অফিস ম্যানার্স- ফারহানা তাসনীম

বর্তমান সময়ে চাকরি যেন এক সোনার হরিণ। শিৰাগত যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নিয়েও ভাল একটি চাকরি জোটানো রীতিমতো কঠিন ব্যাপার। অনেক প্রতিযোগিতা, অনেক চেষ্টার পর সৌভাগ্যক্রমে যাঁরা চাকরি পান তাঁরা নিঃসন্দেহে যোগ্যতম হিসেবেই নিয়োগপত্র লাভ করেন।
চাকরি পাওয়া যেমন অনেক বড় কঠিন কাজ, তেমনিভাবে চাকরি পাবার পর ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করাসহ অফিসে নানা কাজে নিজের যোগ্যতা, দৰতা ও অভিজ্ঞতা প্রমাণ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। চাকরি নামের সোনার হরিণটি দুর্লভ হলেও ধরা কিন্তু দেয় ঠিকই অনেকের হাতে। আপনি যদি চাকরিজীবী হন তাহলে আপনাদের কাজের দায়িত্ব বা যোগ্যতা দেখা, বিচার বিশেস্নষণ মূল্যায়ন করার বিষয়গুলো অফিস কর্তৃপৰের ওপরেই বর্তায়। কিন্তু আপনার কাজ কর্ম, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন, অফিসের বিধি-বিধান মেনে চলা, আচরণ পরিচালনার দায়িত্ব ইত্যাদি আপনাকেই নিতে হয়। সামান্য সচেতন হলেই আপনি যেমন অফিসে সবার কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারেন, তেমনিভাবে বিব্রতকর অবস্থা কিংবা সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন কর্মৰেত্রে নিজেকে যতটা সম্ভব সেরা এবং গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে আপনাকে কিছু অফিস ম্যানার্স অনুসরণ করতে হবে। এখানে তেমনি কিছু অফিস ম্যানার্স এর কথা তুলে ধরা হলো।
অফিস ম্যানার্সের প্রথম পদৰেপ হলো, ঠিক সময়ে কর্মস্থলে মানে অফিসে পেঁৗছানো। সব অফিসে হয়ত নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার সুযোগ নেই। এ ৰেত্রে আপনাকে হাতে কিছুটা সময় নিয়েই বাসা থেকে বেরোতে হবে। নিজের গাড়ি থাকলেও আপনাকে রাসত্মার যানজটের কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়ে অফিসে নির্দিষ্ট সময়ের পরে পেঁৗছানোটা কোনোভাবেই আপনার সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধের প্রমাণ দেয় না। বরং অফিসে আপনার ইমেজ মস্নান করে দেয়_এ কথাটা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে।
অফিসে যাবার সাজসজ্জা এবং পরনের পোশাক-আশাকের প্রতি আপনার নিজের বিশেষ মনোযোগ রাখা দরকার। অফিসে নিজেকে যতটা সম্ভব মার্জিত ভদ্র, রম্নচিসম্মত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং স্মার্টলি উপস্থাপন করম্নন। অফিসে আপনার সাজসজ্জায় পোশাক-আশাকে কোনোভাবেই উগ্রতা কিংবা অগোছালো কেয়ারলেসভাব যেন ফুটে না ওঠে সেদিক সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। কোনক্রমেই যেন বাহুল্যভাব প্রকাশ না পায় সে ব্যাপারে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। টুং টাং করে ঘণ্টা বাজানো বা প্রচুর চুমকি বসানো চোখ ধাঁধানো পোশাক পর অফিসে যাবেন না। ওড়না এবং শাড়ির অাঁচল পিনআপ করে পরবেন। সালোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ি বস্নাউজ_যেটাই পরম্নন না কেন তাতে শালীনতা বজায় রাখার পাশাপাশি নিজের স্মার্টনেস, আধুনিকতা, সপ্রতিভ ভাবটিও ফুটিয়ে তুলুন। সহকমর্ীদের কাছে হাস্যস্পদের বিষয় হয়ে না ওঠে আপনার সাজ পোশাক সেদিকেও খেয়াল রাখুন। পুরম্নষ সহকমর্ীদের উদ্দীপ্ত ও আকৃষ্ট করতে অহেতুক বাড়াবাড়ি করতে যাবেন না। আপনাকে যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখায় সে বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। অফিসে মহিলাদের কানে বড় দুল বা হাত ভরে চুড়ি পরা বর্জন করা উচিত। মাথার চুল পরিপাটি করে বাঁধবেন। যথাসম্ভব খোঁপা করা উচিত। খোলা চুলে অফিসে যাওয়াটা মোটেও কাম্য হতে পারে না। