেমিনারে মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে অত্যন্ত বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে সিতারাম ইয়েচুরি বলেন, এরা আলাদা কিছু নয়। সাম্রাজ্যবাদের কাজ হলো মৌলবাদের প্রসার ঘটানো। এরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একেকটি দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যায়। এরা মুক্তচিন্তা, স্বাধীনসত্ত্বা ও প্রগতিশীলদের নিশ্চিহ্ন করতে বিশ্বব্যাপী কাজ করে। এ ক্ষেত্রে তিনি পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের প্রত্যক্ষ মদদে এসব দেশে মৌলবাদের উত্থান হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ কখনো সেনাবাহিনী দিয়ে দেশ দখল করছে, আবার কখনো মৌলবাদের উত্থান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশকে তাদের কবজায় নিচ্ছে। কখনো অস্ত্র, কখনো অর্থ দিয়ে এরা মৌলবাদীদের সহায়তা করছে।
ভারতের এই বাম নেতা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতে মৌলবাদ এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। তাই সরকারের উচিত মানুষের কল্যাণ হবে—এমন নীতি নেওয়া। যদিও সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির কারণে তা অনেক সময় হয়ে ওঠে না। কিন্তু সুযোগ দিলে জনগণের বিরুদ্ধ শক্তি তথা মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করেন সিতারাম ইয়েচুরি। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হলে তাঁর দল খুশি হবে বলেও জানান তিনি।
সেমিনারে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ কাজী বক্তব্য দেন। উপমহাদেশে আইএসআইএসের ভয়ংকর উত্থান রুখতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এমদাদ কাজী বলেন, বাংলাদেশ মৌলবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই অঞ্চলে মৌলবাদের বিস্তার রুখতে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, মৌলবাদীরা নানা আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। তবে সরকার এদের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিচ্ছে না।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১১৯টি মৌলবাদী সংগঠন রয়েছে। এগুলো মূলত মওদুদী ভাবাদর্শী, কওমী মাদ্রাসা ও তালেবানকেন্দ্রিক। এর মধ্যে মওদুদী ভাবাদর্শীরা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণে, কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক সংগঠনগুলো ইসলামী ঐক্যজোটের নিয়ন্ত্রণে এবং তালেবান ভাবাদর্শের সংগঠনগুলো পরিচালিত হয় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে।
সেমিনারে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস সুধাকর রেড্ডি, অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লকের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল রায়, শ্রীলঙ্কার জেভিপির আন্তর্জাতিক বিভাগের সদস্য নালিন্দা জয়াতিসা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.