এরিক সেগাল -এর জীবনী

এরিক সেগালের জন্ম একটি ইহুদী ধর্ম যাজকের পরিবারে। পরবতর্ীতে তিনি ব্রম্নকলিনের মিডওড হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং সেই স্কুলের গ্রীষ্মকালীন কোর্স করতে মাঝে মাঝে ইউরোপ ঘুরে আসতেন।
পারিবারিক ঐতিহ্যগত কারণেই খুব অল্প বয়স থেকেই এরিক সেগাল পরিচিত হন পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে। এরিক সেগাল কাসিক্যাল কবিতা এবং লাতিন সেলুটেটোরিয়ান এই দুই বিষয়ে স্নাতক করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মাস্টার্স এবং ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। ডক্টরেট করেন সমসাময়িক সাহিত্য নিয়ে। ১৯৬৫ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জনের পর সেগাল শিৰকতাকেই তার পেশা হিসেবে বেছে নেন এবং এর পাশাপাশি চলে তার লেখার কাজ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীক এবং লাতিন সাহ্যিতের অধ্যাপক নিযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি তিনি রেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিৰকতা করেন। এর পাশাপাশি সেগাল ছিলেন ওলফসন কলেজ, অক্সফোর্ডের অনারারি ফেলো। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন বিখ্যাত রক ব্র্যান্ড বিলটসের ইউলো সাবমেরিনের চিত্রনাট্য দিয়ে তার লেখক জীবনের যাত্রা শুরম্ন। লি মিনোফের লেখা বই ইউলো সাবমেরিনের চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করেই বিটলস তাদের প্রথম ছায়াছবি ইউলো সাবমেরিন।
ষাট দশকের শেষ দিকে অন্যান্য চিত্রনাট্যকারের সহায়তায় সেগাল তার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠী এবং রেডকিফ কলেজের এক ছাত্রীর বাসত্মবজীবনের কাহিনীকে ঘিরে চিত্রনাট্য লেখেন। কিন্তু চিত্রনাট্যটি বিক্রি করতে সেগাল ব্যর্থ হন। যাই হোক তার এক এজেন্ট তাকে পরামর্শ দেয় চিত্রনাট্যটি গল্পে প্রকাশ করার। এরপর চিত্রনাট্যটি গল্পাকারে প্রকাশ করা হয় এবং পুনরায় সেই একই চিত্রনাট্য দিয়ে তৈরি করা হয় চলচ্চিত্রে। লাভ স্টোরি গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিউইয়র্ক টাইমসের সর্বোচ্চ বিক্রীত বই হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৭০ সালে এই কাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রেষ্ঠ গল্প হিসেবে পুরস্কৃত হয়। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ৩১টি ভাষায় অনূদিত হয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। লাভ স্টোরি গল্প নিয়ে নির্মিত ছায়াছবিটি ১৯৭০ সালের বক্স অফিসে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ১৯৭৭ সালে এই গল্পের ধারাবাহিক আরেকটি গল্প তিনি লেখেন এবং গল্পের নাম দেয়া হয় অলিভার্স স্টোরি।
এরিক সেগাল তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য পা-িত্যপূর্ণ কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এরিক সেগাল ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গ্রীক এবং লাতিন সাহিত্য নিয়ে অসংখ্য লেখা লিখেছেন। তার লেখা বই সাগা ফ্রান্স এবং ইতালীয় সাহিত্যের সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করে। এছাড়া ডক্টরস তার অন্যতম অনবদ্য উপন্যাস।
১৯৭৫ সালে সেগাল কেরেন জেমসকে বিয়ে করেন। কেরেন জেমস একজন ফ্রি লেন্স সাংবাদিক এবং সাহিত্য সমালোচক। গত ১৭ জানুয়ারি রবিবার ৭২ বছর বয়সে হার্টএ্যাটাকে আক্রানত্ম হয়ে মৃতু্যবরণ করেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তার কন্যা ফ্রান্সসিসকা সেগাল জানান, তার পিতা লন্ডনের নিজ বাসগৃহে মৃতু্যবরণ করেন। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। তার শেষকৃত অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের একটি ইহুদী কবরস্থানে এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। তার সেই বিখ্যাত উক্তি ভালবাসলে কখনই দুঃখিত বলতে নেই_ এখন রীতিমতো আধুনিক প্রেমিক-প্রেমিকার প্রিয় একটি উক্তি। এই বিখ্যাত উক্তি নিয়ে গায়ক জন লেলন বলেন, "এই উক্তি অবশ্যই আমাদের আধুনিক প্রেমময় জীবনের একটি বিখ্যাত সংলাপ, তবে আমি মনে করি ভালবাসা মানে প্রতি ১৫ মিনিট পর পর দুঃখিত বলা।" ১৯৭০ সালের সেই বিখ্যাত গল্প সেগালকে পরিণত করে একজন সেলিব্রেটি হিসেবে। এর পাশাপাশি অলিম্পিক গেমসের ধারাভাষ্যকার হিসেবেও তাকে বিভিন্ন টিভি শোতে দেখা যায়।

No comments

Powered by Blogger.