সবার জীবন আনন্দময় হোক-পবিত্র ঈদুল ফিতর

বছর ঘুরে আবার এল পবিত্র ঈদুল ফিতর। সারা দেশে এই আনন্দময় উর‌্যাসব উদ্যাপনের প্রস্তুতি চলছে। মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে এই উর‌্যাসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী মানুষ রাজধানী ঢাকা থেকে ইতিমধ্যে বাড়ি গেছেন এবং এখনো অনেক মানুষ বাড়ির পথে রয়েছেন।


ঈদের এই আনন্দ আমরাও ভাগ করে নিতে চাই আমাদের প্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্টসহ সব শুভানুধ্যায়ীর সঙ্গে। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
এই আনন্দ-উর‌্যাসবের আয়োজন আমাদের কর্মকোলাহলমুখর জীবনেরই উদ্যাপন। এই উর‌্যাসব জীবনকে নতুন করে রাঙানোর উর‌্যাসব। সব সংকীর্ণতা ও ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার উর‌্যাসব। পরস্পরের সর‌্যা প্রতিবেশী হয়ে ওঠার এক মহান উপলক্ষ ঈদ। ঈদের আগমনী সুরেও বেজে চলেছে মানুষে মানুষে মিলনের এই আকুতি। তাই মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের প্রতিবেশীদের নিয়ে তাদের সবচেয়ে বড় উর‌্যাসবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
ঈদ উর‌্যাসবকে কেন্দ্র করে কর্মজীবী মানুষের বাড়ি ফেরায় প্রতিবছর বেশ ভোগান্তির সৃষ্টি হয় যানবাহনের অপ্রতুলতার কারণে। এবার সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা খারাপ থাকায় এবং সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনাগুলো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় সড়কপথের চেয়ে রেলপথে মানুষের আগ্রহ বেশি লক্ষ করা গেছে। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও বাড়তি বগি সংযোজন করার পরও অনেক মানুষকে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকেনি, খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দামই বেশি। দেশে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক উত্তেজনা নেই; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বছরের অন্যান্য সময়ের মতোই রয়েছে, বিশেষ কোনো অবনতি ঘটেনি। সাধারণত ঈদের আগে চুরি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়, এবার তেমনটি এখনো লক্ষ করা যায়নি। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ইত্যাদিসহ সড়কে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মানুষে মানুষে মিলনের উর‌্যাসব যখন আসে, তখন আমাদের এটাও ভাবতে হয় যে, আমাদের দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে বৈষম্য প্রকটতর হচ্ছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে বিপুলসংখ্যক মানুষ, আর খুবই স্বল্পসংখ্যক মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্ত। খাবার, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকির‌্যাসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বিপুলসংখ্যক মানুষের এই দেশে যখন ঈদের মতো আনন্দোর‌্যাসব আসে, তখন ঈদের আনন্দ সর্বজনীন হওয়ার পথে বড় বাধা থেকে যায়। ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে যে মিলন ও শুভবোধের চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনযাপনে। ঈদ নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, জীবনকে নবায়ন করার আহ্বান।
ঈদে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে আকুল হয়, শহরবাসী গ্রামে ফেরায় রোমাঞ্চ পায়, একাকী মানুষ বন্ধুমহলের সঙ্গে মেলার জন্য ব্যাকুল হয়। অনেক ভোগান্তি শেষে নিজ প্রাঙ্গণে প্রিয়জনের আলিঙ্গনের সুখ উপভোগ করে। দেশের মানুষ তখন ‘দেশের’ মানুষের সঙ্গে মিলিত হয়। এই সুযোগ থেকে কেউই যাতে বঞ্চিত না হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.