না-গঞ্জে ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে মা ও মেয়ের জবাই করা লাশ উদ্ধার- সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী-কন্যা খুন

শহরের জনাকীর্ণ আবাসিক এলাকা পাইকপাড়ার বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাট থেকে মা ও মেয়ের জবাই করা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে নিহত মারিয়া আক্তার (৪৬) ও তার মেয়ে সাদিয়া আক্তারের (১২) লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত মারিয়া আক্তার সৌদি প্রবাসী আহম্মেদ আলীর স্ত্রী।


সাদিয়া আক্তার শহরের আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। মা ও মেয়ের হত্যার ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, শহরের পাইকপাড়া আমিনা মঞ্জিল আব্দুল করিম ভূঁইয়া বাবুর বাড়ির দোতলার একটি ফ্ল্যাটে গত এক বছর আগে থেকে ভাড়া নিয়ে থাকে সৌদি প্রবাসী আহম্মেদ আলীর স্ত্রী মারিয়া আক্তার ও তার মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১২)। গত দু’দিন ধরে সৌদি আরব থেকে আহম্মেদ আলী তার স্ত্রী মারিয়া আক্তারের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা ফোন করে পাননি। এতে তার মনে সন্দেহ হয়। বুধবার সকালে তিনি বন্দর নবীগঞ্জ এলাকার তার ছোট ভাই জসিমউদ্দিনকে তার বাসায় পাঠান। বুধবার বিকেলে জসীম উদ্দিন তার ভাইয়ের বাড়িতে এসে দেখেন বাইরে থেকে ঘর তালা বন্ধ। কিন্তু বারান্দার দরজা খোলা। এসময় ঘর থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে পৃথক দুটি ঘরের বিছানায় মা ও মেয়ের জবাই করে লাশ উদ্ধার করে। প্রবাসী আহম্মেদ আলীর বাড়ি বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জে। মারিয়া আক্তারের বাবার বাড়ি সদর উপজেলার ডিক্রির চর কুড়ের পাড় এলাকায়। এদিকে মারিয়া ও তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার খবর পেয়ে স্বজনেরা ছুটে আসে। তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
নিহত মারিয়ার দেবর জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তার ভাই আহম্মেদ আলী ১৮ বছর যাবত সৌদি প্রবাসী। তার ভাবী ও ভাতিজী ৮ বছর যাবত শহরের পাইকপাড়া এলাকাতেই ভাড়া থাকেন। দেড় বছর আগে তার ভাই দেশে এসেছিলেন। বুধবার সকালে তার ভাই আহম্মেদ আলী তাকে ফোন করে তার বাসায় খোঁজ নিতে বলেন। তার ভাই আহম্মেদ আলী তাকে জানান, রোববার রাতে শেষ কথা হয় ভাবির সঙ্গে। মঙ্গলবার ও বুধবার সারাদিনে কয়েক দফা মোবাইল ফোন করেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি প্রথমে ফ্ল্যাটে এসে দেখেন তালা মারা। তার ধারণা ছিল, ভাবী ও ভাতিজী স্কুলে গেছেন। স্কুলে গিয়ে খোঁজ নেন তিনি। পরে সেখানে না পেয়ে তিনি আবার বাসায় ফিরে আসেন। তিনি জানালার সামনে দাঁিড়য়ে গন্ধ পান। এতে তার মনে সন্দেহ জাগে। খবর দেন পুলিশকে। বাড়ির মালিক আব্দুল করিম ভূঁইয়া বাবু জানান, সোমবার বিকেলে মারিয়ার ফ্ল্যাটে উচ্চস্বরে কাওয়ালী গান বাজানো হয়। পরে আশপাশের ভাড়াটিয়ার তার কাছে নালিশ দিলে তিনি গিয়ে গান বন্ধ করে দেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের জানান, মা ও মেয়েকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। মায়ের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মেয়ের লাশের পাশে একটি রক্তমাখা ছুরি পাওয়া গেছে। এছাড়াও একটি রক্ত মাখা লুঙ্গি ও অব্যবহৃত একজোড়া হ্যান্ডগ্লাভস পাওয়া গেছে। মা মারিয়া আক্তারের পা ছিল বাধা। লাশ পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, দু’দিন আগে দুর্বৃত্তরা মা ও মেয়েকে জবাই করে হত্যা করেছে। প্রাথমিকভাবে ঘরের পরিবেশ ও হত্যার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে এটা কোন ছিনতাই বা ডাকাতির ঘটনা নয়। হত্যাকারীরা পূর্ব পরিচিত। এবং ওই বাসায় তাদের যাতায়াত ছিল। কী কারণে এই নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মোবাইল ফোনের কললিষ্ট ও উদ্ধার হওয়া ছুরির ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষার খুনীদের শনাক্ত করা যাবে বলে আমরা ধারণা করছি। এ ব্যাপারে সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়েছেন। সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল আসার পর ময়না তদন্তের জন্য লাশ উদ্ধারের পর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.