বিরামপুর-হিলি স্থলবন্দর সড়ক- অর্থাভাবে পুনর্নির্মাণ কাজ বন্ধ

অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর-বিরামপুর সড়কের পুনর্নির্মাণ ও মেরামতকাজ। এ কারণে হিলি স্থলবন্দরের চার কিলোমিটার সড়ক চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম।


ফুলবাড়ী সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কানাই চন্দ্র দেবনাথ জানান, দিনাজপুর সওজের জরুরি পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় গত ২০১০-১১ অর্থবছরে হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর থেকে বিরামপুর উপজেলার রেলগুমটি পর্যন্ত সোয়া ১০ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং তুলে নতুন করে সড়ক নির্মাণ ও মেরামতকাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কাজটি পায় চট্টগ্রামের ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজটি শুরু করেননি। কর্তৃপক্ষ চাপ দেওয়ায় প্রায় দুই বছর পর গত এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করেন। কিছুদিন কাজ করার পর নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে ওই ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিনিধি শরিফুল আহসান বলেন, ‘অর্থের অভাবে গত এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করা হয়। ইট-বালুসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। তার পরও কাজ করতে হয়েছে। আমরা এক কোটি ১০ লাখ টাকার কাজ করার পর মাত্র ২৬ লাখ টাকা বিল পেয়েছি। এ কারণে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। এখনো যদি সরকার অর্থ বরাদ্দ দেয়, তাহলে কাজ করতে সমস্যা নেই।’ দিনাজপুর সওজ বিভাগের গাফিলতির কারণে আজ সড়কগুলোর এই করুণ দশা।
১২ আগস্ট সরেজমিনে দেখা গেছে, বিরামপুর রেলগেট থেকে হিলি স্থলবন্দরে যেতে ডাঙ্গপাড়া হয়ে বিজিবি বাসুদেবপুর ক্যাম্প পর্যন্ত পুরো সড়কের অবস্থা বেহাল। কার্পেটিং তোলা রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত হয়েছে। বিজিবি বাসুদেবপুর ক্যাম্প থেকে হিলি স্থলবন্দরে যাওয়ার এক কিলোমিটার আগ পর্যন্ত রাস্তা ভালো থাকলেও এর পর থেকে শুরু করে পুরো স্থলবন্দর এলাকার রাস্তা বেহাল।
ট্রাকচালক মজিবুর রহমান জানান, বন্দরের রাস্তা খারাপের কারণে প্রতিনিয়ত ট্রাকের কোনো না কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছেই। ভারতীয় ট্রাকচালক সমেন রায় জানান, আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাক চালিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে এপারে আসতে হচ্ছে। বাসচালক সাইফুল আলম জানান, ভাঙাচোরা সড়ক আর যানজটে হিলি থেকে আসা-যাওয়া করতে জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। প্রায় একই ধরনের কথা জানালেন ট্রাকচালক মজিবুর রহমান, বন্দরের আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম, হিলি স্থলবন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত কুমার চক্রবর্তীসহ কয়েকজন।
দিনাজপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু এহতেশাম রাশেদ বলেন, টাকা আছে কি না, তা ঠিকাদারের দেখার দরকার নেই। কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে একাধিকবার পত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সোয়া ১০ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার কাজ করেছেন। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার অজুহাতে তাঁরা কাজ বন্ধ রাখতে পারেন না। তাঁরা কাজ করে বিল দাখিল করতে পারতেন। এ ব্যাপারে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র দেওয়া হবে। তবে বর্ষার আগে হিলি থেকে বিরামপুর পর্যন্ত অবশিষ্ট আট কিলোমিটার সড়কের কাজ হচ্ছে না। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.