টিকিট পাওয়া যায় না, তবু লোকসান ৫৫০ কোটি টাকা

ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে প্রতিদিন তিনজোড়া ট্রেন চলাচল করে। আন্তনগর এই রুটে ট্রেনের যাত্রার কমপক্ষে তিনদিন আগে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু শুরুর ঘণ্টা কয়েক পরই আর কাউন্টারে সাধারণ আসনেরটিকিটপাওয়াযায়না।কালোবাজারসহ যত পথে টিকিট সংগ্রহ করা সম্ভব, যাত্রীরা তা-ই করেন এবং ট্রেনে ভ্রমণ করেন।


কিন্তু যাত্রীর এত চাপ থাকার পরও রেলের লোকসান দিন দিন বাড়ছে। রেলের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে লোকসান গুনতে হয়েছে ৫৬১ কোটি টাকা। ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নয় বছরে রেলের লোকসান প্রায় তিন হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
নতুন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দায়িত্ব নিয়েই লোকসানের কালো বিড়াল খুঁজে বের করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে রেলওয়ে সূত্র বলছে, ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা এবং প্রকল্পসহ সব ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে না পারলে প্রতীকী সেই কালো বিড়াল কালো দাগ হয়ে রেলময় বহাল থাকবে। আর লোকসান না কমলে যাত্রীসেবারও কোনো উন্নতির সুযোগ নেই।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই লোকসানের অজুহাতে দাতাদের পরামর্শে রেলের শাখা লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতে ট্রেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে অনেকগুলো; কিন্তু লোকসান আর কমে না।
১৯৯৭ থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত রেলওয়ের ৬৫টি মেইল ও লোকাল ট্রেন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১০টি আন্তনগর ট্রেনের খাবার পরিবেশন বেসরকারিভাবে করা হচ্ছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।
লোকসান বাড়ছে: রেলওয়ে প্রতিবছর একটি তথ্য বই প্রকাশ করে। ওই বইয়ে ১৯৬৯-৭০ সালের এবং ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তথ্য দেওয়া আছে।
ওই তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০ সালে রেল পাঁচ কোটি দুই লাখ ৮৮ হাজার টাকা লাভ করেছিল। তখন আয় যেমন কম ছিল, ব্যয় ছিল তারও কম। ৪১ বছরের ব্যবধানে রেলের আয় বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু ব্যয় বৃদ্ধির হার আয়ের দ্বিগুণ।
১৯৭০ সালে আয় হয়েছিল প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ওই বছর ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২৫ কোটি টাকা। ২০১০ সালের হিসাবে দেখা গেছে, রেল আয় করেছে ৫৬৬ কোটি টাকা; ব্যয় করেছে প্রায় এক হাজার ১২৭ কোটি টাকা।
১৯৭০ সালে রেলওয়ের লোকবল ছিল ৫৫ হাজার ৮২৫। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৫৭২। এ সময়ের মধ্যে একমাত্র জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যয়ের খাতায় যোগ হয়েছে।
যাত্রী ও মালামাল পরিবহন: সড়কের দুরবস্থা, দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী যাতায়াত হিসেবে রেলে আবারও যাত্রী বাড়তে শুরু করেছে।
রেলওয়ের মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ট্রেনে যাত্রী পরিবহন হয়েছে প্রায় দুই কোটি ১৪ লাখ। গত অর্থবছরে প্রথম চার মাসে যাত্রী পরিবহন করে দুই কোটি ৪৯ হাজার, অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম চার মাস সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী বেড়েছে।
২০০৯-১০ অর্থবছরেও এর আগের বছরের তুলনায় ছয় লাখ বেশি যাত্রী পরিবহন করে রেল। ২০০১ সাল থেকে হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিবছরই কিছু কিছু যাত্রী বেড়েছে।
অবশ্য রেলে মালামাল পরিবহন দিন দিন কমছে। ২০০১-০২ অর্থবছরে রেলওয়ের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন হয় ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মালামাল পরিবহন হয় ২৭ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। নয় বছরের ব্যবধানে মালামাল পরিবহন কমেছে প্রায় সাড়ে নয় লাখ মেট্রিক টন।

No comments

Powered by Blogger.