দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান ব্লাটারের

দুর্নীতির অভিযোগে ফিফার সাত শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় টালমাটাল ফুটবলবিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে দুই যুগ ধরে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। ফিফার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে ১৫ কোটি ডলারেরও বেশি ঘুষ নিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। ফিফার এই ঘুষ, দুর্নীতি ও বহুমাত্রিক কেলেংকারি ফুটবলের গণ্ডি ছড়িয়ে ছুঁয়ে গেছে গোটা বিশ্বকে। লেগে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে। এমনকি জাতিসংঘও বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে। এর মধ্যেই কাল জুরিখে ফিফার সদর দফতরে সভাপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় জুরিখসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক নাটকই মঞ্চায়িত হয়েছে।
ফিফা কংগ্রেসে হামলা
শুক্রবার সভাপতি সেপ ব্লাটারের উদ্বোধনী ভাষণের ঠিক আগে আচমকা ফিফা কংগ্রেসে হামলা চালায় ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষুব্ধ জনতা। ফিফার প্রতিনিধিদের লাল কার্ড দেখিয়ে তারা স্লোগান দিতে থাকে- ‘ফুটবলকে মুক্ত করো, ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো।’ বিক্ষোভকারীরা ব্যক্তিগতভাবে কাউকে লাঞ্ছিত না করলেও এ ঘটনায় হতভম্ব সেপ ব্লাটার দ্রুত নিরাপত্তারক্ষীদের ডেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন। এর আগে ফিফা থেকে ইসরাইলকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছিল ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশন।
ব্লাটারের আহ্বান
দুর্নীতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই ব্লাটারের পদত্যাগ ও সভাপতি পদে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করেছিলেন। কিন্তু ব্লাটার নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এখনও দুর্নীতিতে ব্লাটারের সম্পৃক্ততার কোনো খবর পাওয়া না গেলেও সংস্থার প্রধান হিসেবে দায় এড়াতে পারেন না তিনি। মজার ব্যাপার হল, যার বিরুদ্ধে সবার অভিযোগ, সেই ব্লাটারই কাল সবাইকে একজোট হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানালেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করে ব্লাটার বলেছেন, ‘ফিফার সম্মান ও ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে প্রয়োজন দলীয় চেতনা। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ফিফাকে কক্ষপথে ফেরাতে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। যে বা যারাই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত, প্রত্যেককে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া হবে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করে যাব।’ এর আগে আরও খারাপ খবরের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন ব্লাটার।
শুদ্ধি অভিযান
দুর্নীতির অভিযোগে বুধবার সুইস পুলিশের হাতে আটক হওয়া অধিকাংশ ফিফা কর্মকর্তাই উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার। টিভি স্বত্ব, বিপণন, বাণিজ্যিক অংশীদার, টুর্নামেন্ট বরাদ্দসহ আরও যেসব খাতে দুর্নীতি হয়েছে তার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক ব্যবসায়ীও জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কাল শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র। কনকাকাফ থেকে অভিযুক্ত সবাইকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের দেয়া ১৪ দুর্নীতিবাজের তালিকায় থাকা তিন আর্জেন্টাইন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন আর্জেন্টিনার একজন বিচারক। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি হোসে মারিয়া মারিনসহ অভিযুক্ত বাকিদের বিরুদ্ধে আলাদা করে তদন্ত শুরু করেছে ব্রাজিলের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়।
২০১৮ বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে!
২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হতে রাশিয়া ও কাতার কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে কিনা, সেটা তদন্ত করছে সুইস পুলিশ। ফিফার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপ রাশিয়া আর কাতারেই হবে।’ কিন্তু দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে শেষ মুহূর্তে অন্য কোনো দেশে বিশ্বকাপ সরিয়ে ফেলা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ২০১৮ বিশ্বকাপ আয়োজনে নাকি প্রস্তুত আছে ইংল্যান্ড। ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.