হুমায়ূনের দারুচিনি দ্বীপ_ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জরুরী- দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন

 দেশের জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদ প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে নিয়ে লিখেছিলেন 'দারম্নচিনি দ্বীপ'। কয়েক তরম্নণের সেন্টমার্টিন যাত্রা নিয়ে তাঁর এ জনপ্রিয় উপন্যাস পরবতর্ীতে পূর্ণদৈঘর্্য চলচ্চিত্রে রূপ পায়।
অনেকের মতে, সেন্টমার্টিনকে তরম্নণদের কাছে এ্যাডভেঞ্চারার্স স্থান হিসেবে পরিচিত করেছেন হুমায়ুন আহমেদই। সেন্টমার্টিনে তাঁর বাড়ি 'সমুদ্র বিলাস'ও দ্বীপের অন্যতম পর্যটন স্থান। স্বাতন্ত্র্যের কারণে স্বচ্ছ নীল সমুদ্রের দ্বীপটিতে প্রতিবছরই পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। হু হু করে বাড়ছে জমির দামও। তবে কমছে জীববৈচিত্র্য। কয়েক বছর আগেও প্রবালের ওপর জমে থাকা শ্যাওলা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন দ্বীপের অনেক অধিবাসী। এখন সে দৃশ্য বিরল। বেঁচে থাকার তাগিদে দ্বীপবাসী এখন পর্যটনকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহে আগ্রহী। তাই দ্বীপকে ঢেলে সাজাতে মহাপরিকল্পনা ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রৰা করে বিনিয়োগের দাবি বাসিন্দাদের।
দ্বীপের ইউরো বাংলা রেসত্মরাঁর মালিক ইসহাক মাহমুদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বললেন, নবেম্বর থেকে মার্চ পর্যনত্ম বছরের পাঁচ মাসকে পুঁিজ করেই আমাদের চলতে হয়। অন্য কাজ না পেলে বছরের সাত মাস বেকার থাকতে হয়। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফিরোজ আহম্মেদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে স্বাবলম্বী হতে চাই। দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে অমিলই সেন্টমার্টিনের বড় পুঁজি। পর্যটকরা দেশের আর দশটা স্থান থেকে ভিন্নতা খুঁজে পান বলেই সেন্টমার্টিনের প্রতি আগ্রহী হন। তাই এ দ্বীপের স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখা জরম্নরী। সেন্টমার্টিনে ভাল রাসত্মা নেই। দ্বীপের চারপাশ দিয়ে সাড়ে ৮ কিলোমিটার রাসত্মা করা দরকার; যাতে করে পর্যটকরা ভ্যানে চড়ে চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। পর্যটকদের জন্য থাকার ভাল জায়গা দরকার। পর্যটক আকর্ষণের সবচেয়ে জরম্নরী বিষয়_ থাকার স্থানটিকে গুরম্নত্ব দিয়ে পরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নিমর্াণের সুযোগ দেয়া উচিত। সেন্টমার্টিনের আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান বললেন, ইকো-টুরিজ্যমের ধারণাটি অধিবাসীদের বোঝানোর জন্য, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সরকারকে আলোচনায় বসা উচিত। জামায়াতে ইসলামীর সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল হামিদ জিলানিও একই কথা বললেন।
দ্বীপ ঘুরে জানা যায়, দ্বীপের ৭০ শতাংশ জমির মালিক এখন বাইরের বিনিয়োগকারী। মাত্র কয়েক বছরে সেখানে জমির দাম বহুগুণে বেড়ে গেছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা বাইরের বড় বিনিয়োগকারীদের কাছে জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। জেটি থেকে ১০ মিনিটের হাঁটাপথ হোটেল প্রাসাদ পা্যারাডাইজ। প্রায় এক বিঘা জমির ওপর হোটেলটি নিমর্াণ করা হয়েছে। হোটেলটি দেখিয়ে ভ্যানওয়ালা ইউনূস এ প্রতিবেদককে জানাল, তার বাবা আব্দুর রশিদের কাছ থেকে কয়েক বছর আগে জমিটি ৮০ হাজার টাকায় কিনে নেন ঢাকার এক বিশিষ্ট রাজনীতিক। আর এখন সেন্টমার্টিনে এক বিঘা জমি ৫০ লাখ টাকার নিচে বিক্রি হয় না। তবে সরকারের এক নির্দেশনায় সে সব জমিতে স্থাপনা নিমর্াণ বন্ধ রয়েছে। সরকারের দাবি, এটাকে ইকো-টুরিজ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পর্যটকরা যাওয়ায় যেভাবে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নিমর্াণ চলছে, তাতে করে দ্বীপ দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নষ্ট হতে পারে জীববৈচিত্র্য। তবে ইকো-টুরিজ্যম গড়ে তোলার জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বা বিনিয়োগকারীদের জমিগুলোতেই বা কি ধরনের স্থাপনা নিমর্াণ হবে, তা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা নেই কারও। তাই মনগড়া কাহিনী আর গুজবকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের প্রতি বিদ্বেষ বাড়ছে দ্বীপবাসীর। দ্বীপের কেউ কেউ বলেন, শুনেছি ইকো- টুরিজ্যম করার জন্য সরকার আমাদের দ্বীপ ছাড়া করবে। কেউ কেউ বলছেন, স্থাপনা নিমর্াণে সরকারের বিধিনিষেধ শুধু দ্বীপবাসীর জন্যই। বাইরের লোকজন এলাকাবাসীর কাছ থেকে জমি কিনে ভবন নিমর্াণ করছে। তাদের কোন বাধা দেয়া হচ্ছে না।
দ্বীপের বাসিন্দা পদার্থ বিজ্ঞানে ২য় বর্ষের ছাত্র খোরশেদ আলমগীরের দাদা টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন এসে বসবাস শুরম্ন করেন। সে হিসেবে সে দ্বীপের দ্বিতীয় প্রজন্ম। বাবা সেন্টমার্টিন জিঞ্জিরা সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিৰক। বললেন, দাদার আমলে করা তাদের কাঠের বাড়িতে উঁইপোকা ধরেছে। সংস্কার না করলে আর বাড়িতে বসবাস করা যাবে না। ইটের পাকা বাড়ি করার ইচ্ছে থাকলেও তা করতে পারছেন না। কারণ সরকার দ্বীপে পাকা বাড়ি করার অনুমতি দিচ্ছে না। দ্বীপবাসীর এসব অভিযোগ নিয়ে সেখানের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি জনকণ্ঠকে বলেন, দ্বীপের বাসিন্দাদের হটিয়ে নয়, সেন্টমার্টিনকে নিয়ে সরকারের সমসত্ম পরিকল্পনা হবে দ্বীপবাসীকে সঙ্গে নিয়েই।

No comments

Powered by Blogger.