৭ই মার্চের ভাষণ-জাতির মুক্তিসংগ্রামের অমর কাব্য
আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘদিনের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল একটি কণ্ঠ। অন্যায়, অগণতান্ত্রিক আচরণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতিকে পরিপূর্ণভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির উদ্দেশে এ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে।
তাই আর দশটি দিনের চেয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে অন্য রকম হয়ে আছে একাত্তরের ৭ই মার্চ। মূলত এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিল জাতি। একটি পাতাঝরা বসন্ত বিকেল বদলে দিয়েছিল একটি জাতির ইতিহাসের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়। বিশ্বের ইতিহাসে এ ভাষণ সে কারণেই বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। একজন মানুষ দিন দিন নিজেকে চালকের আসনে এনে একটি আন্দোলনকে জনগণের প্রাণের দাবিতে পরিণত করতে পারেন- এমন উদাহরণও বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। মাত্র ২২ মিনিটের একটি ভাষণ একটি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে যেভাবে উজ্জীবিত করেছিল, তার তুলনা শুধু ৭ই মার্চের ভাষণই। গণতন্ত্রের মৌলিক ধারণা তুলে ধরা আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে বিশ্বের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও একটি স্বাধীনতাকামী জাতির সার্বিক স্বপ্ন, চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার এমন তেজোদীপ্ত প্রকাশ বোধ করি পৃথিবীর কোনো ভাষণেই নেই। ৭ই মার্চের এ ঐতিহাসিক ভাষণ বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতিকে এক অনন্য পরিচয়ে পরিচিত করে তুলেছিল। এ ভাষণের মধ্য দিয়েই হাজার বছরের পরাধীনতার শিকল ছেঁড়ার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। স্পষ্ট করেই তিনি বলেছিলেন, 'শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে পাড়া দিয়ে আরটিসিতে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। অ্যাসেম্বলি কল করেছেন, আমার দাবি মানতে হবে প্রথম। সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তার পরে বিবেচনা করে দেখব, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর পূর্বে অ্যাসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না। আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।'
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যেই পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, সেটা তিনি বুঝে গিয়েছিলেন আগেই। বুঝে গিয়েছিলেন যে জাতির মুক্তির জন্য যুদ্ধ আসন্ন। আর সে যুদ্ধে তিনি উপস্থিত নাও থাকতে পারেন; আবার গ্রেপ্তার করা হতে পারে তাঁকে, এটাও যেন তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সে কারণেই তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন, 'তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইল : প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।' এ যেন এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সমরনায়কের আহ্বান।
৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে যেমন মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, তেমনি আসন্ন সে যুদ্ধের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি বলেন, 'প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব- এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
স্পষ্টত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল মুক্তির ডাক। পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের সম্পর্কের টানাপড়েনের অবসান ঘটেছিল প্রধানত এই ভাষণের মধ্য দিয়ে। এই ভাষণের পরই বাংলার মানুষ সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিল যে স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো বিকল্প নেই। তাই দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে আত্মত্যাগের মূল্যে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং দেশপ্রেমিক জনগণ সব বাধা অতিক্রম করে এই সোনার বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করেছিল।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যেই পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, সেটা তিনি বুঝে গিয়েছিলেন আগেই। বুঝে গিয়েছিলেন যে জাতির মুক্তির জন্য যুদ্ধ আসন্ন। আর সে যুদ্ধে তিনি উপস্থিত নাও থাকতে পারেন; আবার গ্রেপ্তার করা হতে পারে তাঁকে, এটাও যেন তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সে কারণেই তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন, 'তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইল : প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।' এ যেন এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সমরনায়কের আহ্বান।
৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে যেমন মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, তেমনি আসন্ন সে যুদ্ধের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি বলেন, 'প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব- এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
স্পষ্টত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল মুক্তির ডাক। পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের সম্পর্কের টানাপড়েনের অবসান ঘটেছিল প্রধানত এই ভাষণের মধ্য দিয়ে। এই ভাষণের পরই বাংলার মানুষ সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিল যে স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো বিকল্প নেই। তাই দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে আত্মত্যাগের মূল্যে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং দেশপ্রেমিক জনগণ সব বাধা অতিক্রম করে এই সোনার বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করেছিল।
No comments