জিএসপি-সুবিধা প্রত্যাহার- নোটিশ জারি, জানুয়ারিতে মতামত চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র



পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে দেওয়া শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা অর্থাৎ জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা প্রত্যাহার, স্থগিত বা সীমিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে মতামত চেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়।
মার্কিন ফেডারেল রেজিস্ট্রার গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি নোটিশ প্রকাশ করেছে। এতে সংশ্লিষ্টদের অর্থাৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মতামত দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ইউএসটিআরের ট্রেড পলিসি স্টাফ কমিটির (টিপিএসসি) জিএসপি উপকমিটি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে জিএসপি-সুবিধা প্রত্যাহার, স্থগিত বা সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। কারণ, সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ শ্রমিক ইউনিয়ন আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেসেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনসের (এএফএল-সিআইও) সর্বশেষ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জিএসপি উপকমিটি বিশ্বাস করে যে, শ্রম অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।
নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেই সুবিধা শ্রমিকেরা সেভাবে পাচ্ছেন না। এতে তাঁরা তাঁদের অধিকার নিয়ে সেভাবে কথা বলতে পারছেন না। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের যে শুল্কমুক্ত সুবিধা রয়েছে, সেটি দেওয়া উচিত কি না, সেটা বিবেচনা করার কথা যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো দেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার, স্থগিত বা সীমিত করতে পারেন। নোটিশে বলা হয়, ‘তবে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এটি বিবেচনা করেন যে, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার শ্রম অধিকার সুসংহত করতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন বা নিচ্ছেন।’
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, জিএসপির আওতায় ২০১১ সালে দুই কোটি ৬৩ লাখ ডলারের তামাকজাতীয় পণ্য, চায়না কিচেনওয়্যার, খেলাধুলা সামগ্রী ও প্লাস্টিক পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
এদিকে, বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা গতকালই বাংলাদেশকে শ্রমিকদের কাজের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেওয়া শুল্কমুক্ত বাণিজ্য-সুবিধা তুলে না নেওয়ার ব্যাপারটিও বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের একজন সাবেক সভাপতির উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি বলেছে, জিএসপি সুবিধার অধীনে বাংলাদেশের তেমন কোনো বড় মানের ব্যবসা হয় না। ২০১১ সালে দুই কোটি ৬৩ লাখ ডলারের মতো বাণিজ্য হয়েছে। এতে মনে হয়, বাণিজ্যের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এটি অন্য ধরনের প্রভাব ফেলবে। অর্থাৎ এই সুবিধা যদি কোনো কারণে উঠে যায়, তাহলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর থেকে একধরনের আস্থা চলে যেতে পারে। সুবিধাটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধার কথা বলা হচ্ছে। ইউরোপে যাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করেন, তাঁরাও একধরনের আস্থাহীনতায় ভুগতে পারেন। একেই ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছেন।
শ্রমিকেরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে মুনাফা করা, তাঁদের অধিকার না দেওয়ার প্রবণতা, সেই সঙ্গে যে আইনকানুন রয়েছে, তা মেনে না চলার প্রবণতার মাধ্যমেই বিদেশি চাপ তৈরি করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
জিএসপি সুবিধা যাতে থাকে, সে প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবিসির কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে শ্রম মন্ত্রণালয় বিবিসিকে জানিয়েছে, এ ধরনের আলোচনার পটভূমিতে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শ্রমসচিব মিকাইল শিপার বিবিসিকে বলেছেন, শ্রম আইনের সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যেমন: বিজিএমইএ, বিকেএমইএর সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তবে ঠিক কোন অধিকার নিয়ে কথা চলছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে তিনি কিছু বলেননি।

No comments

Powered by Blogger.