‘ইকো ফিশ’ প্রকল্প- ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন

মৎস্য অধিদপ্তরের নেওয়া ‘ইকো ফিশ’ নামের প্রকল্পটি সুবিবেচনাপ্রসূত, দূরদর্শী ও আশাব্যঞ্জক। তবে আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা হলো, অনেক ভালো উদ্যোগ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয় না। সুষ্ঠু বাস্তবায়নের অভাবে সরকারের অনেক ভালো প্রকল্প স্রেফ অর্থ অপচয়ের কারণ ঘটায়—এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। ‘ইকো ফিশ’ প্রকল্পের পরিণতি যেন সে রকম না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই প্রথম কাজ।
প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে দেশের উপকূলীয় আটটি জেলার নদনদীতে ইলিশ মাছের প্রজনন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ইলিশের বংশবিস্তার ও প্রজননকাল নির্ধারণসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের নানা দিক নিয়ে গবেষণা করা হবে। একই সঙ্গে জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ব্যয় করা হবে ৯০ কোটি টাকা, যা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)। এই অর্থ যেন সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়, যেন কেউ নয়ছয় করার সুযোগ না পায়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ইলিশের পোনা ও অন্যান্য মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। বছরের আট মাস দীর্ঘ সময়; এটা যুক্তিপূর্ণ কি না, সে ব্যাপারে এ পর্যন্ত গবেষণা হয়নি। গবেষণা করে দেখা উচিত এই সময় কমানোর সুযোগ রয়েছে কি না।
নিষেধাজ্ঞার এই দীর্ঘ সময়জুড়ে দরিদ্র জেলেদের আয়-রোজগারের কী ব্যবস্থা হবে, তা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। দারিদ্র্যের কারণেই জেলেরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাটকা ধরেন; এটা বন্ধ করতে হলে তাঁদের জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে, শুধু চার মাস প্রতি জেলে পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া যথেষ্ট নয়। জেলেদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ-সহায়তার খবর নিঃসন্দেহে ভালো প্রস্তাব। তবে জেলেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে আরও কিছু করণীয় রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমরা এই প্রকল্পের সাফল্য কামনা করি।
ইলিশ রক্ষায় উপকূলে নতুন প্রকল্প ‘ইকো ফিশ’ by এম জসীম উদ্দীন
আপডেট: মে ২৬, ২০১৫ # উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের আট জেলায় ‘ইকো ফিশ’ নামে এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর আওতায় দেশে প্রথমবারের মতো ইলিশের বংশবিস্তার ও প্রজননকাল নির্ধারণসহ নানা দিক নিয়ে গবেষণা করা হবে। পাশাপাশি জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট আটটি জেলা হলো বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর। মোট ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ১ মার্চ। এতে মৎস্য অধিদপ্তরকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড ফিশ’। সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় এলাকায় মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে নানামুখী কাজ করছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গবেষক ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরএকদল বিশেষজ্ঞ ২১ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেবেন।
সংশ্লিষ্ট জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তদারকিতে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে। প্রতিটি জেলায় ওয়ার্ল্ড ফিশের একজন বিজ্ঞানী ও তিনজন সহযোগী বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে একটি দল প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন। ইতিমধ্যে আট জেলায় জেলেদের জরিপকাজ শুরু হয়েছে। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বঙ্কিম চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ইকো ফিশ প্রকল্পের আওতায় জেলে অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রাম ভাগ করে সেগুলোতে জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হতে আরও কয়েক মাস  লাগবে।
ওয়ার্ল্ড ফিশের গবেষকেরা জানান, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ইলিশের বংশবিস্তার ও প্রজনন সময়কাল নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো গবেষণা হয়নি। এই প্রকল্পের আওতায় ইলিশের জীবনপ্রণালি ও অন্য বিষয় নিয়ে বড় ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার রোধে কী কী করণীয়, তা-ও চিহ্নিত করা হবে। কারণ উপকূলে চিংড়ি ও অন্য মাছ ধরার জন্য যেসব ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহৃত হয়, তাতে ইলিশের পাশাপাশি অন্য মাছ, শুশুক, বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রকল্প উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে ইলিশের পাশাপাশি অন্য জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকাসহ অন্য ছোট মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই সময়ে সরকার চার মাস পর পর জেলেদের প্রতি পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি চাল সহায়তা দেয়। কিন্তু অর্ধেকেরও কম জেলে এই সহায়তা পান। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সহায়তা পাওয়া জেলেরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটান। এসব বিবেচনায় নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে সংশিষ্ট জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দেবে।
প্রকল্পসংশিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, জেলে ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ২৫ সদস্যের দল গঠন করে তাঁদের ক্ষুদ্র পেশার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। খাঁচায় মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি-গবাদি পশু পালন, সবজি চাষ, কুটিরশিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকবে প্রকল্পের আওতায়।
‘ইকো ফিশ’ প্রকল্পের কেন্দ্রীয় দলনেতা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবদুল ওহাব গত রোববার বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় উপকূলের ইলিশ মাছ অতিমাত্রায় আহরণ থেকে রক্ষা পাবে এবং বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। ইলিশ মাছের পাশাপাশি অন্য মাছ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। পাশাপাশি জেলেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

No comments

Powered by Blogger.