বাগেরহাটের সেই এসপি মিজান প্রত্যাহার

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপালগঞ্জ, ২০ ফেব্রম্নয়ারি বাগেরহাট পুলিশের এসপির জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবশেষে ঘটনার দু'দিন পর নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত সেই এসপি মিজানুর রহমানকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে তাঁকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এসপি মিজানের বিরম্নদ্ধে জমি দখল ও এ দখল প্রক্রিয়ায় জেলা পুলিশকে সম্পৃক্ত করা এবং দখল ঠিক রাখতে বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার নামে ক্রয়সূত্রে মালিক দেখিয়ে সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়গুলো নিয়ে গত দুই দিন বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স, ঢাকা শনিবার তাঁকে প্রত্যাহারের এ আদেশ দেয়।
এদিকে, বাগেরহাটের এসপিকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় সনত্মোষ প্রকাশ করেছেন গোপালগঞ্জের নিরীহ ও ৰতিগ্রসত্ম জমি মালিকরা। যাঁরা তাঁদের জমি হারানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলা-মামলার ভয়ে ভীত-সন্ত্রসত্ম ছিলেন। কারণ ঐ এসপির নির্দেশে ইতোমধ্যে সাধারণ জনগণের পৰে কথা বলায় সমাজ সেবক রাজু সিকদার ও অন্য কয়েকজনের বিরম্নদ্ধে মামলা হয়েছে মোলস্নাহাট থানায়। এ সব কারণে এখানকার সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রসত্ম ছিলেন। তবে এলাকায় শুক্রবার একটি সভা করেছে সেখানকার লোকজন। সেখানে বাগেরহাটের এসপি গোপালগঞ্জের ভূমি মালিকদের জমি জোর করে দখলের যে অপচেষ্টা করেছিল তার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষী এসপির শাসত্মি দাবি করেন। তা ছাড়া এসপি মিজানুর রহমানকে আসামি করে ৰতিগ্রসত্মরা মামলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উলেস্নখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রায় এক/দেড় শ' মাটি কাটা শ্রমিক নিয়ে গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সীমানত্মবতর্ী গোপালগঞ্জের চরগোবরা গ্রামের নিরীহ সাধারণ কৃষকদের জমির মাটি কেটে ফেলতে থাকে। এ সময় থানা পুলিশসহ কয়েক শ' দাঙ্গা পুলিশের সমাগম ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এক পর্যায় দুপুরের দিকে এলাকার জনগণ সংগঠিত হয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করে। এ সময় তাদের নানাভাবে পুলিশ ভয়ভীতি দেখায় এবং এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু, শেষ চেষ্টা হিসেবে বাপ-দাদার সম্পত্তি রৰায় মরিয়া হয়ে ওঠে সেখানকার লোকজন। প্রতিবাদ করতে শুরম্ন করে তারা। অবস্থা বিস্ফোরণের দিকে যেতে থাকে। এ সময় খবর পেয়ে গোপালগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) হামিদুল হক এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং বিষয়টি নিয়ে তারা বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে মাটি কাটা বন্ধ করে দেন। ফলে পরিস্থিতি সে সময় শানত্ম হয়। কিন্তু, তার পরও বসে থাকেননি এসপি মিজান। তিনি তাঁর দখল প্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে উঠেপড়ে লাগেন। বিষয়টি সেখানে থেমে থাকেনি। প্রতিবাদকারীদের ভূমিদসু্য বানিয়ে মামলা পর্যনত্ম করিয়েছেন। তিনি যে ধোয়া তুলশী পাতা তা প্রমাণের জন্যও চেষ্টার কমতি করেননি। কিন্তু তার সব চেষ্টাই শেষ পর্যনত্ম ব্যর্থ হয়েছে। তাঁকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় শনিবারের মধ্যেই বাগেরহাটের এসপি থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করতে বলে।
নিজস্ব সংবাদদাতা বাগেরহাট থেকে জানান, বাগেরহাটের মোলস্নাহাট ও গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার সীমানত্মে মধুমতি নদীর জেগে ওঠা চর ও সংলগ্ন কয়েকশ' একর জমি নিয়ে উভয় উপজেলার মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ চরের জমি নিয়ে বিগত দিনে বহুবার হামলা, মামলা, সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। বিগত সময়ে এ নিয়ে কয়েকবার বৈঠক হলেও তা সমাধান হয়নি। কিন্তু জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কোন প্রকার বৈঠক বা মীমাংসা ছাড়াই গত বৃহষ্পতিবার বাগেরহাটের এসপি মিজানুর রহমান পুলিশ নিয়ে সাধারণ মানুষকে হুমকিধমকি দিয়ে সেখানের মাটি কেটে বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরম্ন করেন এবং কয়েক উর্ধতন পুলিশ অফিসারের নামে সাইনবোর্ড দিয়ে তা দখল করেন। পরে এ ঘটনা নিয়ে গোপালগঞ্জের চর গোবরা ইউনিয়নের শত শত সাধারন মানুষ বিােভ করে প্রতিবাদ জানায়। ফসলী জমির মাটি কাটা, জমির ফসলের ব্যাপক তি ও জমি দখল নিয়ে উভয় পরে মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বাগেরহাটের এসপির নির্দেশে সেখানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খবর পেয়ে গোপালগঞ্জের সদর উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেন এবং বাগেরহাটের এসপি ও ডিসির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মোলস্নাহাটের উপজেলা চেয়ারম্যান মোলস্না মোতাহার হোসেন, ওসি জিলস্নুর রহমান, সার্কেল এএসপি মোঃ মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.