সব স্টলে ক্রেতার ভিড় বিক্রি আশাতীত, নতুন ১৫২- বইমেলা প্রতিদিন

বাঙালীর আত্মপরিচয়ের দিন আজ রবিবার। অমর একুশে ও মহান ভাষা দিবস আজ। শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় দিনটি পালনে প্রতি বছরের মতো আজও ঢল নামবে মানুষের।
প্রলয়ঙ্করী ঝড় সিডরের বানের পানির চেয়ে আরও শক্তি ও গতি নিয়ে মানুষের এ ঢল নামবে শহীদ মিনারে ও আজিমপুরে শহীদদের কবরস্থানে। এ ঢলেরই পুরো থাক্কা এসে পড়বে আবার অমর একুশের বইমেলায়। যার রেশ অনুভব করা গেছে শনিবার রাতেই। টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় এদিনও লোকে লোকারণ্য ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। প্রতিটি স্টলেই ছিল ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। কাউকে তাঁর পছন্দের লেখকের বইটি সংগ্রহ করতে অপেৰা করতে হয়েছে প্রায় আধা ঘণ্টা। তবে প্রকাশকরা বেজায় খুশি। কেউ কেউ তো ৩২ দাঁত বের করে হাসছে। কবি সাহিত্যিকদেরও উপস্থিতির কমতি ছিল না। এদিন মেলায় দেখা গেছে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কবি আসাদ চৌধুরী, বিজন শর্মা, ম হামিদ, আনিসুল হক, কবি সাইফুল বারী, কন্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী, সঙ্গীত পরিচালক আজাদ রহমানসহ আরও অনেকে। এদিন প্রায় তিন ডজন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। নতুন বই এসেছে ১৫২টি। এদিন সেই পর্ণগ্রাফি স্টলের ব্যানারটি আর দেখা যায়নি। অবশেষে বাংলা একাডেমীর বধোদয় হয়েছে বলেই মনে হলো। তবে এই স্টলটি এখন দখল নিয়েছে সরকারদলীয় সংগঠন বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার।
লেখকদের কথা এদিন মেলায় বহু কবি সাহিত্যিক এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই এসেছিলেন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে। আবার অনেকে বিভিন্ন স্টলে বসে পাঠকদের দিয়েছেন অটোগ্রাফ। তাঁদেরই একজন কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, এ মেলাকে আমার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মেলা মনে হয়। কারণ এ মেলার সঙ্গে একটি জাতির ইতিহাস জড়িত। এমন এক ইতিহাস যা আজ বিশ্বস্বীকৃত। যে ভাষার জন্য এ জাতি রক্ত দিয়েছে, সে ভাষারই বইয়ের মেলা আজ এক মহীরূহে পরিণত হয়েছে। যার সঙ্গে কোন দেশেরই কোন মেলার তুলনা চলে না। মেলায় এত প্রাণের উপস্থিতি দেখে আমার এখন এটাই মনে হচ্ছে এ জাতিকে কোন কিছুতেই কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। এই গণজোয়ার এও বলে, এখানেই যাঁরা আসছে তাঁরা সবাই মুক্ত চিনত্মার মানুষ। তাই এদেশে কখনই কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই।
প্রকাশকের কথা প্রকাশকদের মুখ এদিন বেশ উজ্জ্বল দেখা গেছে। এক এক স্টলে চারজন পাঁচজন করে কর্মী থাকার পরও বই ক্রেতার হাতে তুলে দিতে ফুরসত পাচ্ছে না। প্রতিটি স্টলের সামনেই দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে। পছন্দের বই কিনতে ক্রেতাদের আধা ঘণ্টারও বেশি অপেৰা করতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শোভা প্রকাশের মিজানুর রহমান বলেন, বিক্রি বেশ ভাল। এটুকুই বললাম, আজ আর কথা বলব না।
নতুন বই এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৫২টি। এর মধ্যে কবিতার বই ৩৫টি, উপন্যাস ২৫টি, গল্প ১৭টি, প্রবন্ধ ১২টি, ছড়া ১১টি, আর বাকিগুলো অন্যান্য গ্রন্থ। এদিনের উলেস্নখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে এলবি তন্ময়ের বেদনার সৈকতে দাঁড়িয়ে এনেছে ঐশী, মোরশেদ শফিউল হাসান ও জুলফিকার হায়দারের এই দেশে একদিন একটি যুদ্ধ হয়েছিল রণাঙ্গনের স্মৃতি এবং মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ চিনত্মা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ এনেছে অনুপম, ড. মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারীর মহাজোট সরকার প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জের প্রথম বছর এনেছে অনিন্দ্য, সৈয়দা সাজেদা সাজুর কবিতায় বঙ্গবন্ধু এনেছে আলপনা, বাবর আলী মীর সম্পাদিত বারিমস বাংলা-ইংলিশ ডিকসনারী এনেছে বাড, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস সমগ্র-১ এনেছে অবসর, মুম রহমানের ৫০ সেরা চলচ্চিত্র এনেছে ভাষাচিত্র, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ এনেছে জাতীয় সাহিত্য, রওশন আরা রম্নশমীর নানা দেশের লোক কাহিনী এনেছে গ্রন্থপ্রকাশ, সহিদ হোসেনের বিশ্বের সেরা ভাষণ এনেছে সুবর্ণ, সৌমিত্র দেবের কবিতার বই চুম্বনে আপত্তি নেই এনেছে আল আমিন, মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর এনেছে জাতীয় সাহিত্য, বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ১৫০ মোগল টুলী এনেছে পড়ুয়া, সামসুজ্জোহা চৌধুরীর একাত্তরের রক্তে রাঙা দিনগুলো ও শেখ আব্দুুল জলিলের একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে এনেছে গেস্নাব, মঈনুদ্দিন কাজলের মুক্তিযুদ্ধের জুঁই পলাশ এনেছে রিদম, শেখ ফজলে এলাহীর আনত্মর্জাতিক আইন ও বাংলাদেশ ভারত পানি বিরোধ এবং ইসহাক কাজলের জনক তুমি বাংলাদেশ এনেছে ইত্যাদি, মুহম্মদ মোফাজ্জলের টিকটিকি ও অক্টোপাস এনেছে অনিন্দ্য, অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদের একুশে ফেব্রম্নয়ারির তাৎপর্য ও অন্যান্য নিবন্ধ এবং হালিম আজাদের খনন এনেছে মিজান, শাহিদা ইসলামের বাংলাদেশে নারীর ৰমতায়ন এনেছে ইউপিএল, মফিদুল হকের লালনকে কে বাঁচাবে এনেছে বিদ্যা, আর স্বাতী জসীমের বাংলা কথ্য ভাষার ইতিহাস এনেছে মিজান।

No comments

Powered by Blogger.