পদত্যাগ করছেন আকরাম খান by উৎপল শুভ্র

গত পরশু রাতে এশিয়া কাপের দল ঘোষণার পরই বলে দিয়েছিলেন, ‘এটা আমাদের দল নয়। আমরা যে দল নির্বাচন করেছিলাম, সেটি বদলে দেওয়া হয়েছে।’ কথাটা যে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ থেকে নয়, দীর্ঘদিনের বিরক্তি থেকেই বলেছিলেন, সেটি পরিষ্কার হয়ে গেল আকরাম খান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলায়।


দল নির্বাচনে ক্রমাগত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে পদত্যাগ করছেন আকরাম খান। আজ সকালেই তিনি ক্রিকেট বোর্ডের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দেবেন। আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ অধিনায়কের পারিবারিক সূত্র থেকে এই খবর পাওয়ার পর গভীর রাতে আকরাম খানও এটি নিশ্চিত করেছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। কালই (আজ) পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দেব।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নির্বাচনে বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। নির্বাচকেরাও কখনো কখনো ঘনিষ্ঠ মহলে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে এশিয়া কাপের দল নিয়ে বিতর্ক ব্যাপারটিকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। নির্বাচকেরা তামিম ইকবালসহ ১৫ জনের দল নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু সেটি বোর্ড সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের অনুমোদন পায়নি। তামিমকে বাদ দিয়ে ১৪ জনের দল ঘোষণা করা হয়েছে। তামিমকে রাখা হয়েছে স্ট্যান্ডবাইয়ের তালিকায়।
সংবাদমাধ্যমে আকরাম খানের ক্ষোভ প্রকাশের সংবাদ পাওয়ার পর বোর্ড থেকে তাঁকে বলা হয়, বুধবার অর্থাৎ আজ বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরুর দিন তামিম ইকবালের ফিটনেস টেস্ট নেওয়া হবে। সেটিতে উতরে গেলে তামিম দলে আসবেন। অথচ তামিমের ফিটনেস নিয়ে নিঃসংশয় হয়েই তাঁকে দলে নিয়েছিলেন নির্বাচকেরা। আকরাম খান গত পরশুই জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ দলের ফিজিও বিভব সিং ও বিসিবির চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরী তামিমকে ‘পুরোপুরি ফিট’ বলে রায় দেওয়ার পরই তাঁকে নির্বাচনের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বোর্ড সভাপতি সরাসরি দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেন, এই অভিযোগ অনেক পুরোনো। মুস্তফা কামাল এটিকে ‘অভিযোগ’ বলেও মনে করেন না। তিনি এই প্রতিবেদককেও একবার গর্বভরে বলেছেন, ‘হস্তক্ষেপ বললে হস্তক্ষেপ। তবে আমি দল নির্বাচনে অবশ্যই আমার মতামত দেব।’
সর্বশেষ বিতর্কের ব্যাপারে মুস্তফা কামালের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বোর্ড সভাপতি বর্তমানে ইংল্যান্ডে আছেন। কাল রাতে বেশ কবার ফোন করেও তাঁর রোমিং মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এশিয়া কাপের জন্য নির্বাচকদের নির্বাচিত দলে পরিবর্তন এবং আকরাম খানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া কাল দিনভর ক্রিকেটমহলে আলোচনার বিষয় হয়ে ছিল। আকরাম প্রতিবাদ করেছেন বলে সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সর্বশেষ নির্বাচক কমিটির প্রধান রফিকুল আলমও বলেছেন, ‘আকরাম সাহসের কাজ করেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
ফারুকের মতো রফিকুলও মনে করেন, নির্বাচকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়াটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অশনিসংকেত। রফিকুল যৌক্তিক প্রশ্নটাও করেছেন, ‘এই কমিটির তিন নির্বাচকই সাবেক অধিনায়ক। তিনজনকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তি বলা যায়। এঁদের ওপরও যদি বোর্ড আস্থা রাখতে না পারে, তা হলে কাদের ওপর রাখবে?’
এশিয়া কাপের দল নিয়ে সর্বশেষ বিতর্কের পর তিন নির্বাচক কাল বিকেলে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছিলেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচক কমিটির বাকি দুই সদস্য মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশার বোর্ড সভাপতি দেশে ফেরার পর ‘ভবিষ্যতে দল নির্বাচনে আর হস্তক্ষেপ করা হবে না’ প্রতিশ্রুতি আদায় সাপেক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তবে আকরাম খান তাতে রাজি হননি। ঘনিষ্ঠজনদের কাছে বলেছেন, ক্রিকেটার হিসেবে দেশের মানুষের কাছে তিনি যে সম্মান পান, প্রধান নির্বাচক হিসেবে আপস করে তা হারাতে চান না।

No comments

Powered by Blogger.