দীর্ঘ ছুটিতে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা- কর্তৃপক্ষ বলছে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে by নিখিল মানখিন

দীর্ঘ ছুটির কারণে সরকারী চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হতে পারে। এমনটি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনরা। বুধবার থেকে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে জাতীয় শোক দিবস, পবিত্র শব-ই-কদর, ঈদ, সাপ্তাহিকসহ টানা ১১ দিনের সরকারী ছুটি।
সরকারী ছুটির সময় কর্মস্থলে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি না থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, অপারেশনসহ জরুরী চিকিৎসাব্যবস্থাও স্বাভাবিক থাকে না। চিকিৎসক ও নার্সের দেখা পান না চিকিৎসাধীন রোগীরা। স্বাভাবিক চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগীর মৃত্যু হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তবে ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ চিকিৎসাব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মোঃ সিফায়েত উল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, ছুটির দিনগুলোতে সরকারী হাসপাতালে বিশেষ চিকিৎসাব্যবস্থা চালু থাকবে। চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে না। প্রতিটি হাসপাতালে ইতোমধ্যে বিশেষ চিকিৎসা টিম গঠন করা হয়ে গেছে বলে দাবি করেন মহাপরিচালক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদ, সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি মিলিয়ে আগস্ট মাসে সরকারী ছুটি ১৫ দিন। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে টানা এগারো দিন ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন সরকারী চাকরিজীবীরা। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস দিয়ে শুরু হয়েছে টানা সরকারী ছুটি। এরপর ১৬ আগস্ট পবিত্র শব-ই-কদরের ছুটি। ১৭ ও ১৮ আগস্ট সাপ্তাহিক ছুটি। আর সরকারীভাবে ঘোষিত ঈদের ছুটি ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট। টানা সাত দিনের সরকারী ছুটি। ২২ ও ২৩ আগস্ট অফিস খোলার দু’দিন সরকারী চাকরিজীবীরা ছুটি নিতে পারলে ২৪ ও ২৫ আগস্ট সাপ্তাহিক ছুটি উপভোগ করতে পারবেন। মূলত ১১ দিনের ছুটি কাটাবেন সরকারী চাকরিজীবীরা। সরকারী বর্ষপঞ্জি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি মাসের ছুটি শুরু হয় সাপ্তাহিক ছুটির মধ্য দিয়ে ৩ ও ৪ আগস্ট। এরপর ৯ আগস্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব শুভ জন্মাষ্টমী পালিত হয়। ১০ ও ১১ আগস্ট দু’দিন থাকে সাপ্তাহিক ছুটি। সব মিলিয়ে এ মাসে ১৫ দিন ছুটি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনরা স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি নিয়ে সংশয়ে আছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ৩২ নং ওয়ার্ডে ১ সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন আছেন আবুল হোসেন। সড়ক দুর্ঘটনায় শরীরের বেশকিছু অংশে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন তিনি। তাঁকে আরও বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় তাঁর বাসা। চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি এবার গ্রামের বাড়িতে যেতে পারছেন না। ছুটির দিনের চিকিৎসাসেবার সমালোচনা করে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ছুটির দিনে চিকিৎসক ও নার্সদের পাওয়া যায় না। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই যে অবস্থা হয়, দীর্ঘ ছুটির দিনগুলোতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই বলে মনে করেন আবুল হোসেন। শুধু আবুল হোসেন নন, প্রায় সব ক’টি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের স্বজনরাই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা চালু রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসক-কর্মচারী ছুটি ভোগ করায় প্রতিবারই ঘটে এমন বিপত্তি। হাসপাতালগুলোতে এ সময় বিশেষ ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা থাকলেও তা হয়ে থাকে একেবারেই নামমাত্র। এ সময় সাধারণত অন্য ধর্মের অনুসারী চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীদের দিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থা সচল রাখা হয়। ফলে ঈদের সময় বহু রোগী হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি চলে যায়। এবারও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের কেউ কেউ এরই মধ্যে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এছাড়া একটানা ১১ দিন হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলে মানুষ আরও ভোগান্তির মুখে পড়বে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল মজিদ ভুঁইয়া বিগত দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, চিকিৎসাসেবা কোন অবস্থাতেই ব্যাহত হবে না। এ বিষয়ে প্রতিবছরই সজাগ থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, ছুটির দিনগুলোতে সব হাসপাতালেই বিশেষ চিকিৎসাব্যবস্থা চালু থাকে। জরুরী টিম কাজ করে। এ নিয়ে রোগীদের চিন্তার কিছু নেই। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও আরও সজাগ থাকতে হবে। যেসব হাসপাতালে চিকিৎসক তুলনামূলক কম, সেসব হাসপাতালের প্রয়োজনে চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা যেতে পারে। এছাড়া যারা জরুরী টিমে দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁরা যেন কোনভাবেই অবহেলা না করেন। এবার দীর্ঘদিন ছুটি থাকায় উভয় পক্ষকেই সজাগ থাকতে হবে বলে জানান অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।

No comments

Powered by Blogger.