পলাতক খুনীদের ফাঁসি চাই দ্রুত বিচার চাই যুদ্ধাপরাধীদের- জাতীয় শোক দিবসে শোকার্ত মানুষের ঢল

শোকাচ্ছন্ন নীরবতায় যেন থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ। ৩৭ বছর আগের ভয়াল এক রাতের শোকাবহ স্মৃতি স্মরণ করেছে বাংলাদেশ। আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, মাঝে মধ্যেই জাতির কান্না হয়ে ঝরছিল। শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতি বিনম্রচিত্তে স্মরণ করল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।


বিদেশে পালিয়ে থাকা জাতির জনকের ছয় খুনীকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি ছিল প্রচ-, সর্বত্র।
বুধবার নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। এবারের শ্রদ্ধা জানাতে আশা শোকার্ত মানুষের স্রোত অতীতের সকল রেকর্ডকে ম্লান করে দেয়। গভীর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র শোকার্ত লাখ লাখ মানুষের কণ্ঠে ছিল একই দাবি ও সেøাগানÑ “কে বলেছে মুজিব নাই, মুজিব আছে সারা বাংলায়, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর কর, যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার চাই।”
ধানম-ির ৩২ নম্বর ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশাসহ সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল, শহরজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে শোকের পোস্টার, সর্বত্র শোকের তোরণ, কালো পতাকা, বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই ভাষণ ও স্মৃতি জাগানিয়া দেশাত্মবোধক গানে বুধবার জাতীয় শোক দিবসে রাজধানীর পরিবেশটাই পাল্টে গিয়েছিল।
স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা- দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ধানম-ির বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনের লেকের পাড়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা হাজারো শোকার্ত মানুষের ভিড়। ইলেকট্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদনে ব্যস্ত সবাই। সেই ভিড়ের এক কোনায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দেয়াল ঘেঁষে স্থাপন করা পূর্বের জাতির জনকের কাচে ঘেরা প্রতিকৃতির সামনে অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে এক অশীতিপর বৃদ্ধ অপলক তাকিয়ে আছেন স্বাধীনতার এ স্থপতির দিকে। তাঁর দু’ চোখেই বাঁধভাঙ্গা অশ্রু। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওই বৃদ্ধের আর্তনাদÑ “শুধু আমি নই, লজ্জা থেকে গোটা জাতিরই কাঁদা উচিত। এ মানুষটি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের স্বাধীন দেশ দিলেন, ভাষা দিলেন, স্বাধীন পতাকা ও মানচিত্র দিলেন। সারাজীবন শুধু কষ্টই করে গেলেন এ জাতির জন্য। অথচ আমরা কত বড় অকৃতজ্ঞ জাতিÑ এমন মহাপুরুষকে হত্যা করলাম। বাঁচতে দিলাম না তাঁর স্ত্রী-পুত্রসহ কাউকে। এ সীমাহীন লজ্জা ও কলঙ্ক বাঙালীর ললাট থেকে কোনদিনই মুছবে না।”
এ রকম সাধারণ গৃহিণী, ছিন্নমূল মানুষ থেকে সব শ্রেণীর, সব বয়সের লাখ লাখ মানুষ ব্যথাতুর হৃদয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতির পিতাকে। বিশেষ করে বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সব হারানোর বেদনার্ত অশ্রু সবাইকে আবেগতাড়িত করে।
জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবসে সারাদেশই যেন শোকের লাখ লাখ কালো ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে ঢেকে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন এবং টুঙ্গিপাড়ার মাজারস্থল হয়ে উঠেছিল শোকার্ত লাখো মানুষের মিলন-মোহনা। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলেও আদর্শিক বঙ্গবন্ধু যে চিরঞ্জীব, মৃত্যুঞ্জয়ী, তা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া দেশের পথে-প্রান্তরে শ্রদ্ধা জানাতে আসা শোকার্ত মানুষের অস্বাভাবিক ঢল আবারও তা প্রমাণ করেছে প্রায় তিন যুগ হয়ে গেল বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের। ভোলেনি সেই বজ্রকণ্ঠের মহামানবকে। যিনি শুনিয়েছিলেন সেই অমর বাণী “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
অগণিত মানুষের হৃদয়ের আবেগ, প্রগাঢ় শ্রদ্ধা আর ১৯৭৫ সালের সেই ভয়ঙ্কর কালরাতের বেদনাবিধূর স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে বুধবার সারাদেশে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হয় জাতীয় শোক দিবস। দিনভর কৃতজ্ঞ বাঙালীর শ্রুদ্ধা আর ভালবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠেছিল ধানম-ির ৩২ নম্বর জাতির জনকের প্রতিকৃতি, টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর মাজার এবং বনানীস্থ ১৫ আগস্টের শহীদদের সমাধিস্থল।
জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাদের নিয়ে ফুল দেন শেখ হাসিনা। পরে জাতীয় সংসদের স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিন বাহিনীর প্রধানগণও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল বঙ্গবন্ধুর প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মহিউদ্দীন খান আলমগীর, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ওবায়দুল কাদের, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, নুুরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নূহ-উল-আলম লেনিন, অসীম কুমার উকিল, মৃণাল কান্তি দাস, মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আকতারুজ্জামান, আবদুর রহমান, আফজাল হোসেন, আবদুল মতিন খসরু ও এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
