২০ জনের বেশি হলেই ধাওয়া by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

নয়াপল্টন এলাকার বাইরে রাজধানীর কোথাও বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ২০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে অবস্থান করতে দেবে না আওয়ামী লীগ। সমাবেশস্থলের বাইরে কোথাও ২০ জনের বেশি হলেই তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করবেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা।


গত রবিবার সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের সভাপতিত্বে ঢাকার সংসদ সদস্যদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ১২ মার্চ 'ঢাকা চলো' কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্যদের করণীয় নির্ধারণে রবিবার সংসদে মাগরিবের বিরতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদ ভবন অফিসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বলা হয়েছে, যেহেতু সরকার বিরোধী দলকে নয়াপল্টনে জনসভা করার অনুমতি দিয়েছে, সুতরাং এই এলাকার বাইরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একত্র হতে দেবে না আওয়ামী লীগ। তবে জনসভাস্থলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে না।
বৈঠকে বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হতো তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের ৩০ এপ্রিলের ডেডলাইনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সমাবেশ করার কথা থাকলেও নেতা-কর্মীদের ঢাকায় দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি। গণগ্রেপ্তার এবং সরকারের নিপীড়নে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সমাবেশ পণ্ড হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ডেডলাইনের প্রসঙ্গ তুলে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, 'সেই সময় আমাদের ধাওয়া দেওয়া হয়েছে। আর আপনারা এখন বিএনপিকে সুষ্ঠুভাবে কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছেন। সেটা আর চলতে পারে না। বিএনপি ধাওয়া দিয়েছে, আমরাও দেব।' ঢাকার সংসদ সদস্যদের সার্বক্ষণিকভাবে নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
বিএনপির জনসভার দিনে আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ থানা ও ওয়ার্ড কার্যালয় খোলা থাকবে এবং দলের নেতা-কর্মীরা সেখানেই অবস্থান করবেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের প্রধান কার্যালয়ে এ দিন কেন্দ্রীয় নেতারা নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান নেবেন।
বিএনপির সমাবেশে রাজধানীর কোনো জায়গা থেকে বাসে করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পল্টনে সমাবেশস্থলে যেতে দেওয়া হবে না বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা।
বৈঠকের খবর স্বীকার করে ঢাকা-৭-এর সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা যে এলাকার সংসদ সদস্য, সেই এলাকার মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের।' বিএনপির কর্মসূচির দিন সংসদ সদস্যরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় থেকে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করবে বলে তিনি জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোর এলাকার সংসদ সদস্যদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেন। প্রশাসনের তরফে তাঁদের সর্বতোভাবে সাহায্য করারও আশ্বাস দেন তিনি। সভায় আলোচনা হয়, বিএনপির কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী থাকার কারণে নাশকতা হতে পারে। বৈঠকে সংসদ সদস্যরা বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। সাহারা খাতুন রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে বলে সংসদ সদস্যদের আশ্বস্ত করেন।
বৈঠকে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, ঢাকা-৫-এর হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা-৭-এর মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা-৮-এর রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-১০-এর এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১১ এর আসাদুজ্জামান খান, ঢাকা-১২-এর ফজলে নূর তাপস, ঢাকা ১৩-এর জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৪-এর আসলামুল হক, ঢাকা-১৬-এর ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, ঢাকা ১৯-এর তৌহিদ জং মুরাদ ও ঢাকা ২০-এর বেনজীর আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.