চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম ব্যাচের সম্মিলন- শাটল ট্রেনের সেই ফেলে আসা দিনে... by সুজয় মহাজন

পুরোনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে আনন্দ–আড্ডায় মেতে ওঠেন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
পড়ন্ত বিকেল। ষোলশহর রেলস্টেশনে গিটারের টুংটাং আওয়াজ। এলোমেলো ঘোরাফেরা করা লোকজনও থমকে দাঁড়াচ্ছে। এমন খোলা জায়গায় গানের আয়োজন। মূল মঞ্চের পাশেই ব্যানার—‘ফেলা আসা অপেক্ষার শাটল ট্রেন’। এমন অনুষ্ঠান স্টেশনেই তো হবে! বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের কতই না মধুর স্মৃতি শাটল ট্রেন ঘিরে। তাই গানের পাশাপাশি আড্ডাই হয়ে উঠেছিল মূল উপলক্ষ। শাটল ট্রেনের ছোট ছোট স্মৃতির রোমন্থন—হই–হুল্লোড়, গলা ছেড়ে গান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম ব্যাচের (সেশন ১৯৯৯-২০০০) শিক্ষার্থীদের সম্মিলন এমনই রূপ নেয়। গত শুক্রবার বিকেলে নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন চত্বরেই বসেছিল ফেলে আসা দিনকে খুঁজে ফেরার আয়োজন। গানে, আড্ডায়, কথার খুনসুটিতে অন্য রকম বিকেল।
দুপুরের পর নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে একজন–দুইজন করে আসতে থাকেন ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বড় আয়োজনে এটিই এ ব্যাচের প্রথম সম্মিলন। ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিকতা। কিছু সময়ের জন্য কেবলই একসঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রচেষ্টা। যেখানে ফেলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের দিনগুলোর স্মৃতিকে সজীব করে তোলা যায়।
এ জন্য স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ষোলশহর রেলস্টেশনকে। এ স্টেশন ও শাটল ট্রেনকে ঘিরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মিলনমেলা বসত। সেই পরিবেশ, সেই আবহ ফিরে পাওয়ার চেষ্টাই ছিল পুরো আয়োজনে। রঙিন দিনগুলো ফিরে পেতে কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা একা। কেউ এসেছেন গিটার হাতে বন্ধুদের গান শোনাতে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বেড়েছে জমায়েত। বহুদিন পর পুরোনো বন্ধুকে ফিরে পেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ভেসেছেন আবেগের বন্যায়। কণ্ঠে সেই গান ‘বন্ধু কী খবর বল/ কত দিন দেখা হয়নি...’। কুশল বিনিময় ও পারস্পরিক খোঁজখবর নিয়েই কেটেছে দীর্ঘসময়। এরপর সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণামূলক বক্তৃতা ও গানের আয়োজন। পুরো এ আয়োজনে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন ৩৫তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আতিক আহমেদ। যাঁর হওয়ার কথা ছিল ইতিহাসবিদ। কিন্তু অতি মেধার তাড়া খেয়ে তিনি হয়েছেন দেশের শীর্ষ একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিবিদ। এ প্রযুক্তিবিদের সঙ্গে আয়োজনে নিরন্তর সহযোগী ছিলেন হিসাববিজ্ঞানের আনিস ও জাহিদ, ইংরেজির মাহফুজ ও মাহমুদা বেগম। ইংরেজি সাহিত্যের মাসুদুল হক শেক্সপিয়ার ভুলে এখন ঝড় তোলেন গিটারের তারে। গড়ে তুলেছেন ‘খুঁটি’ নামের একটি ব্যান্ডদল। মাসুদুলের পরিবেশনার পাশাপাশি ওই দিন গানে গানে সহপাঠীদের মাতিয়ে রাখেন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোজাম্মেল হক, ইতিহাসের শান্ত ও অর্থনীতির ইসমাইল। রাজধানী ঢাকার বুকে বসে ফোনে আর অনলাইনে এ মিলনে শরিক হয়েছিল আরও অনেকে। এভাবে কেটে যায় পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে রাত নামে। সাঙ্গ হয় মিলনমেলা। কিন্তু অর্থনীতি বিভাগের রাজীব বিশ্বাস, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জয়িতা মজুমদার, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিল্পীর উচ্ছ্বাস যেন থামে না। এভাবে প্রায় অর্ধযুগেরও বেশি সময় পর একত্রিত হওয়া বন্ধুদের কথা কী আর কয়েক ঘণ্টায় ফুরোয়? তাই ফেরার আগে সবার এক দাবি- এমন সম্মিলন নিয়মিত আয়োজনের। সেলক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা পন্থায় শুরু হয়েছে ব্যাচের সব শিক্ষার্থীকে একত্রিত করার প্রক্রিয়া। ফেসবুকে খোলা হয়েছে ব্যাচ ৩৫ নামের একটি গ্রুপ, চলছে তথ্যভান্ডার তৈরির কাজ।

No comments

Powered by Blogger.