এবার অনেকটা ভিন্ন আবহে পালিত হলো জাতীয় শোক দিবস। হাজার হাজার শোকের তোরণ, কালো ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা, পোস্টারে ছেয়ে যায় দেশের পথ-প্রান্তর। পঁচাত্তরের পর রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশেই প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, গ্রাম-মহল্লায়, হাটে-বাজারে কৃতজ্ঞ বাঙালীর শোক পালনের এত ব্যাপক আয়োজন এবারই প্রথম। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, সারাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ, সংগঠন এবার বিস্তারিত কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছেন স্বাধীনতার এই মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
দিনব্যাপী শহরজুড়ে মাইকে প্রচারিত হচ্ছিল কোরান তেলাওয়াত এবং এর ফাঁকে ফাঁকে অবিরাম দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গান : ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা...’, ‘একটি বাংলাদেশ সাড়ে সাত কোটি জনতা...’, ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি...’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়/হবে হবে হবে/ হবে নিশ্চয়...’ প্রভৃতি গান। এছাড়া মাইকে উচ্চারিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত বজ্রকণ্ঠের সেই ৭ মার্চের ভাষণ। এবার জাতীয় শোক দিবসের দলীয় আয়োজনকে বহুগুণে ছাপিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের আয়োজন। শহরের প্রত্যেক পাড়া মহল্লায়, সড়কের পাশ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়েছে খানিক পর পরই কালো ব্যানার, কালো পতাকা উড়িয়ে চলছে মিলাদ মাহফিল, দোয়াখায়ের-ইফতার ও গণভোজের।
সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যই ভরে ওঠে পুরো ৩২ নম্বর সড়ক। কালো ব্যানার হাতে ও বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। সকলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির জনককে স্মরণ করে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষরা শ্রদ্ধা জানান। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মাঝেও জোরাল কণ্ঠে উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধুর পালাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকলকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উš§ুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর একে একে মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বুধবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে বনানী কবরস্থানে এসে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ করেন।
এরপর সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকা ছোটবোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাদ জোহর টুঙ্গিপাড়ায় দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আছর দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ মাহফিল ও ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ১৫ আগস্ট জাতির জনককে প্রাণ বাঁচাতে আসা তাঁর সামরিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা শহীদ শেখ জামিলের সামরিক গোরস্থানের কবরেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রাজধানীসহ সারাদেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশে দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
সরকারী টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ ও ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা নিজেদের কর্মসূচী পালন করছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও ঐতিহাসিক এই দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করে।
ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার সংগ্রাম (১৯৪৭-১৯৭৫)’, ‘ফিরে দেখা : দাহকাল (১৯৭৫-২০০৯)’ ও ‘আবহমান বাংলা ও দিনবদলের সরকার’, ‘দেশরতœ শেখ হাসিনা: মানবমুক্তির অনন্য অভিযাত্রী’ শীর্ষক ছাত্রলীগ যে আলোকচিত্রের আয়োজন করে তা সকলের দৃষ্টি কাড়ে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা শোকার্ত অনেক মানুষই এ আলোকচিত্র দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। বিশাল এই আলোকচিত্রতে স্থান পাওয়া প্রতীকী ঘৃণাস্তম্ভেও ছিল শোকার্ত মানুষের ভিড়। এই প্রতীকী ঘৃণাস্তম্ভে থুথু নিক্ষেপ করে হাজারো শোকার্ত মানুষ বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা-ধিক্কার জানিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকে ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক ৪ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নৌবাহিনীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং নৌবাহিনীর বিভিন্ন মসজিদসমূহে কোরান তেলাওয়াত ও বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দিবসটির গুরুত্ব এবং প্রকৃত ইতিহাস স্মৃতিচারণের লক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’, ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ এবং ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে তিনটি প্রামাণ্যচিত্র নৌবাহিনীর সকল জাহাজ ও ঘাঁটিতে প্রদর্শিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর মাজারে দুই কন্যা

ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বনানীর কবরস্থানের সারি বাঁধা ১৮টি কবর। এসব কবর আর কারোর নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নরপিশাচ ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিহত বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শিশুপুত্র রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। ৩৭ বছর আগে ঘাতকদের বন্দুকের নলের মুখে স্বজনদের চোখের জলে শেষ বিদায়টুকু দিতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। কেঁদে কেটে ক্লান্ত মুখে আলতো হাতের ছোঁয়া পায়নি ছোট্ট রাসেলও।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনে যে স্থানটিতে নরপিশাচ কাপুরুষ ঘাতকদের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন জাতির জনক, সেই রক্তমাখা সিঁড়িতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় চোখের জল থামিয়ে রাখতে পারেননি একসঙ্গে সব স্বজনহারা বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়েও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তাঁরা অশ্রুসিক্ত নয়নে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দেয়ার পর মোনাজাত ও ফাতেহা পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুর এই দুই কন্যা নিজ হাতে মুঠো মুঠো ভালবাসার ফুল ছড়িয়ে দেন সেখানে। পরে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা টুঙ্গিপাড়ার বাড়ির একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন।
সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকালে আয়োজন করা হয় সর্বধর্ম প্রার্থনাসভা। বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনায় পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত করেন আলহাজ হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন ইঞ্জিনিয়ার মানস মিত্র, পবিত্র বাইবেল পাঠ করেন ফাদার এল এন গোমেজ এবং ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারের কল্যাণ জ্যোতি ভিক্ষু। প্রার্থনা শেষে বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা
সকাল থেকেই শোকার্ত মানুষের ঢল নামে ধানম-ির ৩২ নম্বর এবং বনানী কবরস্থান। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও মইনুদ্দিন খান বাদলের নেতৃত্বে জাসদ, শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি-জেপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারাও শ্রদ্ধা জানান জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে। শ্রদ্ধা জানান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ে গড়ে ওঠা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনু এমপির নেতৃত্বে জাসদ, দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী দল, মফিজুল হক বেবু ও এজাজ আহমেদ মুক্তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জেপি। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, তাঁতি লীগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকার জেলা প্রশাসক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ফিল্ম আর্কাইভ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমী, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমী, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বন অধিদফতর, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহিলা সংস্থা, মহিলা শ্রমিক লীগ, তরুণ লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতি লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, ঢাকা সিটি করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, গণপূর্ত শ্রমিক লীগ, মোটরচালক লীগ, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযুদ্ধ প্রজš§, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী প্রজš§ লীগ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক প্রভৃতি ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, ছিন্নমূল হকার্স লীগ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, ঢাকাস্থ টুঙ্গিপাড়া সমিতি, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্মৃতি পরিষদ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, সাধনা সংসদ, আওয়ামী শিশু-কিশোর যুব জোট, নির্মাণ শ্রমিক লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, জননেত্রী পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমী, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ, বিসিএস পাবলিক ওয়ার্কার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, টেলিযোগাযোগ শ্রমিক ইউনিয়ন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা নৌবন্দর ঘাট শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ শান্তি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমী, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজš§, স্বাধীনতা ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ, বৃহত্তর ফরিদপুর চাকরিজীবী কল্যাণ সমিতি, গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি, নৌকার নতুন প্রজš§, আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদ, খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন, বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ, ডিপ্লোমা নার্সেস এ্যাসোসিয়েশন, সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন, বঙ্গরতœ ফাউন্ডেশন, চিলড্রেন্স ভয়েস, সনাতন আইনজীবী কল্যাণ পরিষদ, সাধনা সংসদ, প্রশিকা, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, আবদুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু ফেডারেশন, টিএ্যান্ডটি শ্রমিক ফেডারেল ইউনিয়নসহ অজস্র বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।

No comments

Powered by Blogger.