ইতিহাসবিকৃতির অভিযোগ-৩০ শিক্ষককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসবিকৃতির অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষককে ১২ মার্চ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। ইতিহাসবিকৃতির অভিযোগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করতেও বলা হয়েছে।


গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ হয়। এ বিষয়ে ১২ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
১২ মার্চ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট বইয়ের পাঁচ লেখককে আসতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া আগের নির্দেশনা অনুসারে ওই দিন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এরশাদুল বারীর হাজির হওয়ার কথা।
রিট-সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি প্রোগ্রামের পৌরনীতি ও সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র বইয়ে ইতিহাসবিকৃতির অভিযোগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল জারি করেন। এ-সংক্রান্ত শুনানিতে ১ মার্চ আদালত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আর আই এম আমিনুর রশিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যসহ পাঁচ রচয়িতাকে ৫ মার্চ আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ধার্য তারিখে সহ-উপাচার্য হারুন-অর-রশিদসহ ওই পাঁচ রচয়িতা হাজির হন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আর আই এম আমিনুর রশিদ দেশে না থাকায় তিনি হাজির হননি। গতকাল তাঁদের ছয়জনের সবাই আদালতে হাজির হন।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী বেলাল হোসেন শুনানি করেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান। এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ও সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বক্তব্য দেন।
পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তের ভিত্তিতে কয়েকজন শিক্ষকের নাম এসেছে। আদালত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস হোসেন, অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, হাসানুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক আনছারুজ্জামানসহ ১৭-১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে মৌখিক আদেশ দিয়েছেন। ১২ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টায় দ্বন্দ্ব উসকে দেওয়া, প্রতারণা, জালিয়াতি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা, ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে দণ্ডবিধির ১২০(বি), ১৫৩(এ), ৪৬৫, ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭১, ৪৭৪, ৪০৫(এ), ৫৪১, ৪০৬, ৪২০ ধারায় মামলা করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ৩০ জন শিক্ষককে ১২ মার্চ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
শুনানিতে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে উপাচার্যের দায়দায়িত্ব বেশি।
আর আই এম আমিনুর রশিদ বলেন, ‘২০০৯ সালে ঘটনা জানার পর সব ডিনকে বলেছি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। এ ছাড়া একই বছরের ১৯ নভেম্বর বইগুলো প্রত্যাহার করেছি। তদন্তের পরে একটি অভিযোগপত্র তৈরি করেছি। এর মধ্যে অনেকের নাম উঠে এসেছে।’
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি প্রোগ্রামের পৌরনীতি ও সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র বইয়ে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়েছে। এ কারণে রিট আবেদনটি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.