খরচে স্বচ্ছতা আর পরিচালনায় গণতানি্ত্রকতা রাখতে হবে-এনজিও অর্থায়ন ও ব্যবহার

বাংলাদেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সেবা খাতে বিদেশি অনুদাননির্ভর বেসরকারি সংস্থাগুলো এনজিও নামেই সমধিক পরিচিত। এসব এনজিওর কয়েকটি আবার রাষ্ট্রবহিভর্ূত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৃহত্তর। কেবল আকারে ও সংখ্যাতেই নয়, অর্থের চলাচলের দিক থেকেও এনজিও কার্যক্রম খুবই গুরুত্ববহ।


সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চেৌধুরী বলেছেন, গত ১০ বছরে এনজিওর অনুকূলে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের টাকার সদ্ব্যবহার হলো কি না, অর্থ খরচ স্বচ্ছভাবে হলো কি না, সেই প্রশ্নটা তাই স্বাভাবিক।
অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশের সামাজিক সেবা খাতের বিকাশে এবং দরিদ্র ও বঞ্চিত ব্যক্তিদের কল্যাণে এনজিও কর্মসূচির সাফল্য রয়েছে। বাংলাদেশ যে প্রতিবেশী ভারতের চেয়েও সামাজিক মানদণ্ডে এগিয়ে, তার কৃতিত্ব সরকারসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারও। পাশাপাশি বলতে হয়, এনজিও তথা সেবার উদ্দেশ্যে গঠিত বেসরকারি সংস্থামাত্রই জনসেবায় নিয়োজিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান∏প্রায় চার দশকের অভিজ্ঞতায় এ কথা বলার আর জো নেই। জনস্বার্থে কাজ করার পাশাপাশি এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক অসাধু উদ্দেশ্যেও ব্যবহূত হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে, বিদেশি অনুদান এনে তা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে লাগানো, এমনকি রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর চর্চাও আর গোপন নয়। এনজিওর স্বত্বাধিকারী হওয়া অনেকের জন্যই ক্ষমতাবান হওয়ার সঁিড়ি। অন্যদিকে দেশে অসংখ্য এনজিও রয়েছে, যাদের নিবন্ধন নেই। সম্প্রতি প্রথম আলোর এক সংবাদ থেকে জানা গেছে, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট আড়াই হাজার এনজিওর মধ্যে এক হাজার ৩০৯টিই অবৈধভাবে চলছে। এগুলো হয় কখনো নিবন্ধিতই হয়নি, অথবা তাদের নিবন্ধনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও নবায়ন করা হয়নি।
এসব কারণেই বেসরকারি সংস্থা তথা এনজিও প্রতিষ্ঠা-পরিচালনাসহ এদের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর দায়িত্বশীল কতর্ৃপক্ষের নজর থাকা দরকার। অর্থ খরচে স্বচ্ছতার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্মে গণতানি্ত্রকতা ও নিয়মনিষ্ঠা দরকার। বিশেষ করে, বিদেশি অর্থসাহায্যের ব্যবহার আইনানুগভাবে ও ঘোষিত উদ্দেশ্যে হচ্ছে কি না, দুর্নীতি হচ্ছে কি না, সর্বোপরি দেশবিরোধী কাজে এই অর্থ ব্যবহূত হচ্ছে কি না, তা তদারকের প্রয়োজন। তবে নিয়মবদ্ধ বা নিবন্ধিত করার নামে এ ক্ষেত্রে যেন সরকারি খবরদারি না চলে, সেটাও দেখা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.