আওয়ামী লীগের সমাবেশে সরকারি কর্মকর্তারা!-উপসচিবের নেতৃত্বে প্রস্তুতি বৈঠক

ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন সরকারের কর্মচারীরা। ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আজকের শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদসহ সরকারি কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠন অংশ নেবে বলে জানা গেছে। গত সোমবার সচিবালয়ে এ-সংক্রান্ত প্রস্তুতি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।


জানা গেছে, সভায় একজন উপসচিব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আজকের শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির ১২ মার্চের ঢাকা চলো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সরকারি কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাঁদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে বিএনপির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেও সভায় উপসচিব ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ গত সোমবার সচিবালয়ে এ প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে। ৪ নম্বর ভবনের পেছনের টিনশেডে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সরকারের উপসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ খাইরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরে এ বৈঠক সম্পর্কে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত প্রেস রিলিজ পাঠানো হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
প্রেস রিলিজে স্বাক্ষরকারী ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠসহ দুটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, 'আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামীকালের (আজ) র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদভুক্ত সাতটি সংগঠনের মধ্যে পাঁচটি সংগঠন নিজ নিজ ব্যানার নিয়ে র‌্যালিতে যোগ দেবে।' সরকারি কর্মচারী হয়ে এসব শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি তো সরকারি কর্মসূচি। তাই এতে যোগ দিতে বাধা নেই।' প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি হলেও এটা ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচি- এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
রুহুল আমিন আরো বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব খাইরুল ইসলাম গত সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে আমাদেরকে ৭ মার্চের কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলেছেন। একই সঙ্গে ১২ মার্চের বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার কথা বলেছেন।'
যে পাঁচটি সংগঠন আজকের শোভাযাত্রায় অংশ নেবে সেগুলোর নামও জানিয়েছেন রুহুল আমিন। সংগঠনগুলো হলো- সচিবালয় স্টেনো টাইপিস্ট সমিতি, কম্পিউটার অপারেটর সমিতি, হিসাবরক্ষণ কর্মচারী সমিতি, সচিবালয় অফিস সহকারী সমিতি এবং সচিবালয় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি।
সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে সংস্থাপনসচিব আবদুস সোবহান সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর দপ্তর থেকে বলা হয়, তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সংস্থাপনসচিব এ এম এম শওকত আলী বলেন, 'সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধি ১৯৭৯ তে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাঁরা আইনের মধ্যে থেকে যেকোনো সরকারকে সহযোগিতা দিতে বাধ্য। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া তো দূরের কথা, তাঁদের কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়াও অপরাধ। যারা সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় অংশগ্রহণ করেছেন অথবা ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তাদের কর্মকাণ্ডও আচরণ বিধি পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
'সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধি, ১৯৭৯'-এর বিধি ২৫-এর উপবিধি-১-এ বলা হয়েছে, 'কোনো সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে অথবা বাংলাদেশ বিষয়ক কোনো ব্যাপারে অংশগ্রহণ করিতে, সাহায্যার্থে কোনো চাঁদা দিতে বা যেকোনোভাবে সহযোগিতা করিতে পারিবেন না।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সরকারের কোনো কর্মচারী রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন না, রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়ার প্রচারণা চালাতে পারেন না। আর সচিবালয়ে রাজনৈতিক সভা নিষিদ্ধ। এসব শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনের শাসন দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
বিজ্ঞপ্তিতে যা ছিল : সোমবারের সভার খবর দিয়ে প্রেস রিলিজে বলা হয়, 'বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে স্বাধীনতার সপক্ষের কর্মচারী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ খাইরুল ইসলামের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১২ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সকল বক্তাই এই গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ নানা অপতৎপরতা এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচিকে বাধা সৃষ্টিসহ সকল ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আলোচনা হয়। এসব কর্মচারী/কর্মকর্তার গতিবিধি নজরদারিসহ তাদের সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি সজাগ থাকার জন্য স্বাধীনতার সপক্ষের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রতি দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।'
প্রেস রিলিজে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদ সভাপতি হাসান ইমাম, সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহমান, মো. হিরণ মিয়া, মোহাম্মদ আলী, এনামুল হক, মামুনুর রশিদ, আবুল হাশেম মজুমদার, আবদুল কুদ্দুছ, এমদাদুল হক, শামসুল আলম, লুৎফর রহমান, নুরুল হুদা, সেলিম মোল্লা, জহিরুল ইসলাম, আবদুল হক প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.