লা লিগা একাদশ!

হাতে ছোট্ট ট্রফি নিয়ে মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ১১ জন। মাত্রই তাঁদের হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন আন্দ্রে শেভচেঙ্কো। চেহারাগুলো একদৃষ্টে দেখে মনে হবে বুঝি লা লিগা একাদশ! আসলে এটাই সদ্যসমাপ্ত বছরের সেরা একাদশ—ফিফা ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশ ২০১২।
লিওনেল মেসির ইতিহাস গড়ার রাতে একটা ‘প্রথম’-এর জন্ম দিয়েছে ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশও। ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই বিশ্বসেরা একাদশ নির্বাচন। আটবারের মধ্যে এই প্রথমবার একাদশের সবার একটা পরিচয় এক। সবাই ক্লাব ফুটবল খেলেন একই দেশে—স্পেন!
আরও নির্দিষ্ট করে বললে এটা আসলে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা সম্মিলিত একাদশ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাব থেকেই আছেন সমান পাঁচজন করে। এর বাইরের সবেধন নীলমণি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার রাদামেল ফ্যালকাও। জাতীয় দল বিবেচনাতেও স্বাভাবিকভাবেই স্পেনের জয়জয়কার। ১১ জনের ছয়জনই বিশ্ব ও ইউরো চ্যাম্পিয়নদের। বিশ্বজুড়ে পেশাদার ফুটবলার ইউনিয়নগুলোর প্রায় ৫০ হাজার ফুটবলারের গোপন ভোটে নির্বাচন করা হয়েছে এই একাদশ।
ব্যক্তিগত লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে গেলেও একাদশে জায়গাা পাওয়ার রেকর্ডে মেসির সঙ্গী রোনালদো। রেকর্ড টানা ছয়বার একাদশে থাকলেন দুজনই। টানা পঞ্চমবার থাকলেন ইকার ক্যাসিয়াস ও জাভি হার্নান্দেজ, টানা চতুর্থবার আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। এবারই প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্সেলো ও অ্যাটলেটিকোর ফ্যালকাও। মেসিই পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি ভোট (৭৪.৬%), এরপর রোনালদো (৬৪.৯%) ও ইনিয়েস্তা (৬৪.৫%)।
বিশ্বসেরা একাদশের সবাই নিজের দেশের লিগের খেলোয়াড়, এটা দেখে উচ্ছ্বসিত বর্ষসেরা কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক, ‘স্পেনের প্রতিনিধি হিসেবে ফিফা বর্ষসেরা দল দেখে আমি খুবই খুশি। দলের সবাই স্প্যানিশ নয়, অথচ খেলছে স্পেনেই। স্পেন অসাধারণ এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এতে সেটারই প্রতিফলন। আমাদের ফুটবলের বর্তমান অবস্থা বিবেচনাতেই ব্যালন ডি’অরে আমি ভোট দিয়েছি স্পেনের তিনজনকে— দলের দুই অধিনায়ক (অধিনায়ক ক্যাসিয়াস ও তাঁর ডেপুটি জাভি ) এবং ইউরোপ-সেরা হওয়া ইনিয়েস্তাকে।’ জুরিখে এই স্প্যানিশ রাতের পরদিন স্পেনের সর্বাধিক প্রচারিত ক্রীড়া দৈনিক মার্কা শুধু ‘স্পেন!!!’ শিরোনাম দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছে ব্যাপারটা।
দেল বস্ক বা গোটা স্পেন উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলেও ফিফপ্রো একাদশ কিন্তু জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। ডিফেন্সে দানি আলভেসের থাকাটা যেমন অবাক করেছে অনেককেই। পেপ গার্দিওলার সঙ্গে ঝামেলা বাঁধিয়েছিলেন, নতুন কোচ টিটো ভিলানোভার সময়ও প্রথম কয়েক ম্যাচ বসেছিলেন বেঞ্চে। স্পেনে আসার পর সম্ভবত এই ব্রাজিলিয়ানের সবচেয়ে বাজে বছর কেটেছে ২০১২-তেই। প্রশ্নবিদ্ধ জেরার্ড পিকের থাকাটাও। প্রশ্ন উঠেছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের পোলিশ ডিফেন্ডার লুকাস পিজচেক এবং জুভেন্টোস ও ইতালির হয়ে দুর্দান্ত বছর কাটানো গিওর্গিও কিয়েলিনির না থাকাটাও। সবচেয়ে আলোচিত অবশ্য আন্দ্রেয়া পিরলোর জায়গা না পাওয়া। জুভেন্টাসকে সিরি ‘আ’ জেতানো ও ইতালিকে ইউরো ফাইনালে নিয়ে যাওয়া মিডফিল্ডারের না-থাকার যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। তার চেয়েও অবাক ব্যাপার হলো, ভোটে পিরলো কাছাকাছিও ছিলেন না। তিনজন মিডফিল্ডার নেওয়া হয়েছে, ভোটে চতুর্থ ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির আইভরিয়ান মিডফিল্ডার ইয়াইয়া তোরে! এএফপি, রয়টার্স, ওয়েবসাইট।

ফিফা ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশ ২০১২
গোলকিপার : ক্যাসিয়াস (স্পেন/রিয়াল মাদ্রিদ)
ডিফেন্ডার : আলভেস (ব্রাজিল/বার্সেলোনা), মার্সেলো (ব্রাজিল/রিয়াল মাদ্রিদ), পিকে (স্পেন/বার্সেলোনা), রামোস (স্পেন/রিয়াল মাদ্রিদ)।
মিডফিল্ডার : আলোনসো (স্পেন/রিয়াল মাদ্রিদ), ইনিয়েস্তা (স্পেন/বার্সেলোনা), জাভি (স্পেন/রিয়াল মাদ্রিদ)।
ফরোয়ার্ড: ফ্যালকাও (কলম্বিয়া/অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), মেসি (আর্জেন্টিনা/বার্সেলোনা), রোনালদো (পর্তুগাল/রিয়াল মাদ্রিদ)।

No comments

Powered by Blogger.