পবিত্র কোরআনের আলো-এই সেই গ্রন্থ তাতে কোনো সন্দেহ নেই

(সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১-৪)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১। আলিফ লা-ম মীম।
২। যা-লিকাল কিতা-বু লা-রাইবা ফীহ্, হুদালি্লল মুত্তাক্বীন।
৩। আল্লাযীনা ইয়ু'মিনূনা বিলগাইবি, ওয়াইউ ক্বীমূনাস সালা-তা ওয়ামিম্মা- রাযাক্বনা-হুম ইউনফিক্বূন।
৪। ওয়াল্লাযীনা ইয়ু'মিনূনা বিমা- উনযিলা ইলাইকা ওয়ামা- উনযিলা মিন ক্বাবলিক, ওয়াবিল আ-খিরাতি হুম ইয়ু'কিনুন।

অনুবাদ
পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার নামে_
১। আলিফ লা-ম মী-ম।
২। (এই) সেই (মহা) গ্রন্থ (আল কোরআন), তাতে (কোনো) সন্দেহ নেই, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে (এই কিতাব কেবল) তাদের জন্যই পদপ্রদর্শক।
৩। যারা গায়েবের ওপর ইমান আনে, যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, তাদের আমি যা কিছু দান করেছি তারা তা থেকে (আমারই নির্দেশিত পথে) ব্যয় করে।
৪। যারা তোমার ওপর যা কিছু নাজিল করা হয়েছে তার ওপর ইমান আনে_(ইমান আনে) তোমার আগে (অন্য নবীদের ওপর) যা কিছু নাজিল করা হয়েছে তার ওপর, (সর্বোপরি) তারা পরকালের ওপরও দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।

ব্যাখ্যা
আলিফ লা-ম মি-ম_এই অক্ষর কিংবা শব্দ তিনটির অর্থ একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই অবগত। কোরআন মজিদের এ ধরনের শব্দগুলোকে বলা হয় আয়াতে 'মুতাশাবিহা'। এগুলো সাংকেতিক শব্দ। এগুলো অবশ্যই মহা অর্থপূর্ণ, তবে মানুষ এগুলোর পূর্ণ অর্থ অনুধাবনে অনেকাংশে অক্ষম।
বলা হয়েছে_এই গ্রন্থ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সাধারণত জ্ঞানের ওপর সন্দেহ তোলাকে ইহজাগতিক বিষয়গুলোতে অবৈজ্ঞানিক ও নেতিবাচক মনে করা হয়। জ্ঞানের ওপর সন্দেহ তোলার দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত। কিন্তু পবিত্র কোরআন এ রকম একটি গ্রন্থ যেখানে মানুষের নীতিনৈতিকতা ও মানবতার মৌলিক রূপরেখা নির্দেশিত হয়েছে। এগুলো সন্দেহাতীত। সত্য ও ন্যায়ের ওপর এবং মৌলিক মানবিক নীতিনৈতিকতার ওপর প্রশ্ন তোলা সুযোগ যে নেই এটাও এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি।
এখানে বলা হয়েছে, এই গ্রন্থ পথপ্রদর্শন করবে সেসব মানুষকে, যারা আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাবদিহিতায় দায়িত্বনিষ্ঠ। আর সেসব মানুষের কয়েকটি গুণের কথা এখানে বলা হয়েছে। প্রথমত বলা হয়েছে, যারা গায়েবের ওপর ইমান আনে বা বিমূর্ত বিষয়ের ওপর বিশ্বাস রাখে। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি। মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়েছে সেদিন থেকেই, যেদিন থেকে সে বিমূর্ত বস্তু অর্থাৎ মানবিক গুণাবলির ওপর বিশ্বাস করতে শিখেছে। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। নামাজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি ইবাদত। এখানে নামাজ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। তৃতীয়ত বলা হয়েছে, 'তাদের আমি যা কিছু দান করেছি অর্থাৎ জাগতিক সম্পদ, সেগুলো তারা সঠিকভাবে ব্যয় করে।' এখানে সম্পদের সঠিক ব্যবহারের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাগতিক বিষয়-সম্পত্তি মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু এ সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখা বা শুধু জমিয়ে রাখা হোক, আল্লাহ তায়ালা তা চান না। তিনি চান, সম্পদ ব্যয় করা হোক সঠিকভাবে। সঠিকভাবে মানে নিজের, পরিবারের ও মানুষের কল্যাণে। চতুর্থত বলা হয়েছে, 'যারা আপনার ওপর যা নাজিল হয়েছে তার ওপর ইমান আনে এবং যা আপনার আগে নাজিল হয়েছিল সেগুলোর ওপরও ইমান আনে। আর ইমান আনে পরকালের ওপর।' এখানে কোরআন মজিদ এবং রাসুল (সা.)-এর আগের নবী-রাসুলগণের ওপর আল্লাহ কর্তৃক নাজিল হওয়া কিতাবসমূহের ওপর ইমান আনার কথা বলা হয়েছে। এটা ইসলাম ধর্মের উদারনৈতিকতার এক উত্তম দৃষ্টান্ত। আর পরকালের ওপর ইমান আনার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যতের ওপর ইমান আনা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.