ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আজ কোন্ পথে? by প্রদীপ মালাকার

সম্প্রতি নিউইয়র্কের জ্যাকশন হাইটসে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার উদ্যোগে সংখ্যালঘু ইস্যু ও বিভাজিত জাতি এই শিরোনামে এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ বক্তাই ছিলেন সাংবাদিক ও বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক।


তাঁরা তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ইস্যুর ওপর বক্তব্য রাখেন যা সমস্যার গভীরে পৌঁছার প্রতিফলন ঘটেনি। তাঁরা অনেকেই বলেন, দেশে সংখ্যালঘু বলতে সংবিধানে বিধান নেই, এটা বিশেষ রাজনৈতিক জোটের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের মনস্তাত্ত্বিক ইস্যু হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। আবার কেউ বলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিচার তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে একটি অনুকরণীয় দেশ। এক সাংবাদিক বন্ধু তো বলেই ফেলেন হিন্দুরা বাংলাদেশে কামাই করে ভারতে অট্টালিকা গড়ে। গত মাসে ঢাকা থেকে এক বিরোধীদলীয় নেতা এক মিটিং এ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মানুষের জানমালের বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জনমাল, ধর্মীয় অনুশাসন কোন কিছুর নিরাপদ নেই। প্রতিনিয়ত তারা মন্দির শ্মশানের সম্পত্তি দখল করে মার্কেট, মিউজিয়াম বানাচ্ছে। তিনি আরও দাবি করেন যে কোন সময়ের চেয়ে তাদের জোট আমলে হিন্দু সম্প্রদায় ভাল ছিল, শান্তিতে ছিল। এখন মুক্ত আলোচনার বক্তাদের বক্তব্যও বিরোধী নেতার বক্তব্য এক সাথে আলোচনা করলে বুঝা যাবে আসলে এ সকল বক্তব্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। মুক্ত আলোচনার ও বিরোধী নেতার বক্তব্য পরস্পরবিরোধী হলেও সকলেই যে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান। যে মুক্ত আলোচনার এক বক্তা বলেন, জোটের বিরোধিতা নাকি সংখ্যালঘুদের মনস্তাত্ত্বিক ইস্যু হিসেবে স্থান পেয়েছে। তিনি বলতে চেয়েছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সব সময় বিশেষ জোটে বা নৌকায় ভোট দেয়? ধানের শীষে কেন ভোট দেয় না? সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোন অধিকার ক্ষুণœ করেনি বরং সকল নাগরিকের অধিকার সংরক্ষিত আছে। গত জোট আমলে এ সকল সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী দেশে যখন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ প্রবাসীরা সোচ্চার ছিল তখন তাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। তখন তারা বলত জোট সরকারের ভাবমূর্তি বা দেশের বদনামের জন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বিদেশের কাছে অভিযোগ করছে।
’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও রাজনীতিতে পাকিস্তানী ধারা ফিরে আসায় সংখ্যালঘুদের আশা ভরসা সব কর্পূরের মতো উবে যায়। স্বাধীন দেশে ১৯৭৪ সালে শত্রু সম্পত্তি আইনকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বে-আইনী, নিষ্ক্রিয় ও অকার্যকর বলে রায় দেয়া সত্ত্বেও পরবর্তীতে সামরিক, বেসরকরী সরকারগুলো এই আইনের অপব্যবহার করে ১০ লাখ একরের ওপর ভূমি ইজারা দেয়। আর এই ইজারা গ্রহণকারী সরকারী দলের কিংবা জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা প্রভাবশালী সুবিধাবাদী লোকের সংখ্যাই বেশি। এ সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা প্রভাবশালীরা ইজারাকৃত ভূমি দখল নিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশ্রয় নেয়ায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ৬ মিলিয়ন লোকের দেশ ত্যাগ ঘটে, যার প্রমাণ রয়েছে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের গবেষণামূলক গ্রন্থসহ অন্যান্য গবেষকের বইয়ে। তারপর সামরিক শাসকগণ ক্ষমতার স্বার্থেও পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু