বিতর্ক করতে অক্সফোর্ডে by হাসিবুল হাসান

যুক্তি, জ্ঞান আর উপস্থাপনায় আবির আর গাউস অন্য সবার থেকে একটু ভিন্ন। বাংলাদেশের পতাকাটিকে উড়িয়ে এলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। রেখে এলেন মেধার স্বাক্ষর। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড ইউনিয়ন আয়োজন করেছিল অক্সফোর্ড আইভি (ইন্টার ভার্সিটি)' বিতর্ক প্রতিযোগিতা।


ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৫টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, যার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের এই দল।
আবির হাসান এবং গাউস মোহাম্মদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর ১৬ ও ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তঁাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তঁাদের শিক্ষক খালেদ মাহমুদ।
অক্সফোর্ডের বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি ছিল ব্রিটিশ সংসদীয় পদ্ধতিতে। প্রতিটি দলে দুজন করে বিতার্কিক থাকবেন, যেখানে কোনো বিষয়ের ওপর সরকারি দল-১ এবং সরকারি দল-২ থাকবে, যারা বিষয়টিকে সমর্থন করবে। অপর পক্ষে বিরোধী দল-১ এবং বিরোধী দল-২ থাকবে, যারা বিষয়টির বিপক্ষে বলবে। ১২৫টি দলের প্রতিটি দলকেই মোট পঁাচটি করে ডিবেট করতে হয় প্রথম রাউন্ডে। সেখান থেকে বেশি পয়েন্ট পাওয়া প্রথম আটটি দলকে বাছাই করা হয়, যাদের মধ্যে স্থান করে নেয় আবির ও গাউসের দলটি। এ প্রতিযোগিতায় বিতর্কের মূল বিষয়গুলো ছিল স্কুলশিক্ষার সংস্কার ও অর্থনীতি। সেমিফাইনালে সামান্য পয়েন্টের জন্য ফাইনালে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় না তঁাদের। তাতেই বা কম কী? আবির হাসান, যিনি ২০১০ সালে ওআইসি আয়োজিত ওআইসি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০১০'-এ তঁার দলকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন এবং তিনি শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে তা ছিল এশিয়ায়। কিন্তু এবার তিনি ইউরোপের জয় নিয়ে এলেন।
আবির হাসান বলেন, বিদেশের মাটিতে নিজ দেশকে তুলে ধরার চেয়ে গেৌরবের আর কী আছে। ক্যামব্রিজের মতো দলের মুখোমুখি হয়ে আমাদের দলকে আমরা সেমিফাইনালে নিয়ে যেতে পেরেছি।'
গাউস মোহাম্মদ বলেন, আমার প্রথম আন্তর্জাতিক ডিবেট অক্সফোর্ডে। লর্ডসে টেস্ট অভিষেকের মতো! আমি অনেক গর্ববোধ করছিলাম যখন একজন বিচারক আমাকে বললেন, গুড! এটা আজ তোমাদের রাত, আজ রাতে বাংলাদেশ বড় কোনো এক টুর্নামেন্টে প্রবেশ করল, শাবাশ ম্যান।" এটি আমাকে এমন আনন্দ দিয়েছে, যা বর্ণনা করা যাবে না।'
এ দলের তত্ত্বাবধায়ক খালেদ মাহমুদ বলেন, সাধারণত আমাদের দেশ থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে খুব একটা অংশগ্রহণ থাকে না। এটি ছিল আমাদের একটা মাইলফলক, যেখানে অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড এবং এমআইটির মতো দল ছিল, আমাদের দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছে। আমি মনে করি, এটি আমাদের দেশের এক বড় অর্জন।'
অক্সফোর্ড আইভি' অক্সফোর্ড ইউনিয়নের একটি নিয়মিত আয়োজন আর অক্সফোর্ড ইউনিয়ন'কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ডিবেটিং সোসাইটিগুলোর মধ্যে অন্যতম ডিবেটিং সোসাইটি হিসেবে গণ্য করা হয়।
আবির ও গাউস অক্সফোর্ড থেকে ফিরে ফিলিপাইনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ডিবেট কম্পিটিশন'-এ অংশগ্রহণ করে সেখানেও নিজেদের কৃতিত্বের প্রমাণ রেখে আসেন। এসব প্রতিযোগিতায় আবির ও গাউসের সাফল্য আমাদের মাথাকে বিশ্বের দরবারে উঁচু করে দেয়। আমরা তঁাদের নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি, এগিয়ে চলি সামনের দিকে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশের আশায়

No comments

Powered by Blogger.