সাগরপারে ঈদ আনন্দ by শিহাব জিশান

ঈদের দিন সকাল থেকে কখনো টিপটিপ, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি। কোথাও বের হওয়াটা মুশকিল হয়ে পড়ে। ঈদের আনন্দ বুঝি মাটি হয়ে গেল! কিন্তু ঈদের পরদিন মঙ্গলবারের সকাল ছিল অন্য রকম। রোদ ঝলমলে দিন। তাই নগরবাসী একটু প্রশান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। বরাবরের মতোই পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতেই ছিল উপচে পড়া ভিড়।


মানুষের স্রোত যেন মিশেছে পতেঙ্গা সৈকতে। ছুটির প্রথম তিন দিনেই দর্শনার্থীর সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়িয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা।
পরিবার নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন ব্যবসায়ী কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সাগর আমাকে সব সময় কাছে টানে। পরিবার নিয়ে ঈদের সময় এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে।’
দর্শনার্থীদের বাঁধভাঙা জোয়ারে ঈদের বন্ধের তিন দিনই যেন ছিল উৎসবের আমেজ। সৈকতপারের দোকানগুলোতে বিক্রি জমজমাট। এবার পতেঙ্গা সৈকতে ঈদ উপলক্ষে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। আচার, শামুক ঝিনুকের গয়না, বার্মিজ স্যান্ডেল, চুড়ি-ফিতা—কী নেই এখানে। কেউ কেনাকাটায় ব্যস্ত। খাওয়ার দোকানগুলোতে রীতিমতো লাইন দিয়ে খেতে হচ্ছে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির জন্য ঈদের দিন বেচাকেনা কম থাকলেও পরের দিনগুলোতে বিক্রি হয়েছে ভালো।
বেশির ভাগ মানুষই সাগরের সঙ্গে মিতালি পাতার দৃশ্য ফ্রেমে বন্দী করেছেন ক্যামেরা আর মুঠোফোনে। যাঁদের সেই সুযোগ ছিল না, তাঁদের জন্য ছিল বিকল্প ব্যবস্থা। ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীরা দারুণ ব্যস্ত ছিলেন পর্যটকদের ফরমায়েশ অনুযায়ী ছবি তোলা ও ১০ মিনিটের মধ্যে সরবরাহের কাজে।
এদিকে সৈকতের বিচবাইক ও ঘোড়ায় চড়ার জন্যও ছিল মানুষের দীর্ঘ লাইন। নগরের একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিব শাহরিয়ার বলে, ‘ঘোড়ায় চড়ার মজাই আলাদা। নিজেকে রাজপুত্র মনে হয়। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে উঠলাম ঘোড়ায়।’ রাকিবের মা সাদিয়া সুলতানা বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদ আনন্দে আমাদের পতেঙ্গায় আসাটা নিয়ম হয়ে গেছে। এখানে এলে সন্তানেরাও আনন্দে মেতে থাকে।’
তবে পরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ দর্শনার্থীদের। নগরের বাকলিয়া থেকে পরিবার নিয়ে আসা বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এমনিতে দূরের পথ, অন্যদিকে গাড়ির অতিরিক্ত ভাড়া যা আমাদেরকে দুর্ভোগে ফেলে দেয়। ঈদের সময় সব ধরনের যানবাহনের ভাড়া যে যার খুশিমতো হাঁকছে।’
গাড়িভাড়া নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলেও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে সবার ছিল সন্তুষ্টি। এবার বখাটে আর ছিনতাইকারীদের উৎপাত ছিল না। পরিবার-পরিজন নিয়ে মোটামুটি নির্বিঘ্নে দর্শনার্থীরা আনন্দ করতে পেরেছেন। ঈদ উপলক্ষে সৈকতে আসা মানুষকে নিরাপত্তা দিতে নগর পুলিশের বন্দর শাখা সেখানে ঈদ পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত দুটি সেবাকেন্দ্র খুলে। এসব কেন্দ্রে যেকোনো ধরনের অভিযোগ জানানোর সুযোগ ছিল পর্যটকদের। এই এলাকায় শতাধিক পুলিশ সদস্যও নিয়মিত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এ ছাড়াও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরাও সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে গেছেন বলে জানান পতেঙ্গা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল বশর চৌধুরী। এ ছাড়া নেভাল একাডেমির পাশের সৈকতেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.