রাষ্ট্রের মনোরঞ্জনের জন্য রাজনীতিতে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারই নয়, সংবিধানের তিলকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে চালু করেন। অপর শাসক জেনারেল এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করে রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক চরিত্রে রূপ দেন। পরবর্তীতে জোট সরকারের আমলে ধর্মীয় রাজনীতিতে ধর্মান্ধ ও উগ্রবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটে। যার খেসারত সমগ্রজাতির সাথে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও দিতে হয়। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় অপরাজনীতির বলির শিকার হয় এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়। ১৯৯০ ও ১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার দায় বাংলাদেশে যেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এসে পড়ে। আর তারই পরিণতিতে হিন্দুদের মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, বাড়ি ঘরে আগুন, লুটপাট ও নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কই তখন তো কিছু প্রগতিশীল ও বাম রাজনৈতিক দল ছাড়া জাতীয়ভাবে কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি? কিংবা পাল্টা বাধার বা মন্দির ভাঙ্গার জন্য যে সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী দায়ী ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়েছে বলে কোন প্রমাণ নেই। আর ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার দায়ে এখনও সে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিজিপি শীর্ষ নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত আদালতে হাজিরা দিতে হয়। সে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন আছে বলেই সেটা সম্ভব। ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে অকল্পনীয় নির্যাতন হয়। ৬ মে ২০০৯ সালে একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনে ২০০১ সালের নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তারপর ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়। কমিশন ঘটনার প্রায় সাড়ে ৯ বছর এবং কমিশন গঠনের প্রায় সোয়া এক বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের কাছে জমা দেন। ৫ খ-ের ওই প্রতিবেদনে লেখাচিত্রসহ সহিংসতার ধরন ও প্রকার, সহিংস ঘটনার কিছু উদাহরণ, কারণ ও পটভূমি, সার সংক্ষেপ, প্রাসঙ্গিক মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন। তদন্ত রিপোর্টে তুলে ধরা রিপোর্টে রাজনৈতিক দর্শনগত ভিন্নতা, সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় ও তখনকার বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। কমিশনের রিপোর্টে আরও বলা হয়, ওই নির্যাতনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা। কমিশনের প্রতিবেদনে সারাদেশে সংঘটিত ওই সব নির্যাতনের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ কয়েক জন নেতার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে ৫৫৭১টি। এর মধ্যে থেকে ৩৬২৫টি সহিংস ঘটনার তদন্ত করে কমিশন। কমিশনের তদন্ত করা ৩৬২৫টি ঘটনায় সাবেক জোট সরকারের ১৮ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক লোক জড়িত। তখন যদি বিরোধী দলের ঐ নেতাকে কমিশনের এ রিপোর্ট দেখিয়ে জবাব চাইতেন তিনি কি উত্তর দিতেন আমার জানা নেই। তবে জোট আমলের পুরো সময়টাই খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ বিএনপি নেতারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকারই করেনি বরং কৌশলে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। আর যারা প্রতিবাদ করেছে কিংবা সত্য খবর প্রকাশ করেছে তাদের সাজা দিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া চট্টগ্রামের