জন্মদিন-লালন উৎসবে ভূতের থাবা by অনিক কুমার কর্মকার

মাগুরার শালিখা উপজেলায় কতিপয় ধর্মান্ধের থাবায় লালন উৎসব পণ্ড হয়েছে। ৪ মার্চ ২০১২ দিবাগত রাতে পুলুম গোলাম সরোয়ার হাইস্কুল মাঠে লালন স্মরণোৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান চলাকালে একদল ধর্মান্ধ উগ্রপন্থী ব্যাপক ভাঙচুর, হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটিয়েছে। উৎসব মানে মিলন মেলা। উৎসব মানে সংস্কৃতির চর্চার ধারা।
উৎসব মানে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আর মৈত্রীর সেতুবন্ধন মজবুত করা। কিন্তু এসব যাদের সহ্য হয় না, যারা এসব মেনে নিতে পারে না, তারা এ সমাজে অচিহ্নিত নয়। আলোর বিরুদ্ধে শক্তি এমন মিলন মেলা সহ্য করতে পারে না, ভয় পায় এবং ধর্মের অহেতুক দোহাই দিয়ে সব লণ্ডভণ্ড করে দিতে চায়। অতীতে বহুবার এমন কাণ্ড তারা ঘটিয়েছেও; কিন্তু আলোর পথের যাত্রীদের দমিয়ে দিতে পারেনি। লালন কে? লালন আমাদের চেতনা ও মূল্যবোধের দরোজা প্রশস্ত করে দিতে কতটা ব্যাপক ভূমিকা রেখে গেছেন তা কি তারা জানে? মানবতাবাদী লালনকে ওদের সহ্য হয় না। ওই হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ১০ জন বাউলশিল্পীর শরীর থেকে উন্মত্তকারীরা রক্ত ঝরিয়েছে। মানবতাবাদী লালন উৎসবে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তারা নিশ্চয়ই মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়েই সেখানে গিয়েছিলেন। এই আঘাত কিংবা হামলা মানবতার ওপর হামলা। সভ্যতার কলঙ্ক। বিস্ময়কর হলো, স্থানীয় পুলিশ ঘটনাটিকে তেমন আমলেই নেয়নি। ৫ মার্চ কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি পত্রিকায় এ সংবাদটিও এসেছে। শালিখার কিছু লালনভক্ত নিজেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত লালন সাংস্কৃতিক স্মৃতিসংঘের ব্যানারে তিন বছর ধরে পুলুমে লালন উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। আমাদের সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে এ যাবৎ বাধা কম আসেনি, তবুও আশার কথা, অপশক্তি ওই উদ্যমীদের দমিয়ে দিতে পারেনি। প্রতিক্রিয়াশীলদের দাপাদাপিতে এই রক্তস্নাত বাংলাদেশে প্রগতির চাকা কখনো কখনো বাধাগ্রস্ত হয়েছে বটে, কিন্তু শুভবুদ্ধিসম্পন্নদের দৃঢ়তায় স্তব্ধ হয়ে যায়নি, বরং আবার ক্ষিপ্রগতিতে সব এগিয়েছে। এখানেই আশা, শক্তিও এখানেই। যারা সংস্কৃতি চর্চাকে অন্যায় মনে করে, পাপ হিসেবে আখ্যা দিতে চায়, তাদের চিন্তা-চেতনা কতটা পশ্চাদমুখী এ আর ব্যাখ্যার কোনো প্রয়োজন রাখে না। মাগুরার শালিখা উপজেলার পুলুমে লালনের উৎসব যারা পণ্ড করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতেই হবে। তাদের প্রতি কোনোরকম অনুকম্পা নয়। এরা মানবতা, সভ্যতার কলঙ্ক। কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষের পক্ষে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো সম্ভব নয়। যারা এমনটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে শুভবোধসম্পন্ন সবাইকে। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড নিশ্চিত করতেই হবে।
অনিক কুমার কর্মকার

No comments

Powered by Blogger.