বোয়ালিয়া খাল ভরাট করে আবাসন প্রকল্প!-বসুন্ধরার প্রতিবাদ ও প্রথম আলোর বক্তব্য

গত ৮ জানুয়ারি প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘বোয়ালিয়া খাল ভরাট করে আবাসন প্রকল্প!’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের প্রায় দুই মাস পর ৫ মার্চ বসুন্ধরা গ্রুপের প্যাডে উপদেষ্টা (তথ্য ও গণমাধ্যম) মোহাম্মদ আবু তৈয়ব স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবাদপত্র প্রথম আলো কার্যালয়ে পাঠানো হয়।


নিচে প্রতিবাদপত্রটি হুবহু দেওয়া হলো। সঙ্গে প্রথম আলোর বক্তব্যও যুক্ত করা হলো।
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিবাদ
প্রথম আলো পত্রিকার ৮ জানুয়ারি ২০১২ তারিখের সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বোয়ালিয়া খাল ভরাট করে আবাসন প্রকল্প’ প্রতিবেদনটির প্রতি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার কথিত ডুমনি মৌজায় বোয়ালিয়া খাল ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার নামে খুব কৌশলে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডকে জড়িয়ে যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসত্য, মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং বিশেষ কোনো হীন স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াসে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
প্রথম আলোর এই হীন উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ‘৮ কিলোমিটার বোয়ালিয়া খালের ৩ কিলোমিটারেরও বেশি ভরাট হয়ে গেছে’। প্রথম আলো পরিবেশিত এই কথিত তথ্য খোদ সরকারি তদন্তেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তেজগাঁও সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত ডুমনি এবং বরুয়া মৌজায় সরকারের ভূমিসংক্রান্ত নথিপত্র এবং নকশায় বোয়ালিয়া খালের অবস্থান ও অবস্থা যেভাবে দেখানো আছে, বর্তমানে বাস্তব অবস্থায়ও বোয়ালিয়া খাল ঠিক তেমনি অবস্থানেই রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের খাল ভরাট নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজউক ও গণপূর্ত বিভাগসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি যে তালিকা তৈরি করেছে, সেই তালিকাতেও বোয়ালিয়া খাল দখল বা ভরাট হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ বা তথ্য পরিবেশিত হয়নি। এমনকি সিএস ও এসএ রেকর্ডে বোয়ালিয়া খালের দক্ষিণে বোয়ালিয়া খালের সাথে সংযোগ রেখে কমবেশি প্রায় ১৮০০ ফুট লম্বা যে হালটটি ছিল, তা পরবর্তীতে আরএস রেকর্ডে খাল হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা এখনো পূর্বের ন্যায় বহাল রয়েছে। এমনকি আমাদের জানামতে, সম্প্রতি বোয়ালিয়া খাল নিয়ে সরকারি প্রতিবেদনে বরুয়া মৌজায় অবস্থিত বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের ভেতরের সিএস ও এসএস-এর হালটটি আরএস ও সিটি জরিপের ম্যাপ অনুযায়ী খালের এই অংশ মাটি বা বালু দিয়ে ভরাট করা হয়নি মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বোয়ালিয়া খাল ভরাট করে আবাসন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডকে জড়িয়ে যে কথামালার অবতারণা করা হয়েছে, তা নিছক কল্পকাহিনী ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত—যার সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। আমরা এ ধরনের অসত্য, ভিত্তিহীন ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের তথ্য সন্ত্রাসমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রথম আলোর বক্তব্য
এলাকা ঘুরে এবং রাজউকের চেয়ারম্যান বোয়ালিয়া খাল পরিদর্শন করে যে বক্তব্য ও তথ্য দিয়েছেন, তার ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১০ জানুয়ারি, ২০১২ রাজউক ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ আকবর সোবহানের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় মামলাও (নম্বর ৫) করে। রাজউকের সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ (স্থাপত্য) মো. মঞ্জুরুল এলাহী ভূঁইয়ার করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, জলাধার সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কোনো খাল, লেক বা জলাশয় ভরাট করা যায় না। কিন্তু তা লঙ্ঘন করে বোয়ালিয়া খাল ভরাট করা হয়েছে। এ ছাড়া খাল ভরাটের বিষয়টি রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) পরিপন্থী। ড্যাপে খিলক্ষেত থানার ডুমনি এলাকার খালটিকে অক্ষত রাখা এবং আশপাশের এলাকা পানি ধারণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা আছে।
প্রথম আলো প্রতিবেদনটি ছেপেছে ৮ জানুয়ারি। পরদিন ৯ জানুয়ারি ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে প্রথম আলো কার্যালয়ে একটি বক্তব্য পাঠানো হয়। ওয়াসার বক্তব্যটি এখানে হুবহু দেওয়া হলো।
গত ৮ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় ‘বোয়ালিয়া খাল ভরাট করে আবাসন প্রকল্প’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি ঢাকা ওয়াসার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার বক্তব্য নিম্নরূপ:
ঢাকা ওয়াসার বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কাজী ওয়াছিউদ্দিন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে খালটি সরেজমিন পরিদর্শনে যান এবং গতকাল ৮ জানুয়ারি খাল ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেখানে সিএস দাগে প্রায় ৪০ ফুট প্রশস্ত একটি খাল রয়েছে। তবে রাজউক কর্তৃক প্রণীত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এখানে ১৫০ ফুট প্রশস্ত একটি খালের প্রস্তাব করেছে। যদিও পরিদর্শনে দেখা যায়, আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তাবিত খালের জায়গাটি ভরাট করে ফেলেছে। এ ব্যাপারে রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঢাকা ওয়াসা যৌথভাবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে কাজ করছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী প্রকল্প এলাকা এবং খাল ও জলাশয় ভরাট কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরে তিনি বসুন্ধরার চেয়ারম্যান বরাবর খাল ভরাটকাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.