চট্টগ্রাম টেস্টের আলোচিত চরিত্র এখন কুয়াশা by আরিফুর রহমান বাবু

 চট্টগ্রাম টেস্টের আলোচিত চরিত্র কে? সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা পাল্টাচ্ছে। শুরম্নর আগের দিন থেকে প্রথম দিন পর্যনত্ম ছিলেন বিরেন্দর সেবাগ। তারপর বাংলাদেশের রাজিব-শাকিব ও ভারতের শচীন তেন্ডুলকর।
রাজিব-শাকিব সমান ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে ২৪৩ রানে অলআউট করে দিয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠিত সব ব্যাটসম্যান ব্যর্থতার মিছিল করলেও একা লড়ে লিটল মাস্টার শচীন ঠিক সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন। তাঁকে আউট করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সোমবার দ্বিতীয় দিন শেষে সেবাগ, রাজিব-শাকিব ও শচীনকে ছাপিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের আলোচিত চরিত্র 'কুয়াশা।' পুরো ম্যাচের ভাগ্য নিয়নত্মা এখন কুয়াশা। যত রকম হিসেব-নিকেশই থাকুক না কেন, কুয়াশা না কাটলে ম্যাচের ভাগ্যও খুলবে না। সেেেত্র নিষপ্রাণ ও ম্যাড়মেড়ে ড্রর সম্ভাবনাই বেশি। যদিও এখনও বাকি তিনদিন। এখনও অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। বাংলাদেশ কোচ জেমি সিডন্সও তাই মনে করেন। তাঁর ধারণা, এখনও অনেক কিছুই হতে পারে। যাই হোক, সব কথার বড় কথা, খেলা হতে হবে আগে। খেলা মাঠে না গড়ালে সব সমীকরণ আর চিনত্মাভাবনাই ভুল হয়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, খেলা ঠিকমতো হবে তো? প্রথম দুই দিন ঘন কুয়াশা দারম্নণ ভুগিয়েছে। প্রথম দিন ঘন কুয়াশা আর আলো স্বল্পতায় পুরো দুই ঘণ্টা খেলা হয়নি। তারপরও সূর্যের দেখা মিলে ছিল। কিন্তু কাল সোমবার সূর্য ঘন কুয়াশায় ঢাকাই ছিল। যে কারণে সারা দিনে খেলা হয়েছে মোটে ১১১ মিনিট। আজ মঙ্গলবার কুয়াশা না কাটলে ফল নিষ্পত্তির সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। আর কুয়াশার কারণে আলো স্বল্পতায় পুরো দিন খেলা না হলে সর্বনাশ হবে। যেমনটা হয়েছিল ২০০৭ সালে। এই মাঠে ভারত-বাংলাদেশের টেস্ট প্রবল ঝড় ও ভারি বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে গিয়েছিল। যার সঙ্গে স্কোর লাইনের না হোক, এ ম্যাচের চালচিত্রর অনেক মিল। কুয়াশার উপদ্রবে নয়, প্রচ- বৃষ্টিতে সে ম্যাচেও প্রথম দিন এক ঘণ্টা খেলা হয়নি। দ্বিতীয় দিন সাকল্যে দেড় ঘণ্টা খেলা হয়েছিল। আর তৃতীয় দিন একটি বলও হয়নি। আজ মঙ্গলবার সেই তৃতীয় দিন। কেন যেন সে তিক্ত স্মৃৃতিই উঁকি দিচ্ছে।
প্রকৃতিই পারে, সে তিক্ত স্মৃৃতির ভয়াল থাবা থেকে এ ম্যাচকে বাঁচাতে। দু'দলের কায়মনোকামনা, মঙ্গলবারের দিনটি হোক রৌদ্রোজ্জ্বল। শুধু ম্যাচ ঠিকমতো হবার জন্যই নয়, টাইগারদের অবস্থান মজবুতেও সূর্যের কিরণ খুব দরকার।
ভারতকে আড়াই শ'র নিচে বেঁধে
ফেলেও খুব স্বসত্মিতে নেই টাইগাররা
৫৯ রানেই খোয়া গেছে তিন উইকেট। তিন টপ অর্ডার তামিম, ইমরম্নল কায়েস ও শাহরিয়ার নাফীস ফিরে গেছেন সাজঘরে। ওদের আউট হবার ধরনের সঙ্গে ভারতীয় ইনিংসের শুরম্নর মিল অনেকটাই। রবিবার সেবাগ-গাম্ভীরও প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশ ফ্রন্টলাইন বোলিংকে ইচ্ছেমতো খেলে বিনা উইকেটে ৬৩ রান তুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু ৭৯ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পর ছোট্ট মড়ক লাগে। ৮৫ রানেই খোয়া যায় তিন উইকেট। একই অবস্থা বাংলাদেশের। তামিম-ইমরম্নল কায়েসও প্রথম উইকেটে বেশ স্বচ্ছন্দে খেলে বিনা উইকেটে পঞ্চাশ পার করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর হঠাৎ ছন্দপতন। ৫৩ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ৫৮-তে তিনজন আউট। প্রথম আউট হয়েছেন ইমরম্নল। তামিমের মতো আত্মবিশ্বাস ও সাবলীলতা ছিল না। তার পরও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জহির খানের উইকেট সোজা ডেলিভারি আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন। ঠিক দ্বিগুণ বলে সাজানো ২৩ রানের ইনিংস শেষ হবার ঠিক চার বল পর আউট হলেন শাহরিয়ার নাফীস। উইকেটে এসেই দারম্নণ এক আত্মবিশ্বাসী পুল খেলে সীমানার ওপারে পাঠানো এ বাঁহাতি আউট হয়েছেন ইশানত্ম শর্মার দারম্নণ ডেলিভারিতে। অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে পিচ পড়া ডেলিভারি শাহরিয়ার নাফীসের ব্যাটের বাইরের কোনা ছুঁয়ে চলে যায় দ্বিতীয় সিস্নপে। আর উইকেটের সামনে ও দু'দিকে বেশকিছু চোখ জুড়ানো ও আক্রমণাত্মক শট খেলা তামিম বোল্ড হয়েছেন জহির খানের একটু নিচু হয়ে যাওয়া বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে। রকিবুল (১) ও আশরাফুল (০) আছেন ক্রিজে। এই জুটির কাছ থেকে একটা বড় পার্টনাশিপের আশায় বাংলাদেশ। ওঁদের সামনে আছে শচীন তেন্ডুলকরের অমন সাজানো গোছানো ও দৃঢ় প্রত্যয়ী ব্যাটিং। ক্রিকেটের মহানায়ক আবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন একাও কি করে দল টানা যায়। ৪৪ নম্বর সেঞ্চুরি থেকে ২৪ রান পিছনে ছিলেন। কাল সকালে মাত্র ৩৩ মিনিটে ২৯ রান করে ফেলেছেন। যার ২৬ (ছয় বাউন্ডারি ও এক ছক্কা) রানই আসে চার ও ছক্কায়। শেষ পর্যনত্ম আউট হননি ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আশরাফুল-শাকিব, মুশফিকুর ও রিয়াদরা ঐ পথে হাঁটার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি কেউ তা পারেন, তাহলেই কেবল ম্যাচে থাকবে বাংলাদেশ। না হয় সেই 'থোড় বড়ি খাড়া, আর খাড়া বড়ি থোড়।'

No comments

Powered by Blogger.