চরাচর-সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের কুমির by আজিজুর রহমান

বাংলাদেশের কুমির এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। কুমির চাষ এ দেশে ক্রমেই বিস্তার লাভ করায় কুমির রপ্তানি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। কুমির রপ্তানিকারকদের তালিকায় যুক্ত হলো একটি নতুন নাম_বাংলাদেশ।
ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড দেশের এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে গত জুনে প্রথমবারের মতো নিজস্ব খামারে উৎপাদিত ৬৭টি হিমায়িত কুমির জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রপ্তানি করে। চলতি মাসে ছোট-বড় মিলিয়ে আরো প্রায় ৪০০ হিমায়িত কুমির রপ্তানি করা হবে। এমন সংবাদ মিলেছে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালিসহ বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশ থেকে কুমির আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে, যা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। ভবিষ্যতে কুমির রপ্তানির সংখ্যা বাড়তেই থাকবে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানের বিষয়টি অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুব সীমিত। কিন্তু এ দেশের মানুষকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার অনেক পথ খোলা আছে, যদি যথাযথ দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতার দরজা প্রশস্ত করা যায়। এমনই একটা নতুন ক্ষেত্র কুমির চাষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও ভারতে কুমির চাষ হচ্ছে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই। তবে শীর্ষস্থান দখল করে আছে অস্ট্রেলিয়া। কুমিরের মাংসের চাহিদা রয়েছে ইউরোপসহ এশিয়ার অনেক দেশ ও অস্ট্রেলিয়ায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের কুমিরের মাংসের চাহিদা রয়েছে। ভোক্তা দেশগুলোর বাজারে প্রতি কেজি কুমিরের কাঁচা মাংস ১৫-২০ ডলার আর প্রক্রিয়াজাত মাংস ১৮০-২০০ ডলারে বিক্রি হয়ে থাকে। কুমিরের কোনো কিছুই ফেলনা নয়। এর দাঁত, হাড়ও চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। পাকা চামড়ার চাহিদা রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক ধনী দেশে। ফ্রান্স ও চীনে প্রক্রিয়াজাত করা কুমিরের চামড়ার প্রতিটি ব্যাগ ৫০ হাজার ডলারে বিক্রি হয় ধনী দেশগুলোতে। কুমিরের দাঁত থেকে তৈরি হচ্ছে মূল্যবান গহনা। হাড়ের নির্যাস থেকে ফ্রান্সে তৈরি করা হয় অতি মূল্যবান সুগন্ধি, যা বিশ্বের অভিজাত শ্রেণী ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় সম্পূর্ণ রপ্তানিভিত্তিক এই কুমিরের খামার। রপ্তানি খাতে এক নতুন ও উজ্জ্বল সম্ভাবনার পথ তৈরি করে দিল এ প্রকল্পটিও। দৃষ্টান্ত যেহেতু আমাদের সামনে সৃষ্টি হয়েছে, এখন এটি যাতে আরো বিস্তৃত করা যায় সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এর ফলে একদিকে বেকারদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথ প্রশস্ত হবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ।

আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.