চিকিৎসক নেতা খুন

রাজধানীতে একজন চিকিৎসক নেতার হত্যাকা-ের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। একই সঙ্গে উদ্বেগজনকও। বুধবার সরকারী বাসভবনে সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই।


বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পর্ষদের সদস্য এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন তিনি।
জানা যায়, বুধবার রাত সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর বনানী থানাধীন মহাখালী জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সরকারী কোয়ার্টারে এই হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে। চিকিৎসককে ঘাড়ে, পেটে ও পাঁজরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ভেতরের শেষ দিকটা খুবই নির্জন। শিক্ষক কোয়ার্টারগুলো মহাখালী সাততলা বস্তির দেয়ালঘেঁষা। দেয়ালঘেঁষা পাশাপাশি ৫২ ও ৫৩ নম্বর দুটি ভবন। দুটিই শিক্ষক কোয়ার্টার। কোয়ার্টার দু’টির প্রাচীর প্রায় ১০ ফুট উঁচু। তার ওপর ৩ ফুট কাঁটাতারের বেড়া। এ রকম সুরক্ষিত স্থানেই যদি নিজ বাসায় একজন চিকিৎসককে হত্যাকা-ের শিকার হতে হয় তাহলে সমাজে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়াটা স্বাভাবিক। যদিও ঈদের আগে এবং পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিত মোটামুটি সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু ঈদের পর পরই খোদ রাজধানীতে একজন চিকিৎসক নেতার নিজ বাসায় খুন হওয়ার ঘটনায় জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে নিজ বাসায়ই যদি মানুষের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে তারা নিরাপত্তা পাবে কোথায়?
দুর্বৃত্তরা গ্রিল কেটে বাসায় ঢোকে। নারায়ণ চন্দ্র নিতাইকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এরপর তারা বাসার কিছু স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আপাত দৃষ্টিতে ডাকাতির ঘটনা মনে হলেও এটি আসলে পরিকল্পিত হত্যাকা-। কারণ একটি মহল থেকে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। তাকে হত্যা করতেই ডাকাতির ঘটনা সাজানো হয়েছে। ঈদের ছুটির নির্জনতাকে দুর্বৃত্তরা হত্যাকা-ের জন্য বেছে নেয় বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
নারায়ণ চন্দ্র নিতাই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্র জীবনেই তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক কারণেও তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে এমনটিও মনে করা হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে।
আসলে অপরাধ করে যদি অপরাধীরার পার পেয়ে যায় তাহলে অপরাধপ্রবণতা বাড়তেই থাকে। কাজেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই হচ্ছে এক্ষেত্রে অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনের একমাত্র উপায়। নিজ বাসায় যদি মানুষের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে শঙ্কিত হওয়াই স্বাভাবিক। এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাকা-ের অপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারে সামান্য অবহেলা দেখানোর সুযোগ নেই। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। সবার প্রত্যাশা অপরাধীরা খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। তাহলেই হয়ত এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো যাবে।

No comments

Powered by Blogger.