বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-নানা রঙের মিতালি by রাকিব মোজাহিদ

ক্যানটিনে ছড়ানো-ছিটানো কয়েকটা চেয়ার-টেবিল। আয়েশ করে কেউ চায়ে চুমুক দিচ্ছে, কেউ কেউ আবার তুমুল তর্কে মজেছে দেশের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে। সেই সঙ্গে কানে ভেসে আসছে চায়ের কাপের খুটখাট শব্দ। এলোমেলোভাবে চোখ ফেরাতেই দৃষ্টি আটকে গেল ক্যানটিনের শেষ টেবিলে।


কতগুলো মুখ-শান্ত ও নীরব। জায়গা করে নিলাম তাদের মধ্যেই। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বলে উঠলেন আহনাফ শাকিল, এখনো চা এল না, কথার ঝড় উঠবে কীভাবে বলুন!' জুলফিকার, কানিজ ফাতেমা, জয়ন্ত ভট্টাচার্যয, নাজমুল হক, আহনাফ শাকিল প্রত্যেকেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কথা হচ্ছিল তঁাদের সঙ্গে। জানতে চাইলাম কেমন কাটছে সময়?
জানেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বলে ভালো লাগার জায়গাটাও ভিন্ন। সবকিছু গড়ে উঠছে আমাদের হাত ধরেই...', জুলফিকারের কথা ঠেকিয়ে শুরু করলেন কানিজ ফাতেমা, যেমন ধরুন, ডিবেটিং সোসাইটি, ফিল্ম সোসাইটি, এমনকি বন্ধুসভা-সব আমাদের হাতেই গড়ে উঠছে। এগুলো যত দিন টিকে থাকবে, তত দিন আমাদের নাম টিকে থাকবে।'
টপ্পিনী কাটলেন জয়ন্ত, কেন রে, অমরত্ব লাভের খুব লোভ, তাই না?'
এরপর অনেকটা বিষাদ ঝরে পড়ল নাজমুলের কণ্ঠে, যে যা-ই বলুক, সবকিছু যে খুব সুন্দরভাবে চলছে ঠিক তা নয়। পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরির সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষকের সংকটও আছে। আবার থাকার হলও নেই। তাই সব মিলিয়ে খুব ভালো চলছে তা নয়।' পুরো কথাটা মেনে নিতে পারলেন না কানিজ, তবু অনেক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমাদের অবস্থান অনেকটা ভালো। এরই মধ্যে আমরা আমাদের নিজেদের ক্যাম্পাসে উঠতে পেরেছি। এই বা কম কিসে বল।' সঙ্গে আরও যুক্ত করলেন জুলফিকার, হল না থাকায় একটা সুবিধাও পেয়েছি আমরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস হয় আমাদের, ফলে সারা দিন ক্যাম্পাসেই থাকতে হয়। আর এই সুযোগে বন্ধুত্ব আরও মজবুত!'
বন্ধুত্ব! এ যেন চিরদিনের জোড়া। ছঁিড়বেই না।' হাস্যোজ্জ্বল শাকিলের খুনসুটি।
বেলা বয়ে যায় ক্যাম্পাসেই। আর বাকিটা সময়? একসময় গান শিখতাম। ছেড়ে দিয়েছি। এখন সময় কাটে বই পড়ে।' বললেন কানিজ।
জুলফিকারের সময় কাটে কম্পিউটারে গেমস খেলে!
আমি ভাই সামাজিক মানুষ। তাই ফেসবুকেই সময়টা যায়।' নির্বিকার উত্তর শাকিলের। জয়ন্তর দিকে চোখ ফেরাতেই উত্তর আসে ক্রিকেট!' অবশ্য একটু পরই তার প্রমাণ মিলল। আড্ডা চলছে, এর মধ্যেই মুঠোফোনে ডাক পড়ল জয়ন্তর। Èআমাকে উঠতে হবে। আজ আমাদের বিভাগের খেলা আছে।' বিদায় নিলেন ক্রিকেটপাগল জয়ন্ত। আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করলেন রুকনুজ্জামান। এ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নস্নিান ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট' পরিচয় করিয়ে দিলেন নাজমুল। এবার বেশ উচ্ছ্বসিত জুলফিকার, ভাইসব, এখন আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন বর্তমান এবং সাবেক দুজন শিল্পী। তো এবার গান হয়ে যাক।'
সকালের কুয়াশা যখন কেটে যাচ্ছে, সবাই মিলে তখন গান ধরেছে, তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে...'
এক আড্ডায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। ছবি: মইনুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.