অল্পস্বল্প-‘আকরামকে সাধুবাদ জানাতে হবে’

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। তবে সর্বশেষ যেটি হলো, সেটি অভূতপূর্ব। এশিয়া কাপের দল ঘোষণার পর প্রধান নির্বাচক আকরাম খান বলে দিয়েছেন, এটি নির্বাচকদের দল নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য


এটিকে অশনিসংকেত হিসেবেই দেখছেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদত
 এশিয়া কাপের দল নিয়ে বিতর্কের কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। প্রধান নির্বাচক আকরাম খান বলেছেন, এটা তাঁদের দল নয়। শুনে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
ফারুক আহমেদ: আমি যে খুব অবাক হয়েছি, তা নয়। নির্বাচক কমিটির কাজে হস্তক্ষেপের কথা তো অনেক দিনই শুনে আসছি। নির্বাচকদের ওপর খবরদারি করার জন্য যখন টেকনিক্যাল কমিটি করা হলো, তখনই আমি এর প্রতিবাদ করেছি। কারণ, নির্বাচকদের পুরো স্বাধীনতা না দিলে তারা কখনোই ভালো করতে পারবে না। পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারবে না।
 এর আগে এসব নিয়ে কানাঘুষা শোনা গেলেও এই প্রথম কোনো প্রধান নির্বাচক প্রকাশ্যে এর প্রতিবাদ করলেন, এটাকে কীভাবে দেখছেন?
ফারুক: এ জন্য আকরামকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। কেউ বলতে পারে, এত দিন কেন তিনি চুপ করে ছিলেন? হতে পারে, আকরাম তার মতো করে ফাইট করেছে। যখন দেখছে আর পারছে না, তখনই প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আকরাম খানের আলাদা একটা জায়গা আছে। বোর্ডের এসব স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে ও কেন এত দিনের অর্জিত সম্মান হারাতে যাবে? আমি বলব, ও ঠিক কাজটাই করেছে।
 আপনি নিজেও তো চার বছর প্রধান নির্বাচক ছিলেন। আপনার কি এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
ফারুক: আমি জোর গলায় বলতে পারি, আমার কমিটি পুরো স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। সাবেক বোর্ড সভাপতি আলী আসগর লবী বিদায় নেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘ফারুককে আমি আমার এলাকার মানজার রানাকে দলে নিতে বলেছিলাম। ও শুনে নাই।’ এটাতেই প্রমাণিত হয়, আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করেছি। এখন যেমন প্রতিটা দল নিয়েই কিছু না কিছু শোনা যায়, আমাদের সময় এমন কিছু হলে অবশ্যই তা শোনা যেত।
 তার মানে, আপনার সময়ও বোর্ড সভাপতি বা অন্যরা দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছেন। সেই চাপটা কীভাবে সামলেছেন?
ফারুক: আমি কিন্তু কারও কাছে গিয়ে প্রধান নির্বাচক হতে চাইনি। বোর্ড থেকেই প্রস্তাব এসেছিল। প্রস্তাবটা পাওয়ার পর আমি প্রথমেই পরিষ্কার বলে দিয়েছিলাম, আমাকে পুরো স্বাধীনতা দিতে হবে। নির্বাচক কমিটির কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। কাজেই বোর্ডের সামনে দুটিই পথ ছিল—হয় আমাকে আমার মতো কাজ করতে দেওয়া, নয়তো আমাকে বরখাস্ত করা।
 এবার তো বোর্ড সভাপতি নিজেই তিন নির্বাচকের স্বাক্ষরিত দল বদলে দিয়েছেন। এটা তো অভূতপূর্ব...
ফারুক: এটা তো ক্রিকেটীয় রীতিনীতির মধ্যে পড়ে না। গত কিছুদিন আরও অনেক কথাই শুনেছি। বোর্ড সভাপতি, তথাকথিত টেকনিক্যাল কমিটি নাকি দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও নাক গলিয়েছে। সর্বশেষ যা হয়েছে, তা সেসবেরই ধারাবাহিকতা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট কোথায় যাচ্ছে, এটা নিয়ে সবারই উদ্বেগ হচ্ছে। গুটিকয়েক লোক এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে যা ইচ্ছা তা-ই করছে। বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের যেখানে মন দেওয়া উচিত, তারা সেখানে মন না দিয়ে অন্যের কাজে নাক গলাচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে সামনে অনেক খারাপ দিন আসছে। পারফরম্যান্সেও এর প্রতিফলন পড়বে।
 এসবের দায়িত্ব তো দিন শেষে বোর্ড সভাপতির ওপরই বর্তায়, তাই না?
ফারুক: তা তো অবশ্যই। সভাপতি হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অধিনায়ক। তিনি নিজে দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা তো আরও বেশি সাহস পেয়ে যাবে। বোর্ড সভাপতির উচিত বাকি সবার সামনে সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

No comments

Powered by Blogger.