বরগুনা জেলা-১৩৬ চিকিৎসকের ১০৩ জনই নেই by এম জসীম উদ্দীন

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালসহ এ জেলার ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসকের ১৩৬টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১০৩টিই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এতে জেলার ১২ লাখ বাসিন্দার চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।


বরগুনার সিভিল সার্জন এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি মাসেই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক-সংকটের কথা জানিয়ে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছি। কিন্তু ফল পাচ্ছি না। কয়েক বছর ধরে জেলার সর্বত্র চিকিৎসক-সংকট চলছে। বিশেষ করে জেলার কোনো হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় জরুরি প্রসূতিসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
জেলা সদরে ১০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে মঞ্জুর করা ২২ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র নয়জন। গুরুত্বপূর্ণ ১২টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ পরামর্শক (কনসালটেন্ট) সার্জারি, মেডিসিন, নাক-কান-গলা, চক্ষু, মেডিসিন ও ইএনটি—এ ছয়টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। এ ছাড়া গাইনি, অর্থোপেডিক্স, প্যাথলজি, রেডিওলজি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে পাঁচজন কনিষ্ঠ পরামর্শকের সবগুলো পদই শূন্য। চিকিৎসা কর্মকর্তা পদে চারজনের মধ্যে কর্মরত আছেন তিনজন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের তিনটি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সহকারী ও সেবিকারা রোগীদের সামলান। রেডিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্ট—এ দুটি পদে কোনো চিকিৎসক না থাকায় এক্স-রে ও প্যাথলজির প্রতিবেদনের জন্য টেকনোলজিস্টদের ওপর নির্ভর করতে হয় রোগীদের।
বরগুনা সদর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দুটি পদে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও একজন চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও সদর উপজেলার নলী বন্দর, ফুলঝুরি ও আয়লা—এ তিনটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই। এ ছাড়া বরগুনা সদর ইউনিয়ন, এম বালিয়াতলী, বুড়িরচর, গৌরীচন্না, আয়লাপাতাকাটা, নলটোনা এবং ফুলঝুরি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সাতজন চিকিৎসকের সবকটি পদই শূন্য। এতে প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ২০টি পদ আছে। এর মধ্যে কর্মরত আছেন তিনজন চিকিৎসক। এ উপজেলার ১০ শয্যার কুকুয়া পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দুজন চিকিৎসকের পদ থাকলেও সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই। গাজীপুর, তালতলী, গুলিশাখালী উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিনজন চিকিৎসা কর্মকর্তার স্থলে শুধু গুলিশাখালীতে একজন কর্মরত আছেন। এ উপজেলার চাওড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন সহকারী সার্জন আছেন। তবে আরপাঙ্গাশিয়া, হলদিয়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, পচাকোড়ালিয়া ও কড়ইবাড়িয়া কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ২০টি পদের মধ্যে মাত্র তিনজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। এ ছাড়া উপজেলার কালমেঘা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন এবং রায়হানপুর, পাথরঘাটা ও কাঁঠালতলী—এ তিনটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে তিনজন চিকিৎসক আছেন। কিন্তু নাচনাপাড়া, চরদুয়ানি, কাকচিড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই।
বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৭ জনই নেই। বেতাগীর কাউনিয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের একটি পদ, তা-ও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ছয়জন চিকিৎসকের মধ্যে শুধু কাজিরাবাদ ও মোকামিয়ায় দুজন চিকিৎসক আছেন। হোসনাবাদ, বেতাগী, বিবিচিনি ও সরিষামুড়ি—এ চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই।
জেলার বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়জন চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র একজন। এ ছাড়া এ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পাঁচজন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বামনা ও রামনা কেন্দ্রে দুজন চিকিৎসক আছেন। বুকাবুনিয়া ও ডৌয়াতলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই।

No comments

Powered by Blogger.