খুনি গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু তদন্ত চায় সৌদি আরব

সৌদি আরব ঢাকায় তাদের দূতাবাসের এক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং খুনির গ্রেপ্তার দাবি করেছে। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মুস্তফা কামাল গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে সৌদি দূতাবাস থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা।


আমরা এ ঘটনায় গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।'
সচিব বলেন, 'সৌদি দূতাবাস কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেছে এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যত দ্রুত সম্ভব তাদের জানাতে বলেছে।' তিনি জানান, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানাতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল্লাহ আল বুশাইরি গতকাল টেলিফোনে তাঁদের একজন কূটনৈতিক কর্মী (ডিপ্লোম্যাটিক স্টাফ) নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'আমাদের একজন কূটনৈতিক কর্মী গুলশানে তাঁর বাসার সামনে নিহত হয়েছেন। এটি দুঃখজনক।' তিনি আরো বলেন, 'সরকার (বাংলাদেশ) খুনিদের গ্রেপ্তার করবে বলে আমরা আশা করছি।'
জানা গেছে, সৌদি কর্মকর্তা নিহত হওয়ার খবরে অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এম আল্লামা সিদ্দিক এবং চিফ অব প্রটোকল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ এস সাদেক দুপুরে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিদেশি দূতাবাসকর্মী নিহত হওয়ার নজির নেই।
মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ : গতকাল বিকেল ৩টার পর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনাকে 'অত্যন্ত দুঃখজনক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানতে এবং জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানায়, মন্ত্রণালয় শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশাপাশি ঢাকায় সৌদি মিশনকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছে। ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিবিড় যোগাযোগ হচ্ছে। এ ছাড়া রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেও সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ হচ্ছে।
'কূটনীতিক' নয় 'কর্মকর্তা' : নিহত খালাফ আল আলী সৌদি দূতাবাসের কূটনীতিক না কর্মকর্তা, তা নিয়ে শুরুতে কিছুটা ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল। সৌদি দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাঁর পদ 'দ্বিতীয় সচিব' (সেকেন্ড সেক্রেটারি) বলা হয়েছিল। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় সচিব কূটনৈতিক পদমর্যাদার পদ। তবে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, খালাফ আল আলী নামের ওই সৌদি নাগরিক ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে কনস্যুলার বিভাগে কাজ করতেন। গতকাল দুপুরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, 'খালাফ আল আলীর নাম নন-ডিপ্লোম্যাটিক স্টাফ হিসেবে আমাদের রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। আমি যতদূর শুনেছি, গুলশানের বাসায় তিনি একাই থাকতেন।' গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও খালাফ আল আলীকে সৌদি দূতাবাসের কর্মী (স্টাফ) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা নিহত হওয়া নিয়ে দ্বিতীয় দফা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহত খালাফ আল আলীকে অনেক সংবাদমাধ্যম 'কূটনীতিক' হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পদবি যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনি বা খুনিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে সংকল্পবদ্ধ।

No comments

Powered by Blogger.