পদ্মা সেতু আমরাই করতে পারি by ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত

আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা আমাদের জন্য একসময় অত্যন্ত জরুরি ছিল। স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী কাছাকাছি সময়ের কথা বলছি। তখন অভ্যন্তরীণ সম্পদ ছিল খুবই কম। আমরা তো অনেক পথ পেরিয়ে এসেছি। ৪০ বছরে আমরা অনেক স্বাবলম্বী হয়েছি। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেড়েছে। তার পরিমাণও কম নয়।


হাজার কোটি ডলার। আমাদের রপ্তানির পরিমাণ অনেক। বিশ্বমন্দার আলোকে সাময়িক সময়ের জন্য বাণিজ্য কমলেও প্রবৃদ্ধি ভালো। রেমিট্যান্সের কথাও বাদ দেবেন কিভাবে। সেখানেও আমাদের ইতিবাচক প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। সুতরাং আমরা সেই সত্তরের দশকের গোড়ায় যেমন ছিলাম সেই অবস্থানে নেই। তবে এটা ঠিক সব কিছুই নিজেরা করে নিতে পারব- এমনটা ঠিক নয়। আবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা কিন্তু আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ফলে ছোটখাটো কাজের জন্য আমাদের বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফের কাছে হাত পাতার দরকার নেই।
বড় প্রকল্প বিশেষ করে পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে পারি। কিন্তু এখানে আমাদের দেখার বিষয় আছে। বিশ্বে এখন অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সেই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদেরকেও। এ মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের সুদের হার বেশি। শুধু তাই নয়, তারা তো ক্যাশও দেয় কম। ঋণ দেওয়ার জন্য তাদের উপদেষ্টারা আসবে। সেই উপদেষ্টাদের যাতায়াত ভাড়াটা পর্যন্ত বহন করতে হবে বাংলাদেশকে। পরামর্শ দেওয়ার জন্যও চার্জ দিতে হবে। আমাদের জন্য বেশি প্রয়োজন নেই তাদের এহেন শর্তসাপেক্ষ ঋণ। শুধু বড় প্রজেক্টের জন্য নেওয়া যেতে পারে।
আবার খেয়াল করুন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন কিন্তু একা বিশ্বব্যাংক করছে না। তবে এটা ঠিক তারা বেশি করছে। তারপরও বলা দরকার আমরা চেষ্টা করলে অনেক কিছু করতে পারি। যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতুর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। যমুনা সেতুর সারচার্জ দিয়ে আমরা সেই সেতু করে ফেললাম। সেই উদাহরণকে সামনে আনতে পারি আমরা। এখন দেশের ১০ কোটি মানুষ যদি মাসেও এক টাকা করে দেয় তাহলে এক মাসেই জমা হবে ১০ কোটি টাকা। বছরে ১২০ কোটি টাকা হয়ে যেতে পারে। যদি সারচার্জ আরোপ করা হয় তাহলে মাসে এক টাকার অনেক বেশিই জমা হবে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের জন্য বেশি টাকা জোগাড় করতে হবে, তাই এ জন্য এক বা দুই বছরের মধ্যেই সেই টাকা জোগাড় করা দরকার কি। রয়েসয়ে করলেও করা যায়। দুই বছর তিন বছর কিংবা পাঁচ বছর পরই করুন না। তার মানে পদ্মা সেতুও আমরা নিজেরাই করতে পারি।
আসলে আমাদের দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছার। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা আমাদের ক্ষতি করছে।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তাদের পরিবর্তে আমরা মালয়েশিয়ার কথা ভাবতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.