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের অফিসিয়াল ড্রেস কোড মানা উচিত। কর্মৰেত্রে সবাইকে পরিচ্ছন্ন ও ইস্ত্রি করা পোশাক-আশাক পরে যাওয়া উচিত। ক্যাজুয়েল ড্রেসে অফিসে যাওয়াটা আপনার নিজেরই ব্যক্তিত্ব মস্নান করে দেয়। অতএব এ ব্যাপারে সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়।
অফিসে অনেকে শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাহলে সালোয়ার কামিজ পরা বাঞ্ছনীয়। যারা করপোরেট জব করেন তারা অফিসের মেজাজ বুঝে জিনস, ফতুয়া পরতে পারেন। তবে ফতুয়ার দৈর্ঘ্য একটু বড় রাখাই ভাল। সঙ্গে তাঁত, সিল্ক বা শিফনের ওড়না পড়তে পারেন। অফিসের সাজসজ্জা সাধারণ হওয়াই ভাল। প্রয়োয়জন না পড়লে মেকআপ করার দরকার নেই। মুখে ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করে তার ওপর হাল্কা ফ্রেস পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। চুল এমনভাবে সেট করম্নন যাতে কাজের সময়ে মুখের ওপর না পড়ে। হাঁটার সময় শব্দ হয় এমন ধরনের জুতা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কড়া গন্ধের সেন্ট, পারফিউম ব্যবহার করবেন না। হাল্কা ঘ্রানের বডি স্প্রে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করম্নন। অফিসে বসে বার বার ওড়না বা শাড়ির অাঁচল ঠিক করবেন না।
নিজের ডেস্ক এবং ব্যবহার্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার অভ্যাস করম্নন। চিঠি বা ই-মেইল এলে সময় মতো সেগুলোর উত্তর দেয়া উচিত।
সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করে ফেলতে চেষ্টা করম্নন। অহেতুক কাজ জমিয়ে রাখলে পরবতর্ী সময়ে সেগুলো এক সঙ্গে করতে গেলে আপনাকে হিমশিম খেতে হবে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপৰের বিরাগভাজনও হবেন।
মিটিংয়ের আগে প্রয়োজনীয় ফাইল ও অন্যান্য জিনিসপত্র গুছিয়ে নিন। ঠিক সময়ে মিটিং শুরম্নর আগেই টেবিলে কিংবা মিটিং রম্নমে উপস্থিত হোন। দেরিতে মিটিং শুরম্নর পর গিয়ে উপস্থিত হয়ে নিজে বিব্রত হবেন না, অন্যদের বিরক্ত করবেন না।
কোন কাজ না জানলে সেটা স্বীকার করে নেয়া উচিত এবং কীভাবে করতে হবে সেটা জেনে নেয়া ভাল। অযথা সবজানত্মা ভাব এড়ানো উচিত।
ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা এবং অফিস গসিপে অংশগ্রহণ না করাই বাঞ্ছনীয়।
অনেক সময় অফিসের ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করে ব্যক্তিগত বিষয়ে অনেকেই খোঁজখবর নেন। স্বামী কিংবা স্ত্রী অথবা ছেলেমেয়ে ভাইবোনদের সঙ্গে কথা বলেন। খুব বেশি জরম্নরী প্রয়োজন না হলে অফিসের টেলিফোন দিয়ে বাড়িতে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলা পরিহার করম্নন। অফিস টাইমে টেলিফোন আলাপ দীর্ঘায়িত করা উচিত নয়। এতে কাজের ৰতি হয়। মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, অফিসের পরিবেশও নষ্ট হয়।
আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের অফিসে দেখা করতে আসার বিষয়টি যথাসম্ভব নিরম্নৎসাহিত করম্নন। এ ৰেত্রে বলে রাখা দরকার, জরম্নরী প্রয়োজন বা হঠাৎ প্রয়োজন পড়লে সেটাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত।
নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যনত্ম অফিসে অবস্থান করাটা চাকরি বিধির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অসুস্থতার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগে অফিস ত্যাগ করতে হলে উর্ধতন কর্তৃপৰের অনুমতি নেয়া উচিত। কর্তৃপৰের বিনা অনুমতিতে অফিস ত্যাগ করা বাঞ্ছনীয় নয়। ছুটি না নিয়ে অনানুমোদিতভাবে অফিসে অনুপস্থিত থাকাটাও চাকরিবিধির বরখেলাপ। ছুটির প্রয়োজন পড়লে ছুটির আবেদন করম্নন, কর্তৃপৰের মঞ্জুরির পর ছুটিতে যাওয়া উচিত, তার আগে নয়।
হাতের কাজ জরম্নরী এ্যাসাইনমেন্ট শেষ করেই অফিস ত্যাগ করা উচিত, অর্ধসমাপ্ত কিংবা অসমাপ্ত অবস্থায় কাজ রেখে যাওয়া উচিত নয়।
অফিসের বাইরে আপনার নিজস্ব জীবনে আপনি অন্য কোন পরিচয় কিংবা গুণের কারণে বিখ্যাত, জনপ্রিয় হতে পারেন। অনেকেই হয়ত আপনাকে তারকা হিসেবেও চেনে, পছন্দ করে। এসব আপনার চাকরিস্থলে খুবই গৌণ। মনে রাখবেন অফিস হলো কাজের জায়গা। আপনার যোগ্যতা, মেধা ও পরিশ্রমের কল্যাণে আপনার প্রতিষ্ঠান উপকৃত হলেই আপনি দৰ কমর্ী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
অফিসে সহকমর্ীদের সঙ্গে যথাসম্ভব ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। প্রয়োজনবোধে তাদের সাহায্য সহযোগিতা যেমন নেয়া যায়, তেমনি প্রয়োজনে তাদের কাজকর্মে সাহায্য করা প্রয়োজন। এতে পারস্পরিক সম্পর্ক যেমন ভাল থাকে তেমনিভাবে উভয়ের কাজটিও মানসম্পন্ন এবং ভাল হয়।
সহকমর্ীর ভাল কোন খবরে তাকে কনগ্রাচুলেট করম্নন, তেমনিভাবে তার বিপদ-আপদে কিংবা দুঃসময়ে সহানুভূতি জানান।
নিজের সমস্যা অথবা সাফল্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে অফিসে সহকমর্ীদের জন্য বিরক্তির উদ্রেক করবেন না। সহকমর্ীর কাজ নিয়ে হাসিঠাট্টা করবেন না। অন্যের সমালোচনা, পরনিন্দা, পরচর্চা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করম্নন। তার চেয়ে বরং সহকমর্ীর কাজে সহযোগিতা করতে সচেষ্টা হোন।
কোন সহকমর্ী সমস্যা সৃষ্টি করলে প্রথমে নিজে তা সমাধানের চেষ্টা করম্নন। সব মানুষের মধ্যে কমবেশি ভুলত্রম্নটি থাকতে পারে এটাকে সহজভাবে মেনে নিয়ে তার সঙ্গে এ্যাডজাস্ট করে কাজ করার চেষ্টা করম্নন। সহকমর্ীর ভাল গুণাবলী থাকলে সেটা খুঁজে বের করে সেটিকে সম্মান করম্নন।
অফিসের কোন পার্টি বা পিকনিক থাকলে সেখানে যেতে চেষ্টা করম্নন। এতে কাজের বাইরের সম্পর্ক জোরালো হয়। এ ধরনের অফিস পার্টি বা পিকনিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাবার সুযোগ থাকলে তাদের নিয়ে অংশগ্রহণ করম্নন।
যারা চাকরি করেন অফিসে অনেকটা সময় কাটাতে হয় তাদের। বলা যায়, অফিস হলো কর্মজীবনের পরিবার। নিজের পরিবারে যেমন প্রয়োজনে অনেক কিছু ছাড় দিয়ে ভাল থাকতে হয়, তেমনই কাজের পরিবারের প্রয়োজনে কিছুটা ছাড় দিয়ে ভালভাবে এ্যাডজাস্টমেন্টের চেষ্টা করা প্রয়োজন। ্য

No comments

Powered by Blogger.