রুগণ চিকিৎসাশিক্ষা সারিয়ে তোলা জরুরি-দেড় মাস অন্তর মেডিকেল কলেজ

বেসরকারি খাতে চিকিৎসাশিক্ষা ও সেবার উৎকর্ষ বিশ্বজুড়ে একটি স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম। সরকারি খাতের কোটারি নিয়ন্ত্রণ ও একচেটিয়া সুযোগ ধরে রাখার কারণে বহু ক্ষেত্রে আমরা বেসরকারি খাতে মুক্তি খুঁজি। কিন্তু মূল গলদ আমাদের সংকীর্ণ ও বেনিয়া মনমানসিকতায়।


বর্তমান সরকারের আমলে প্রতি দেড় মাসে গড়ে একটি করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং প্রতি মাসে গড়ে প্রায় চারটি করে চিকিৎসাশিক্ষার প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যসেবায় উলে্লখযোগ্য অগ্রগতি নেই। বরিশাল বিভাগে বেসরকারি খাতে একটি মেডিকেল কলেজ না থাকলেও শুধু ধানমন্ডিতেই এ রকম সাতটি প্রতিষ্ঠান চলছে। এসব কলেজ কিসের ভিত্তিতে অনুমোদন পাচ্ছে এবং অতঃপর কীভাবে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে, তার সদুত্তর নেই।
বিএমডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশি্লষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ মেডিকেল কলেজগুলো তদারক করা। বোঝাই যাচ্ছে এরা যথাদায়িত্ব পালনে বিফল হচ্ছে, এদের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ও নেই। কোনো এনজিওকেও আমরা এ বিষয়ে সোচ্চার দেখি না। এ কারণে বছরে প্রায় পঁাচ হাজার মেডিকেল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শুধু ভর্তির সময় মাথাপিছু ১০ লাখ টাকা করে নিয়ে বিরাট মেডিকেল-বাণিজ্যের সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। ৬ মার্চ প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠারও হুজুগ চলছে। নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে নামকাওয়াসে্ত।
চিকিৎসাক্ষেত্রের এই স্বেচ্ছাচারিতা দেশের স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যৎ মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। কারণ, Èমুনাফাভোগীদের' বিলানো সনদধারীরা যে সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম হবেন না, সে কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা না থাকায় রোগীদের একটা উলে্লখযোগ্য অংশ বিদেশে যায়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সব মেডিকেল কলেজে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভব না হলে বন্ধ করে দিতে হবে। মেৌলিক বিষয়ে শিক্ষকস্বল্পতা ও আধুনিক চিকিৎসা-সরঞ্জাম অপ্রতুল থাকার খবর সত্য হলে আমরা অনুমান করতে পারি, এর পরিণাম কী ভয়ংকর হতে পারে। অধ্যাপক মোজাফ&ফর আহমদ বলেছেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের একটা বড় অংশ অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের ঠকাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এই ঠকানো গোটা জাতির সঙ্গেই প্রতারণার শামিল।
আমরা আশা করব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিষয়টি অবিলম্বে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে। তারা আন্তরিক হলে সন্দেহভাজন মেডিকেল কলেজগুলোর কতর্ৃপক্ষকে শুনানির জন্য কমিটিতে হাজির করতে পারে। এটা করতেই হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ভরসা করলে চলবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অনেকটা পরিহাসের সুরে বলেছেন, Èস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কঠোর হওয়ার চষ্টো করছে।' এই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষে যিনি বসে আছেন, তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং তঁার নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশেই মেৌলিক বিষয়ের শিক্ষক ও চিকিৎসা-সরঞ্জামের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়াই কলেজগুলো অনুমোদন পাচ্ছে। সুতরাং, সরষের ভূত আগে তাড়াতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.