আলোচনাসভায় আইন প্রতিমন্ত্রী-জঙ্গিরা রাজধানীতে অপরিচিত লোক দেখলে ধরিয়ে দিন

ঢাকায় অপরিচিত লোক দেখলে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি জানান, বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা রাজধানীতে ভিড়তে শুরু করেছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যের বরাত দিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ১২ মার্চের কর্মসূচি সামনে রেখে এখন থেকেই বিভিন্ন


জঙ্গি গ্রুপ ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। গ্রুপগুলো ঢাকায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি। বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন যে তারা কোনো নাশকতা করবে না? জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আপনাদের নেই।'
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় গ্রন্থাগার মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত 'যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিরোধী দলের কর্মসূচি' শীর্ষক আলোচনা সভায় অ্যাডভোকেট কামরুল এসব কথা বলেন।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহ্রীর, জেএমবি এবং লস্কর-ই-তৈয়বার মদতদাতা- এ অভিযোগ করে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১২ মার্চ খালেদা তাদের ব্যবহার করতে চান। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক ও তৎপর থাকতে হবে।
ঢাকা শহরে অপরিচিত লোক দেখলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'এরা বিরোধী দলের ১২ মার্চের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে। মহাসমাবেশের সময় বিএনপি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। জানমালের ক্ষতিসাধন করতে পারে।'
হোটেলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না- বিরোধী দলের এ অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন, '১২ তারিখ আসতে এখনো সাত দিন বাকি। এত আগে থেকে ঢাকার হোটেল দখল করার কারণ কী থাকতে পারে?'
সংস্কৃতিব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ হোসেন, শাহে আলম মুরাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুছ, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা।
এদিকে বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে 'জাতির জনকের ৬-দফা থেকে ৭ই মার্চ' শীর্ষক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেন, 'বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করলে তা বরদাশত করা হবে না।' তিনি বলেন, দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তাই বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গবেষণা ফাউন্ডেশন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম ঠাণ্ডুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, মীর শওকত আলী বাদশা ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বক্তব্য দেন।
সন্ত্রাসীগোষ্ঠী মাথাচাড়া দিতে পারে : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
ঢাকায় চার দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ও হিযবুত তাহ্রীর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। এ জন্য সমাবেশের দিন ১২ মার্চ জনগণকে 'সর্বোচ্চ সতর্ক' থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নাশকতা ঠেকাতে ওই দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত মোতায়েনসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তার প্রাণহানির ঘটনায় তিনি বলেছেন, 'এ ঘটনার সঠিক তদন্তে আমি ব্যবস্থা নেব। নিজেই তদারকি করব। এ ঘটনায় আমি শোকাভিভূত।'
প্রতিমন্ত্রী জানান, গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিবেচনায় রাজধানীর হোটেলগুলোতে যাতে সন্ত্রাসীরা অবস্থান না নিতে পারে, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ভীত কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সরকার বিএনপির কর্মসূচিতে ভীত নয়। তবে আপনাদের কাছেই শুনলাম, মন্ত্রী-এমপিদের বেরোতে দেওয়া হবে না। তাঁদের নাকি জনরোষে পড়তে হবে। বিএনপি নেতারা বলছেন, যুদ্ধ হবে। বিএনপি ও তার সহযোগীরা নাশকতার জন্য সমাবেশ করছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য শোভন নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব অরাজকতার বিরুদ্ধে শক্তি-কৌশল-মেধা প্রয়োগ করে জানমাল রক্ষা করা। আমরা এজন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছি। তারা যাতে মানুষের দুর্বিষহ যন্ত্রণার কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নেব।'
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার তারা স্বাধীনতার মার্চ মাসকে বেছে নিয়েছে। তারা বিজয় ও স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। এসব মাস তাদের যন্ত্রণার কারণ।
১২ মার্চ সাধারণ মানুষ কর্মস্থলে যেতে পারবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'প্রত্যেকে সতর্ক অবস্থায় থাকবেন, যাতে সন্ত্রাসীরা বাসাবাড়িতে আশ্রয় না নিতে পারে। অফিস-আদালতে পৌঁছানোর সময় সবাইকে চোখ সামনের দিকে রাখতে হবে।'

No comments

Powered by Blogger.