মহাসমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা-* ২০ লাখ লোক জড়ো করার প্রস্তুতি বিএনপির -* দুই দিন পরই পাল্টা কর্মসূচি সরকারি দলের by মোশাররফ বাবলু

আগামী ১২ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লোক জমায়েত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। কিন্তু দলের নেতাদের অভিযোগ, মহাসমাবেশে লোকজনকে আসতে বিভিন্ন স্থানে বাধা দিচ্ছে সরকার। এ ছাড়া বিএনপির কর্মসূচির দুই দিন পর ১৪ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের উদ্যোগে ঢাকায় মহাসমাবেশের


আয়োজন করা হয়েছে। কোন দলের মহাসমাবেশে বেশি লোক জমায়েত করা যায় তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে দুই দলের মধ্যে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে টান টান উত্তেজনা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সরকার বাধা দিলেও কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ হবে ১২ মার্চ। আর শান্তিপূর্ণভাবে হলে ২০ লাখের বেশি লোকের সমাগম ঘটবে। সে লক্ষ্যেই চলছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন এবং চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলোর প্রস্তুতি। মহাসমাবেশ সামনে রেখে দলীয় নেতা ছাড়াও পেশাজীবীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগও এর নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। ১৪ মার্চ মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ছাড়াও আজ ৭ মার্চ ঢাকা নগরীতে গণশোভাযাত্রা করবে ১৪ দল।
বিএনপি নেতারা জানান, 'চলো চলো ঢাকা চলো' স্লোগান নিয়ে ১২ মার্চ শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ করবেন তাঁরা। এ সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে না। এর পরও সরকার কেন ভীত হয়ে পড়েছে, তা তাঁদের বোধগম্য নয়। তাঁরা বলেন, সরকারই মহাসমাবেশ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। যেভাবে বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে আসতে বাধা দিচ্ছে, তা নিয়ে সরকারি দল ও বিএনপির মধ্যে দেখা দিয়েছে টান টান উত্তেজনা। সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছে সারা দেশের বিএনপি নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর কোনো আবাসিক হোটেলে অতিথি রাখতে না দেওয়ার ঘোষণায় বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। এর পরও ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতাদের দাবি, মহাসমাবেশে ২০ লাখ মানুষ জড়ো করার প্রস্তুতি চলছে। শেষ পর্যন্ত ২০ লাখ লোক না হলেও ১০ লাখ লোকের জমায়েত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। কোনো নাশকতায় আমরা বিশ্বাস করি না। শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ হবে। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই আমরা। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে বাধা দিলে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।' তিনি বলেন, 'এ সমাবেশ সরকার পতনের নয়, আমাদের দাবি জানানোর সমাবেশ। দাবি হচ্ছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।'
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, '১০ লাখ লোক তো হবেই। আমাদের টার্গেট ২০ লাখের ওপরে।' তিনি বলেন, 'শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সমাবেশ শেষ করতে চাই। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।'
ঢাকার তিনটি স্থানের জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চাওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। নয়াপল্টনে চারদলীয় জোটের উদ্যোগে মহাসমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হবে। সমাবেশে লোকজনকে আনার জন্য ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে শতাধিক তোরণ এবং প্রবেশপথে অর্ধশতাধিক তোরণ ও অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারা জানান, গুলিস্তান, মতিঝিল, আরামবাগ, টিকাটুলি, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, পুরান ঢাকা, সদরঘাট, নয়াবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, প্রেসক্লাব, শাহবাগ মোড় ছাড়াও গাবতলী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী ব্রিজসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এসব তোরণ নির্মাণ করা হবে। অভ্যর্থনা কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হবে খাবার পানি ও সরবত। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে এসব তোরণ ও অভ্যর্থনা কেন্দ্র করার অনুমতি পায়নি বিএনপি। তাই রাজধানীর বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে।
বিএনপির মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ৪৫টি সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। মহানগর বিএনপি ঢাকার থানা ও ওয়ার্ডে কর্মী সমাবেশ ও জনসংযোগ করছে। ওয়ার্ডে কর্মিসভা, জনসংযোগ এবং সারা দেশে প্রচারের জন্য কমিটি ও টিম গঠন করা হয়েছে। বিএনপি যে প্রস্তুতি নিয়েছে, তাতে খালেদা জিয়া সন্তোষ প্রকাশ করলেও আরো ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
১২ মার্চের কর্মসূচি সফল করতে চারদলীয় ঐক্যজোটের শরিক ও সমমনা দলগুলোও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে অতি গোপনে বৈঠক করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। এদিকে ইসলামী ঐক্যজোট, এলডিপি, জাগপা, এনপিপি ও বাংলাদেশ ন্যাপের নেতারাও মাঠে রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.