লিবিয়ায় শান্তি ও স্থিতি ফিরে আসুক-গাদ্দাফি যুগের অবসান

ক্ষমতা হস্তান্তরে গাদ্দাফির আলোচনার প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে লিবিয়ায় শান্তির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও তিনি হার মেনে নিয়েছেন। অবসান ঘটেছে গাদ্দাফির চার দশকেরও বেশি সময়ের স্বৈরশাসনের।


তবে দেশটিতে শান্তি আসবে কি না, তার অনেকটা নির্ভর করছে বিদ্রোহীদের গঠন করা ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল এবং তাদের সমর্থক পশ্চিমা শক্তির আচরণের ওপর। ন্যাটো বাহিনী যদি ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো লিবিয়ায়ও দখলদারি বহাল রাখে, তাহলে শান্তি হবে সুদূরপরাহত। তাদের উচিত লিবীয়দের হাতেই দেশটির কর্তৃত্ব ছেড়ে দেওয়া। শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসীর সঙ্গে আমরাও চাই, নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষের জীবনহানি অবিলম্বে বন্ধ হোক।
লিবিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ন্যাটোর সামরিক সহায়তা ও পশ্চিমা শক্তির রাজনৈতিক সমর্থনে গাদ্দাফিকে হটাতে সফল হয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করেছে, জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো শাসক টিকে থাকতে পারে না। লিবীয়বাসী বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে স্বাগত জানিয়েছে এই বিবেচনায় যে, তারা অত্যাচারী ও জবরদখলকারী শাসকের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। কিন্তু বিদেশি শক্তির অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে তারা তা নেবে না। অতএব আফগানিস্তান বা ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই ন্যাটো বাহিনীর উচিত বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে লিবিয়া ত্যাগ করা।
ত্রিপোলির পতনের পর বিদ্রোহীদের সোনা-দানা লুণ্ঠন ও প্রতিহিংসার হানাহানির দৃশ্য লিবিয়ার ভবিষ্যর‌্যা নিয়ে শঙ্কা জাগায়। ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে গাদ্দাফির প্রস্তাবে ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল সাড়া দিলেই ভালো করবে। কেননা আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব হলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও বাড়বে।
এখন আশু প্রয়োজন লিবিয়ায় জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনা। সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারে সব জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি দেশটিতে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে ওআইসি, আরব লীগ ও আফ্রিকান ইউনিয়নেরও অগ্রণী ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয়। যুদ্ধের কারণে যেসব অভিবাসী শ্রমিক লিবিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল, অবিলম্বে তাদের কাজে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হোক।

No comments

Powered by Blogger.