বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি-দাম বাড়ালে সরবরাহ নিশ্চিত করুন

ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ নিয়ে যেমন ভোগান্তি আছে, তেমনি সরকারের কাছেও বোধ হয় বিদ্যুৎ এক অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু না হতেই লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছে, তাতে আর কয়েক দিন পর অবস্থা কোন পর্যায়ে যাবে, তা নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। নূ্যনতম চাহিদাও পূরণ করা যাচ্ছে না।


ভর্তুকির কথা বলে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া আছে। চাহিদা পূরণের কোনো ইঙ্গিত নেই। কয়েক দিন আগে সংসদে জানানো হয়েছে ২০১৩ সাল নাগাদ জাতীয় গ্রিডে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ যোগ হবে। কিন্তু তখন বিদ্যুতের চাহিদা কোন পর্যায়ে যাবে, তার কোনো ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।
পিডিবির ক্রেতা-বিতরণ কম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত পেলে একই সঙ্গে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ইতিবৃত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গ্রাহক পর্যায়ে গত ২০ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৭ বার। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুতের নূ্যনতম দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ১১ শতাংশ। বর্তমান সরকারসহ বিগত চারটি সরকারের আমলে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল প্রায় এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে ২০১১-১২ অর্থবছরে তা এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২৪ মেগাওয়াটে। সেই হিসাবে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ১১ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু এই উৎপাদন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
উৎপাদনের সঙ্গে চাহিদার এই ফারাক পূরণ করা সম্ভব নয়। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো টোটকাই কাজে লাগেনি। রাজধানীর সিএনজি স্টেশনগুলো দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বন্ধ রাখতে হয় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের খরচ বাঁচাতে। এখন ভৈরব থেকে ময়নামতি পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে ঘোড়াশাল ও পলাশ ইউরিয়া কারখানা দুই মাসের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যেকোনো উপায়ে বিদ্যুতের জোগান ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভর্তুকি কমাতে চায় সবাই। ভর্তুকি যত বাড়বে, দেশের অর্থনীতির ওপর তত চাপ বাড়বে। দেশের অর্থনীতি চাপমুক্ত রাখতে ভর্তুকি কমাতে হবে। কিন্তু দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর চেষ্টা কতটা সফল হবে, সেটা ভেবে দেখতে হবে। কারণ বিদ্যুতের মতো সেবা খাত থেকে মানুষকে বঞ্চিত রাখা যাবে না। বিদ্যুৎ এখন দৈনন্দিন প্রয়োজনের তালিকায় রয়েছে। শহরাঞ্চলে যেমন বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তেমনি গ্রামাঞ্চলেও বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি। বিশেষ করে সেচের সময় গ্রামে বিদ্যুতের অনেক চাহিদা থাকে। এই চাহিদা দিন দিন বাড়বে। সেখানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম হলে ব্যাহত হবে কৃষি উৎপাদন।
এমনিতে মূল্যস্ফীতির কারণে চাপের মধ্যে আছে জনজীবন। বিদ্যুতের দাম বাড়লে এই চাপ আরো বাড়বে। তার পরও কি নিশ্চিত করা যাবে বিদ্যুতের সরবরাহ?

No comments

Powered by Blogger.