র ঙ বে র ঙ-বিস্ময়কর গুহাশিল্প

প্রাচীন গুহার হস্তচিত্রশিল্পের জন্ম কবে? দুনিয়ার শিল্প গবেষকরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সবসময়। এরই ধারাবাহিকতায় নানা দেশে বিভিন্ন সময় আবিষ্কৃত হয়েছে হাজার হাজার বছরের পুরনো অসংখ্য চিত্রশিল্প, খোদাই শিল্প, পোড়ামাটির শিল্প ইত্যাদি। এসব শিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুহাচিত্র।মানুষ যখন পাহাড়ের গুহায় বাস করত, চিত্রগুলো তখনকার। গুহার দেয়ালে পাথরের গায়ে আঁচড় কেটে কিংবা প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করে তারা


চিত্রগুলো এঁকেছিল। আবিষ্কৃত হওয়া তেমন এক গুহার নাম 'কেভ অব দ্য হ্যান্ডস' বা হস্তচিত্রের গুহা। গুহাটির অবস্থান আর্জেন্টিনার সান্তা ক্রুজ প্রদেশে। পেরিতো মোরনো শহরের নিকটবর্তী এক গুহা এলাকায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন। এলাকাটির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পিন্টুরাস নদী। গুহাটি বিখ্যাত হয়ে আছে তার চিত্রের জন্য। ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৯ হাজার বছর আগে গুহাটিতে বাস করত কিছু শিল্পমনা লোক। চিত্রগুলো তাদের হাতেই তৈরি। হাতের ছাপওয়ালা সেসব চিত্র এবং সঙ্গে অন্য চিত্রগুলো হাজার হাজার বছর ধরে অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে আজও। অদ্ভুুত আর সুন্দর কম্পোজিশনে এ চিত্র তৈরি করা হয়েছে এক অভিনব পদ্ধতিতে। বিভিন্ন কৌণিক দূরত্বে দেয়ালে হাত রেখে তার ওপর ব্যবহার করা হয়েছে রঙ। গবেষকদের ধারণা, রঙ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে শিকার করা পশুর হাড় দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের পাইপ। গুহাটির কাছাকাছি পাওয়া গেছে একই রকম হাতের ছাপ দিয়ে তৈরি সুন্দর কম্পোজিশনের আরেকটি গুহা। দুটির কম্পোজিশন একই রকম এবং হাতের ছাপের সংখ্যাও এক! অবশ্য গুহাচিত্রটির প্রত্যেকটিতে হাতের ছাপে আছে রঙের ভিন্নতা। কোনো ছাপে রঙ লাল থেকে সাদা আবার কোনো ছাপে কালো থেকে হলুদ। চিত্রের বেশিরভাগ ছাপই বাম হাতের। হাতের আকার-আয়তন নিয়েও গবেষণা হয়েছে। গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, ছাপগুলো ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সী বালকের অথবা এর চেয়ে দু-এক বছরের ছোট-বড় হতে পারে।
মূল গুহাটি ২৪ মিটার গভীর। এতে ঢোকার মুখের প্রশস্ততা ১৫ মিটার এবং উচ্চতা ১০ মিটার। গুহার ভেতরটা বিচিত্র। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ২ মিটারের বেশি নয়। গুহাটিতে হাতের ছাপচিত্র ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রাণী, সূর্য এবং পশু শিকারের দৃশ্য। গবেষকদের ধারণা, গুহাটিতে একই বংশের উত্তরসূরিরা বাস করত। তাদের রক্তে ছিল শিল্পের গন্ধ। ফলে প্রজন্মের মধ্যে কেউ না কেউ শিল্পী হয়ে উঠেছিল।
তবে চিত্রগুলো যেভাবেই আঁকা হোক, যারাই আঁকুক, যে উদ্দেশ্যেই আঁকুক না কেন, চিত্রগুলোর কম্পোজিশন আর রঙের বাহার দেখে চমৎকৃত হতে হয়। মোট কথা, তাদের শিল্পবোধ ছিল অসাধারণ। প্রাচীন এই গুহাটি ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব ঐতিহ্যের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
ঋতা আলম

No comments

Powered by Blogger.