সেলিম আল দীন উৎসব- ইতিহাস-ঐতিহ্যের মেলবন্ধন

ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে রাজধানীর রাস্তাঘাট এখনো বেশ ফাঁকা। পথে যানবাহনের সংখ্যা কম। কিন্তু গতকাল শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণে ছিল প্রচুর জনসমাগম আর আনন্দঘন পরিবেশ। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৬৩তম জন্মদিন উপলক্ষে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী উৎসব।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ও নাটক দেখতে এসেছিলেন নগরের নাট্যামোদী দর্শকেরা। নতুন-পুরোনো নাট্যকর্মী, নির্দেশকেরাও এসেছিলেন উৎসবে।
উৎসবের কর্মসূচিতে এবার নাটক, সেমিনার, সম্মাননা প্রদান ছাড়াও সংযোজিত হয়েছে উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। জাতীয় নাট্যশালার সামনের লবিতে সেলিম আল দীনের প্রতিকৃতির সামনে ফুলের পাপড়ি ছড়ানো। সিঁড়ির ধাপে ধাপে জ্বালিয়ে রাখা প্রদীপ। দেয়ালের পাশ দিয়ে উয়ারী-বটেশ্বরে খনন করে পাওয়া প্রত্ননিদর্শনের ডিজিটাল ছবির বোর্ড। ভেতরে কাচের আচ্ছাদনের ভেতর রাখা কাচের পুঁতি, মৃৎফলকসহ নানা ধরনের নিদর্শনের নমুনা। দর্শকেরা নাটক শুরুর আগে বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছিলেন সেসব নিদর্শন।
এবারের সেলিম আল দীন উৎসবের শিরোনাম ‘তোমার সম্মুখে অনন্ত মুক্তির অনিমেষ ছায়াপথ: উয়ারী-বটেশ্বর শেকড়ের সন্ধানে আমাদের যাত্রা’। সেলিম আল দীন তাঁর নাট্যচর্চায় ছিলেন বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়সন্ধানী। তাই তাঁর জন্মদিনের উৎসবে এবার মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে প্রত্নখননে পাওয়া অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্যের নিদর্শনকে। সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন, শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা থিয়েটার ও গ্রাম থিয়েটার এই উৎসবের আয়োজক।
উৎসবের উদ্বোধন করেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, সেলিম আল দীন যখন বয়সে তরুণ, তখন এ দেশ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছিল। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে এসব বিষয়ের মোকাবিলা করেছেন। তিনি প্রথম নাট্যকোষ রচনা করেন। তিনি নিজেকে অবসর দেননি। অক্লান্তভাবে নাট্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মাধ্যমে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, সেলিম আল দীন উৎসবে এবার নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হয়েছে। তিনি যে শিকড়ের সন্ধান করতেন, তার কিছু নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে উয়ারী-বটেশ্বরের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্য দিয়ে। এই উৎসবে সেলিম আল দীনের নির্দেশিত বিভিন্ন নাটকের সঙ্গে বেশ কয়েকজন তরুণ নির্দেশকের নাটক দেখানো হচ্ছে, যাঁরা সেলিম আল দীনের আদর্শে কাজ করছেন।
উৎসব উদ্যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘প্রতিবছর সেলিম আল দীনের জন্মোৎসবে আমরা একটি বিশেষ বিষয়কে উৎসবের সঙ্গে সংযোজিত করি। এবার উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শনকে নির্বাচন করে উৎসবের সঙ্গে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বন্ধন সৃষ্টি করা হয়েছে। সেলিম আল দীন যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তার পথ ধরে তরুণ প্রজন্মকে এগোতে হবে।’ অনুষ্ঠানে প্রত্নতত্ত্ববিদ সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ বক্তৃতা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা জাতীয় নাট্যশালার বাইরে উয়ারী-বটেশ্বরের বিভিন্ন ধরনের নিদর্শনের সমন্বয়ে আয়োজিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। প্রাচীন আমলের ধাতব মুদ্রা, মাটির পাত্র, অলঙ্কার, অস্ত্রসহ আরও বিভিন্ন ধরনের নিদর্শন দেখা যাবে এখানে। প্রদর্শনীস্থলে প্রথমা প্রকাশনের স্টলে সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের লেখা উয়ারী-বটেশ্বর: শেকড়ের সন্ধানে বইটি পাওয়া যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জাতীয় নাট্যশালায় ঢাকা থিয়েটার মঞ্চস্থ করে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক দ্য টেম্পেস্ট। এর নির্দেশনা দিয়েছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রুবাইয়াত আহমেদ। একই দিন পরীক্ষণ থিয়েটারে দৃষ্টিপাত নাট্যদল মঞ্চস্থ করে সফোক্লিসের ইডিপাস অবলম্বনে রাজা হিমাদ্রী নাটকটি। নাটকটির মূল অনুবাদ করেছেন শম্ভু মিত্র, রূপান্তর এবং নির্দেশনা দিয়েছেন খন্দকার তাজমি নূর।
আজ রোববার জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে হবিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নাটক জ্যোতিসংহিতা ও পরীক্ষণ থিয়েটারে হবে প্রাচ্যনাট ঢাকার রাজা...এবং অন্যান্য। উৎসব চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.