নন্দীরহাট, সাতক্ষীরা ও ফতেহপুরের সাম্প্রদায়িক ঘটনায় আমরা কি দেখলাম? নন্দীরহাটের ঘটনায় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করল। গত ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে জামায়াতী উস্কানিতে কয়েক হাজার কওমি মাদ্রাসার ছাত্র কয়েকটি মন্দির, স্বর্ণের দোকানসহ ৮টি বসত বাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়া হয়। পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা এড়ানো যেত। ঘটনার সময় খবর দেয়া সত্ত্বেও দুইদিন পর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এই ঘটনার মাসাধিক পর সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জের ফতেহপুরে এক মিথ্যা ধর্মীয় ইস্যুকে পুঁজি করে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কয়েক হাজার যুবক প্রথমে ফতেহপুর ও একদিন পর চাকদহ গ্রামের ১৫টি ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়া হয়। এক্ষেত্রে জেলার এসপি ও থানার ওসির ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। নির্যাতিতরা যখন প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার জন্য ৫০০ গজ দূরে চৌরাস্তায় ৩০ জনের একটি পুলিশের দলের কাছে সাহায্যের আকুতি মিনতি জানিয়ে ব্যর্থ হয়। অভিযোগ আছে তাদের পক্ষপাতিত্বের। শুধু পুলিশের প্রতি অভিযোগ কেন? নন্দীরহাটে ক্ষমতাসীন দলের এমপিসহ বামদের শক্ত অবস্থান দেখা গেলেও ফতেহপুর বা চাকদহে তা লক্ষ্য করা যায়নি। নিউইয়র্কে এসে যে বিরোধীদলীয় নেতা এ সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের কথা বলে গেলেন, তিনি বা তার দলের শীর্ষ বা কোন কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী নন্দীরহাট, সাতক্ষীরা বা চাকদহে নির্যাতিতদের পাশে দেখা গেল না কেন? হয়ত রাজনৈতিক কারণেও হতে, পারে নাও হতে পারে। কিন্তু দাবিদার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন নির্যাতিতদের দেখতে গেলেন না? তিনি দুই জেলার পুলিশের এসপি, ওসি ও ডিসিকে স্ট্যান্ড রিলিজ ও কয়েকটি মামলা দায়ের করে দায়িত্ব শেষ করেছেন। রাজনৈতিক প-িতদের ধারণা, তিনি পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দিতেই হয়ত যাননি। কিন্তু লক্ষণীয় ভয়ের বিষয় হচ্ছে, যখন নন্দীরহাট, সাতক্ষীরা বা চাকদহের ঘটনায় জাতীয়ভাবে জোরালো প্রতিবাদ না হওয়াসহ প্রগতিশীল বা সুশীল সমাজের নির্লিপ্ততা দেখো টেলিভিশনের টকশোগুলোতে যখন দেখি সাগর-রুনী, ইলিয়াস আলী বা সুরঞ্জিতের ইস্যু নিয়েই মশগুল তখন জাতীয় এই সেনসেটিভ বিষয়ে তাদের নির্লিপ্ততা দেখে তুতাশ হই। আমার মনে হয়েছে এ দেশে সংখ্যালঘুদের দেখার বোধ হয় কেউ নেই।
এবার সাংবাদিক বন্ধুর কথায় আসি। একবার আমরা কয়েক বন্ধু জ্যাকসন হাইটে আড্ডা দিচ্ছি এক বন্ধু সালাম নামে কথা প্রসঙ্গে অপর বন্ধু রবিকে বলল, আরে তোরা তো বাংলাদেশে টাকা কামাই করে ইন্ডিয়াতে বাড়িঘর দালান বানাচ্ছিস। সাথে সাথে অপর বন্ধু মিঠু প্রতিবাদ করে বলেন, আরে কিছুক্ষণ আগে তুই সোনালী এক্সচেঞ্জে গিয়ে দেশে টাকা পাঠিয়েছিস। এখন যদি কোন আমেরিকান বা জন্ম সূত্রে আমেরিকান বাঙালী বলে তুমি কেন আমেরিকার এই দুরবস্থায় বাহিরে টাকা পাঠাচ্ছ? সে বিব্রত বোধ করল। একদিন এক রাজনৈতিক বন্ধু বাঙালীদের প্রতি হেইট ক্রাইমের প্রতিবাদে মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন। অথচ পরদিন বলে গালি দিলে এ আড্ডায় আমি প্রতিবাদ করে বলি, আপনি ভাইয়ের প্রতি হেইট ক্রাইম করে বিদেশীদের প্রতি কিভাবে হেইট ক্রাইমের প্রতিবাদ করবেন? আমি আরও তাকে বলেছিলাম আপনি তো হেইট ক্রাইম ইস্যু নিয়ে কাজ করেছেন কখনও কোন দিন বাংলাদেশের শত্রু আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন? একজন হিন্দু ভারতে চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা গেলে তার সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হবে, একজন মুসলমান ভারতে গিয়ে মারা গেলে বা লন্ডন