ক্রিকেটার যখন রিকশাচালক by রুবেল খান,

ওয়ারি নিয়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে যার সারাটা দিন ফুরিয়ে যায়, রিকশাওয়ালা সেই মোহাম্মদ মনির কি ভেবেছিলেন, কখনও নিজেই সওয়ার হবেন সাকিব আল হাসানের? স্বপ্নেও যা কাছে আসেনি, সেটিই গতকাল দুপুরে বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল চট্টগ্রামের চার রিকশাওয়ালার কাছে। 'জীবনেও ভাবিনি, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা আমার রিকশায় উঠবেন। তার মধ্যে তারা শুধু আমার রিকশায় উঠলেনই না, আমাকে রিকশায় বসিয়ে তারা চালিয়েও নিলেন।
এটা আমার জন্য বড় ভাগ্যের ব্যাপার। এমন ভাগ্য ক'জনের হয়! এ দিনটি আমি সারাজীবন মনে রাখব। এটি আমার কাছে খুবই আনন্দের একটি দিন।' মুশফিক-সাকিবদের সানি্নধ্যে আসতে পেরে চোখে-মুখে আনন্দের অভিব্যক্তি ছড়িয়ে এভাবেই নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন রিকশাচালক মোঃ রুবেল। শুধু রুবেলই নন, একই কারণে আরও তিন রিকশাচালকও নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন। তারা হলেন_ আবদুল লতিফ, মোঃ মনির ও সোহেল। মূলত গতকাল চট্টগ্রাম জহুর আহমদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের ফিটনেস প্র্যাকটিসে রিকশা রেসিংয়ের আয়োজন
করা হয়। সেখানেই ওই চার রিকশাচালকের রিকশাগুলো ভাড়া করে আনা হয়। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে রিকশায় যাত্রীর আসনে চালকদের বসিয়ে রিকশা রেসিংয়ে অংশ নেন।
ফিটনেসের জন্য এ রিকশা রেসিংয়ের আয়োজন করা হলেও তাতে জমে উঠেছিল বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্র্যাকটিস ক্যাম্পের জন্য ডাক পাওয়া ১৫ ক্রিকেটার ও তাদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করতে আসা মাশরাফি মিলে চারটি রিকশা রেসিং দল গঠন করেন। এ চার দলের নেতৃত্বে ছিলেন যথাক্রমে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি এবং সাকিব আল হাসান। পুরো মাঠে চারবার দ্রুত ঘুরে এসে এ রিকশা রেসে চ্যাম্পিয়ন হয় সাকিবের দল। রানার্সআপ হয় মুশফিকুর রহিমের দল। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা রিকশা চালাতেও বেশ পারদর্শী_ তা এ রেসে দলের সদস্যরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। রিকশা রেসে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। নিজ দলের সদস্য শাহরিয়ার নাফীস ও ইমরুল কায়েসকে নিয়ে ফটো সাংবাদিকদের দিকে এগিয়ে এসে হাত ওপরে তুলে বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে মজা করে সাকিব বলেন, 'আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমাদের ছবি তুলুন। পত্রিকায় না ছাপালেও ছবিটা তুলুন।' ঢাকায় এর আগেও প্র্যাকটিসের সময় রিকশা রেসিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে চট্টগ্রামে এবারই প্রথম রিকশা রেসিং করানো হলো। আর এতেই ভাগ্য খুলে যায় ওই চার রিকশাচালকের। তাদের সকাল ৯টায় রিকশা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করানো হয়। দু'ঘণ্টার জন্য তাদের প্রতিটি রিকশার ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২০০ টাকা। যদিও রিকশা রেসিং হয় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। অবশ্য এর আগে বিক্ষিপ্তভাবে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা রিকশা চালানোর প্র্যাকটিস করেন। চুক্তি অনুযায়ী রিকশা ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা করে দেওয়ার পর বাংলাদেশ দলের ট্রেইনার খুশি হয়ে ওই চার রিকশাচালককে আরও ১০০ টাকা করে বখশিশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.