নীল জলরাশি আর হুমায়ূনের স্মৃতির টানে... by গিয়াস উদ্দিন

ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে এবার প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ঢল নেমেছিল পর্যটকদের। ৭০ দিন বন্ধ থাকার পর ঈদের দিন গত সোমবার টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে আবার জাহাজ চলাচল শুরু হয়। দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি পর্যটকেরা ভিড় জমিয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি ‘সমুদ্র বিলাস’ দেখতে।


দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ এ নৌপথে কেয়ারি সিন্দাবাদ ও এলসিটি কুতুবদিয়া নামের দুটি জাহাজকে সারা বছর চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু গত ১০ এপ্রিল এলসিটি কুতুবদিয়া ও ১১ জুন কেয়ারি সিন্দাবাদ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে এত দিন এ রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ঈদের দিন থেকে আবারও জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।
কেয়ারি সিন্দাবাদের টেকনাফের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাহাজ চলাচল প্রায় ৭০ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। মেরামতের কাজ শেষে ঈদের দিন থেকে পুনরায় এ রুটে জাহাজটি চালু করা হয়েছে।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনে সমুদ্রসৈকতে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকেরা। অনেকেই হোটেল-মোটেলে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন। লম্বা ছুটির কারণে বহু পর্যটক নিরিবিলি ছুটি কাটাতে সেন্ট মার্টিনকে বেছে নিয়েছেন।
ময়নামতি গেস্টহাউসের মালিক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, এবার পর্যটকের উপস্থিতি অন্যবারের তুলনায় বেশি ছিল। রোজার শুরুতে অধিকাংশ হোটেল-কটেজে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। রুটের ছয়টি জাহাজের সবগুলো চলাচল করলে পর্যটক আরও বেড়ে যাবে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, তাঁরা কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি সমুদ্র বিলাস ঘুরে দেখেছেন। জেনেছেন তিনি এখানে পূর্ণিমার রাতে জ্যোৎস্না দেখতে দেখতে উপন্যাস লিখতেন। হুমায়ূন আহমেদের এই বাড়িটির কারণে অনেকেই এখন সেন্ট মার্টিন আসতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তাঁরা জানান।
সমুদ্র বিলাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিক ও মো. ওসমান বলেন, ঈদের দিন থেকে পর্যটকেরা ভিড় করছেন সমুদ্র বিলাস দেখতে। ছবি তোলার পাশাপাশি পর্যটকেরা এখানে হুমায়ূন আহমেদের নানা স্মৃতির কথা জানতে চাইছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে হুমায়ূন আহমেদ সর্বপ্রথম বাঁশের বেড়া ও টিন দিয়ে এখানে বাড়ি নির্মাণ করেন। তখনো এ দ্বীপে কোনো কটেজ ও হোটেল নির্মাণ হয়নি।
সমুদ্র বিলাসের ইজারাদার ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সর্বপ্রথম বাড়িটি বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করে সমুদ্র বিলাস আনন্দ আশ্রম নামে ইজারা নিলেও এখানে লেখকের জীবনস্মৃতি ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে জাদুঘর তৈরির কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিত বইয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে দারুচিনি দ্বীপ, কোথাও কেউ নেই, আমার আছে জল, হিমুর মধ্য দুপুর, মিসির আলি আপনি কোথায়, শ্রাবণ মেঘের দিন—নামের ছয়টি কটেজ ও শঙ্খনীল কারাগার নামে একটি খাবার হোটেল আছে। এই বাড়ির পাশের সৈকত এলাকার নাম রাখা হয়েছে নুহাশ পয়েন্ট।

No comments

Powered by Blogger.