কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন-সবার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটুক

সীমানাবিষয়ক বিপত্তি কাটিয়ে অবশেষে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে আইনানুগভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটিই হবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত শেষ নির্বাচন। আর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এটি হবে প্রথম নির্বাচন। আবার তাদের আমলে নেওয়া নতুন উদ্যোগ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনেরও (ইভিএম) হবে শতভাগ প্রয়োগ।


এর আগে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে আংশিক ব্যবহার হওয়ার পর ইভিএমের সাফল্য সম্পর্কে তাদের আস্থা এবং জনগণের সাড়াও পাওয়া গেছে। এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল। তাদের এই আপত্তির কথা তারা নির্বাচন তফসিল ঘোষণার এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। আবার সেনাবাহিনী নিয়োগের ব্যাপারেও নির্বাচন কমিশন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নিজ নিজ পূর্ব অবস্থানেই রয়ে গেছে। বিএনপির দাবি, সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হোক। নির্বাচন কমিশন বলছে, সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের উদাহরণ সংগত কারণেই আনা যায়। সেখানে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী ছাড়া র‌্যাব ও পুলিশের মাধ্যমেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। কুমিল্লার ভোটাররাও নিশ্চয়ই তাঁদের সুনাম প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হবেন। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারে কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তির পেছনে প্রধান কারণ হতে পারে এর ব্যবহার-পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণের অজ্ঞতার বিষয়টি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে ব্যবহার করার পর সাধারণ মানুষের যে সাড়া পাওয়া গেছে, তাকে আমলে আনা যায়। কারণ ব্যবহারের আগে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে সন্দেহ ছিল, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তা কেটে যায়। ভোটারদের প্রায় সবাই ইভিএম ব্যবহার করতে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন বলে প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশেও ইভিএম ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকারসমূহের নির্বাচনগুলোতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসুবিধা না থাকারই কথা। পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করে যদি সাফল্য আসে, তাহলে জাতীয় নির্বাচনেও এর প্রয়োগ হতে পারে। নির্বাচন কমিশন এমন চিন্তা করে থাকে।
এই নির্বাচন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জন্য প্রথম হওয়ার কারণে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আবার নির্দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ার পরও রাজনৈতিক দলগুলো ঠিকই তাদের সমর্থন প্রকাশের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করেছে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন দানের যে আইনি প্রতিবন্ধকতা আছে, তা তুলে নেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করা উচিত বলে অনেকে মনে করেন।
কুমিল্লার ভোটাররা সুষ্ঠু নির্বাচনের আরেকটি উদাহরণ তৈরি করুন, এই
প্রত্যাশা সবার।

No comments

Powered by Blogger.