‘মানবপাচার করে গণহত্যা একুশ শতকের ভয়াবহতম অপরাধ’

জাতীয় প্রেসক্লাবে মানব পাচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এতে পাচারের শিকার বাংলাদেশিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং
পাচারকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়। ছবি: প্রথম আলো
মানব পাচারের প্রতিবাদে আজ রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের
সামনে ১৯টি বেসরকারি সংস্থা মানববন্ধন করে। ছবি: প্রথম আলো
সমুদ্রপথে মানবপাচার এবং পাচারের শিকার মানুষদের গণহারে হত্যা করাকে একবিংশ শতাব্দীর ভয়াবহতম অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে দেশের ১৯টি বেসরকারি সংস্থার নেতারা। তাঁরা পাচারের শিকার বাংলাদেশিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং পাচারকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তিরও দাবি জানান। আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। পাচারের শিকার দুই ব্যক্তি এবং আরও দুজনের স্বজনও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ওয়াজেদ আলী খান বলেন, পাচারের শিকার লোকজনকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করতে হবে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অভিবাসনবিষয়ক বেসরকারি সংস্থাগুলোর জোট কারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হারুন আল রশিদ বলেন, ‘এই আধুনিক যুগে এভাবে মানবপাচার এবং হত্যা ভয়াবহতম অপরাধ। সারা বিশ্ব আজ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। থাইল্যান্ড পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করছে। যারা পালিয়ে আছে তাদের বলেছে আত্মসমর্পণ করতে, নয়তো তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ পাচারকারীদের বেশির ভাগকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আর প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বললেন পাচারের শিকার লোকজনেরও বিচার হবে, সেটিও মানবিক নয়। কারণ সমুদ্রপথে যাঁরা পাচারের শিকার তাঁদের প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা অপহরণ করা হয়েছে।’
বেসরকারি সংস্থা ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, ‘একসময় সরকার বিদেশে গিয়ে এক-দুই বিলিয়ন ঋণ চাইত। কিন্তু আজ প্রবাসীরা প্রতি মাসেই বিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছে। কিন্তু তাঁদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে পাচারের শিকার ধীরাজ কুমার বিশ্বাস ও আবদুর রহমান ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, চোখের সামনে মানুষকে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। আর যাঁরা বেঁচে তীরে পৌঁছে তাঁরাও বেঁচে থাকে নিষ্ঠুর যন্ত্রণায়।
বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান লিলি জাহান বলেন, ‘আমাদের সবার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অওয়াজ তোলা উচিত। আর এ ক্ষেত্রে যাঁদের ব্যর্থতা আছে তাঁদেরও জবাবদিহি করতে হবে।’
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, হাজার হাজার মানুষকে যখন সাগরপথ দিয়ে নেওয়া হচ্ছিল তখন দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোথায় ছিল?
সংবাদ সম্মেলনের আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ‘সাগরে ভাসছে মানবতা’, ‘মানবপাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, ‘মানবপাচার করে যারা, সমাজের শত্রু তারা’ প্রভৃতি লেখা স্লোগান প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, বমসা, বিসিডব্লিউএস, বিলস, বিএলএফ, বিজিআইডব্লিউএফ, বোয়েফ, বিগফ, বিডব্লিউডব্লিউআইসি, আহছানিয়া মিশন, ইনাফি বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, ওকাপ, সলিডারিটি সেন্টার, ওয়্যারবি ও রামরু যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

No comments

Powered by Blogger.