অভিমান করে চলে গেলেন আমাদের নির্মলদা by শাহজাহান মিয়া

বুকভরা অব্যক্ত ব্যথা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশের মহানন্দিত সাংবাদিক নির্মল সেন। আমাদের পরমপ্রিয় বিশাল সাংবাদিক নেতা নির্মলদা।
আনেক দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ এই বরেণ্য সাংবাদিকের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে গত ২২ ডিসেম্বর তাঁকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা এনে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করে আইসিইউতে রাখা হয়। দুই দিন পর অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে তাঁকে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সে অবস্থায়ই তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁর মহাপ্রয়াণ অবসান ঘটাল এক মহাপ্রাণের। একজন মহান সাংবাদিকের। এ দেশে বাম রাজনীতির অন্যতম প্রধান এক সাচ্চা রাজনীতিকের। কৃষক-শ্রমিক ও সাংবাদিকদের একজন বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে তাদের দাবি আদায়ের প্রশ্নে তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত হতো বুলন্দ আওয়াজ। সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কলম কথা বলত আপসহীন ভাষায়। সে কলম ও কণ্ঠ দুটিই স্তব্ধ হয়ে গেল। ২০০৩ সালের ১১ অক্টোবর স্ট্রোকে অক্রান্ত হয়ে তিনি চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন। হুইল চেয়ারই ছিল এই পথিকৃৎ সাংবাদিকের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন। অসুস্থ হওয়ার পর মোটামুটি কথা বলতে পারলেও প্রায় বছরখানেক ধরে কথাও ঠিকমতো বলতে পারতেন না। তারপরও সাহসী এই সাংবাদিক তাঁর লেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অস্ফুটস্বরে তিনি বললে তাঁর সঙ্গে থাকা স্বজনরা তা লিখতেন। ঢাকায় থাকলে তাঁর সাংবাদিক নাতি সমীরণ এই কাজটি করত। আর গ্রামের বাড়ি অবস্থান করার সময় তাঁর ভাতিজা সাংবাদিক কংকন এ দায়িত্বটি পালন করত। কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নির্মলদা তাঁর লেখার কাজটিও আর কাউকে দিয়ে করাতে পারেননি। তাই মৃত্যুর আগে তাঁর লেখাও পত্রিকার পাতায় পাঠক আর দেখতেন না। চিরকুমার এই সাংবাদিককে ঢাকায় সমীরণ ও গ্রামের বাড়িতে কংকনই দেখাশোনা করত। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর জীবন কেটেছে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে। চিরকুমার ছিলেন বলে তাঁর অবস্থা ছিল আরো করুণ। জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি তাঁর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দীঘিরপার গ্রামেই কাটিয়েছেন। এক সময়ের কর্মপাগল ও প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এই ব্যক্তি বুকভরা অব্যক্ত বেদনা নিয়ে এক নিভৃত পল্লীকোণে কোনো মতে নীরবে-নিঃশব্দে দিন কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট যে দীঘিরপার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পাখির কলকাকলিতে মুখরিত সেই ছায়াসুনিবিড় পল্লীর বাড়িটিই চিরকুমার নির্মল সেনের শান্তির নীড় ও শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইচ্ছে হলে মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসতেন। গত একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ঢাকায় এসেছিলেন। আশা ছিল আগামী একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসবেন। এর আগেই তিনি চলে গেলেন। এই দিকপাল সাংবাদিকের মৃত্যুতে সাংবাদিক মহল এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁকে শেষবারের মতো দেখার জন্য সাংবাদিক, রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ অনেকে ছুটে যান হাসপাতালে।
দেশে প্রতিবছর নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য ভাষাসৈনিক, কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী এবং সামাজিক ব্যক্তিত্বসহ অনেককে একুশে পদক প্রদান করা হয়ে থাকে। ১৯৭৬ সাল থেকে পদকটি দেওয়া শুরু হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গত ৩৭ বছরে মোট ৩৬১ ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সরকারের আমলে ৪৯ জন সাংবাদিকও একুশে পদক পেয়েছেন; কিন্তু আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে কিংবদন্তি সাংবাদিক নির্মল সেনের কপালে একুশে পদকটি জোটেনি। এটা একটা নিদারুণ লজ্জার বিষয়ই বটে। এ লজ্জা কার! অবশ্যই আমাদের সবার। রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদক প্রদানের ওপর গত ১৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে আমি বিশদভাবে লিখেছিলাম। আমার ওই লেখাটিতেও নির্মলদার মতো একজন বড় মাপের সাংবাদিককে অবশ্যই ২০১৩ সালে একুশে পদক প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তাঁর মতো সাংবাদিকের একুশে পদক না পাওয়ার অব্যক্ত বেদনা নিশ্চয়ই তাঁর হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। ঘটনাটি মর্মান্তিক শোনালেও সত্যি যে, ক্ষোভে-দুঃখে, নিদারুণ অভিমানে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের কাছে রেখে গেছেন একটি লিখিত নির্দেশ। ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সূত্রে জানতে পেরেছি, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে কোনো পদক প্রদান করা হলে তা যেন তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ গ্রহণ না করে- এ মর্মে নিজে লিখতে পারেন না বলে এ রকম একটি বক্তব্য নিকটাত্মীয় একজনকে দিয়ে লিখিয়ে তিনি কোনোমতে স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন। তবে একটি কথা জোর দিয়ে বলতে পারি যে আল্লাহ গাফুরুর রাহিম বঙ্গবন্ধুকে আর কয়েকটি বছর বাঁচিয়ে রাখলে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিশাল হৃদয়ের অধিকারী এই সুমহান রাষ্ট্রনায়কের হাতেই নির্মল সেনের গলায় একুশে পদক উঠত। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির। পাকিস্তানি মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ সামরিক বাহিনীর কতিপয় সদস্যের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু প্রাণ হারান। ঘৃণ্য ঘাতকরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও হত্যা করে। ওই কালরাতে বিদেশে অবস্থান করায় দৈবক্রমে দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। আল্লাহর অশেষ রহমতে শেখ হাসিনা আজ দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর গড়া এই বাংলাদেশে রাজনৈতিক মহানুভবতা ও উদারতায় তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে পিতার মতো উদারতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই সবার প্রত্যাশা শেখ হাসিনাও পিতার উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গিয়ে নির্মলদাকে ২০১৩ সালের একুশে পদক প্রদান করবেন। সবাই আশা করে পদক প্রদানের ঘোষণা হলে নির্মলদার পরিবার অবশ্যই এ পদক আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করবে।
নির্মল সেনের আলোকোজ্জ্বল কর্মময় জীবনের দুটি প্রধান সত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। একটি রাজনীতিক সত্তা এবং অপরটি সাংবাদিক সত্তা। ত্যাগ-তিতিক্ষায় ভরপুর জীবন ও মানুষের মঙ্গলে নিয়োজিত একজন রাজনীতিক হিসেবে জাতির জীবনে তাঁর অবদান অবশ্যই খাটো করে দেখার মতো নয়। তবে সাংবাদিক নির্মল সেনকেই মানুষ আরো অনেক বড় করে দেখে তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর ক্ষমতার জন্য। কঠিন কথাটি সহজ করে বলার জন্য। সাধারণ মানুষের দুঃখ-বেদনা, শোষণ-বঞ্চনা, অন্যায়-অনাচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সারা জীবন অবিরাম কলম চালিয়েছেন তিনি। ঘৃণ্য ঔপনিবেশিক মানসিকতাসম্পন্ন পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণ ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ লেখনী পাঠকদের উজ্জীবিত করত। ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও সামাজিক অনাচার-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম চালানো ছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে এই মহান সাংবাদিকের কলম চলেছে দুর্বার-দুরন্ত গতিতে। ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে কলম চালনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। অকুতোভয়। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৪ সালে অনিকেত ছদ্মনামে 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই' শিরোনামে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত তাঁর একটি লেখা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। সাহসী সাংবাদিক হিসেবে তাঁর লেখার তীক্ষ্নতা সহজেই পাঠকের মন জয় করে নিত। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে নির্মম প্রাণহানির প্রতিবাদে অনিকেত ছদ্মনামে লিখা তাঁর সাহসী লেখা অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এক সময় সাহসী সাংবাদিকতা ও অনিকেত নাম সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৪ সালে নির্মল সেনের ঐতিহাসিক লেখাটির পর এ দেশে অনেকবার সরকার বদল হয়েছে। অনেক সময় পার হয়ে গেলেও অবস্থার কোনোই উন্নতি হয়নি। তাই অনেকেই মনে করেন, দেশের বাস্তব প্রেক্ষাপটে নির্মল সেনের 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টির দাবি' এ দেশে সব সময়ই সমান গুরুত্ব বহন করেছে। সুবক্তা নির্মল সেন রাজনীতিবিদ হিসেবে দাবি-দাওয়া আদায়ে যেমন ছিলেন সদা সোচ্চার তেমনি সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন নেতা হিসেবেও সংবাদপত্র শিল্পে কর্মরত সাংবাদিক-অসাংবাদিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত মানোন্নয়ন ও ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে বরিশালের কলসকাঠিতে নবম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় নির্মল সেন মহাত্মা গান্ধীর 'ভারত ছাড়' আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করতে টানা ১৬ দিন স্কুল গেটে শুয়ে-বসে ধর্মঘট করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করে ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে বিএসসি পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর পড়াশোনা ব্যাহত হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন। ওই সময় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির 'ইয়ে আজাদী ঝুঁটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়" স্লোগান সমৃদ্ধ আন্দোলন গোটা উপমহাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। একজন সাচ্চা কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে নির্মল সেন পালাক্রমে ৬ দিন, ২৪ দিন, ৪০ দিন ও ৫২ দিন মোট ১২২ দিন অনশন করেন। অনশনের ফলে জেলখানায় নির্মল সেন মারা যেতে পারেন ভেবে ১৯৫২ সালের অক্টোবরে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। মুক্তি পেয়ে আবারও তিনি বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন; কিন্তু কলেজ ছাত্র সংসদে ভিপি পদে নির্বাচন করতে গিয়ে তিনি বহিষ্কৃত হন। ঢাকায় এসে পার্টির নির্দেশে সম্ভবত ১৯৫৪ তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হন। ১৯৫৬ সালে তিনি ছাত্রলীগ ছেড়ে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। নির্মলদা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং এমএ পরীক্ষার্থী। অবশ্য নির্মলদা পরে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেছিলেন। কর্তৃপক্ষের কথা না মানায় তাঁকে ঢাকা হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওই সময় তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬০ সালে যখন তিনি গ্রেপ্তার হন তখন তৎকালীন পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে জারিকৃত আইয়ুব খানের সামরিক শাসন চলছিল। দুই বছর কারাভোগের পর তিনি ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রেসট্রাস্টের পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তানে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর দৈনিক পাকিস্তান নাম পরিবর্তন করে দৈনিক বাংলা নামে প্রকাশিত হয়। বলতে গেলে, নির্মল সেনই ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদকীয় পাতার প্রাণ। ১৯৯৭ সালে দৈনিক বাংলা বন্ধ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। পত্রিকা বন্ধ হলে ন্যায্য পাওনা আদায়ে এখানেও তিনি তাঁর প্রিয় অস্ত্র অনশনের আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় তাঁর অবদান অপরিসীম। স্বাধীনতার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি ঢাকা সাংবদিক ইউনিয়ন ও পরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি একনাগাড়ে ১০ বছর সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে পাঁচ দলের নেতা হিসেবেও তাঁর ছিল বিশেষ ভূমিকা। তাঁর লেখা এ পর্যন্ত ছয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হচ্ছে- আমার জবানবন্দী, মা জন্মভূমি, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, বার্লিন থেকে মস্কো, মানুষ সমাজ রাষ্ট্র ও আমার জীবনে ৭১'র মুক্তিযুদ্ধ। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানতে পেরেছি, 'সাংবাদিক নির্মল সেন মহিলা কলেজ' নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর তিনি দেড় একর জমি দান করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নির্মল সেনকে ভালো জানতেন। নির্মল সেনের স্পষ্টবাদিতা ও তাঁর আদর্শ তিনি পছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল হৃদয়ের অধিকারী এক কালজয়ী নেতার জন্য তাই ছিল স্বাভাবিক। দেশের সাংবাদিকতার জগতে নির্মল সেন ছিলেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার জগতে নির্মল সেনের নাম থাকবে চির ভাস্বর। আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে নির্মলদার আর ঢাকায় আসা হলো না। তার পরও এ মহান সাংবাদিকের পক্ষে কেউ মহানন্দে একুশে পদক হাতে নিয়ে তাঁর প্রিয় গ্রামের বাড়ি যেতে সমর্থ হবেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ পরম প্রত্যাশাই করছি। আসুন, বিজয়ের এই মাসে সবাই মিলে সর্বশক্তিমানের কাছে দুই হাত তুলে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.