আমেরিকা থাকলে তার সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হবে না তিনি লজ্জা পেয়ে ছিলেন। আমাদের দেশে সমাজের একটি অংশের মধ্যে সেই পাকিস্তান আমল থেকেই হিন্দুদের প্রতি এক ধরনের ম্যানিয়া জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে তাদের মধ্যে বিরাজ করেছে। এই ম্যানিয়া বা তাদের প্রতি অবজ্ঞাই হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ হিন্দু সম্প্রদায় বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কোন পথে? কিংবা তাদের লক্ষ্য? এই স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২-এর সংবিধান ছাড়া, হিন্দুরা কিছুই পায়নি। তাদের পূর্ব পুরুষের সম্পত্তি ফেরত পায়নি। বর্তমান আওয়ামী সরকার শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করে প্রত্যর্পণ আইন নামে পাস ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর যারা ভারতে চলে যায় তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। যদিও হিন্দু সম্প্রদায় এই আইনটির ব্যাপারে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। তথাপি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীরা যদি তাদের সম্পত্তি ফেরত পায় সেটা হবে কিছুটা ইতিবাচক দিন। সেই সঙ্গে পূর্বেই আমি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা উল্লেখ করেছি। এ সব নিয়ে আলোচনা করলেই দেখা যাবে হিন্দুরা প্রশাসন, পুলিশ সামরিক বাহিনী, পররাষ্ট্র ব্যবসাবাণিজ্য, ব্যাংক, বীমা, আমদানি রফতানি, শিক্ষা ইতাদি ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান কি? আমি এখানে আর পরিসংখ্যান দিতে চাই না। আমরা ১৯৭৪ জন গণনার ভিত্তিতে সর্বক্ষেত্রে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই রিজারভেশন চাই। এই রিজারভেশন চাই প্রশাসন পুলিশ, সামরিক বাহিনী, পররাষ্ট্র, ব্যবসাবাণিজ্য, ব্যাংক, বীমা আমদানি রফতানি, শিক্ষা ও সংসদসহ সকল ক্ষেত্রে। যে দল আমাদের অধিকার সংরক্ষণ করবে তাদেরই সমর্থন করব। আমরা কোন দলের লেজুরবৃত্তি করতে চাই না। আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির আপ্তবাক্যে হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রীস্টানরা বাঁচবে না। যদি না হিন্দুরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে ওঠে। আমরা এখন সংখ্যালঘু নই, সকলে বাংলাদেশী। এ উক্তি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সকলে বলছেন। এ বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানÑসংখ্যালঘু এসব সম্প্রদায়কে নিজ ভূমিতে পরবাসী করে রাখা তাদের ধর্ম, কৃষ্টি রাজনীতির বিলোপ সাধন এক পাহাড়ীদের মতো নিজস্ব জাতিসত্তা ধ্বংস করে কেবল বাংলাদেশী পরিচয়ের এক ধরনের দাস সম্প্রদায়ে পরিণত করা। এখানে ডান, বাম ও মধ্যপন্থী বলে কিছু নেই, আছে সুবিধাবাদী লুন্ঠনপন্থী।
আসুন দলমত নির্বিশেষে সকল হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান বসে আন্দোলন করে আমাদের সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করি। ঐক্য পরিষদ বা ঐক্য ফ্রন্ট এসব বুঝি না, চাই হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মুক্তি। তাই আমাদের সামনে এক বিরাট প্রশ্ন বাংলাদেশী সংখ্যালঘুরা তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধার করতে কোন পথে যাবে? প্রবহমান বিরোধিতার মুখে আমাদের ভূমিকা কি হওয়া উচিত? পুরোপুরি ’৭২-এর সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য চাই একাত্তরের মতো জাতীয় ঐক্য। ঐক্য চাই আমাদের দেশমাতৃকার নামে, মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের নামে, পিতৃপুরুষের নামে উত্তর পুরুষের নামে। গণতন্ত্রের ও সংবিধানের সকল দলের জাতীয় ঐক্য চাই। আসুন আমরা আত্মবীক্ষণ করি। বিশ্বের সকল প্রাণী ও জাতি সুখী হোক।

লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী

No comments

Powered by Blogger.